ডায়াল এম ফর মার্ডার !

আলফ্রেড হিচকক ‘মাস্টার অফ সাসপেন্স’ বা ‘রহস্যের যাদুকর’ নামে পরিচিত। হিচককের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে তিনি দর্শকের মন নিয়ে ইচ্ছেমত খেলতে পারতেন। দর্শক কি চায়, দর্শকরা কি দেখতে পছন্দ করে হিচকক সেটা খুব ভালোভাবেই বুঝতেন। এবং ঠিক সেভাবেই তিনি তার সিনেমার চিত্রনাট্য সাজাতেন। হিচকক সবসময় একটা জিনিস মেনে চলতেন। আর সেটা হচ্ছে একটি ভালো সিনেমার প্রধান উপকরণ হচ্ছে এর চিত্রনাট্য। কখনো হিচকক তার চিত্রনাট্য দিয়ে দর্শক এর মনে ভয় ছড়াতেন আবার কখনো ছড়াতেন সাসপেন্স। এই ভয় আর সাসপেন্স ছড়ানোর কারনে সারা বিশ্বে তিনি দর্শকদের মনে ‘মাস্টার অফ সাসপেন্স’ হিসেবে জায়গা করে আছেন।

ডায়াল এম ফর মার্ডার

১৯৫৪ সালে আলফ্রেড হিচককের মুক্তি প্রাপ্ত সিনেমা ডায়াল এম ফর মার্ডার (Dial M for Murder) ইতিহাসের সেরা সাসপেন্স এবং থ্রিলার মুভির মাঝে একটি। এবার চলুন সিনেমার কাহিনী সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক।

dial m for murder

ডায়াল এম ফর মার্ডার (পোস্টার)

টনি ওয়েন্ডিস একজন অবসর প্রাপ্ত টেনিস খেলোয়ার। টনি এবং তার স্ত্রী মার্গট লন্ডনের বাসিন্দা। টেনিস ছেড়ে দেয়ার পর টনি এখন ব্যাবসায়িক কাজকর্মে বেশি সময় দেয়। যে কারনে বেশিরভাগ সময়ই সে বাইরে থাকে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার স্ত্রী মার্গট ‘মার্ক’ নামের একজন ক্রাইম-ফিকশন উপন্যাস লেখকের সাথে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়। টনির অগোচরে তাদের এই প্রেম ভালোই চলছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাদের এই প্রেমের ব্যাপারটা আর গোপন থাকে না। টনি সব কিছু জেনে ফেলে। এবং সবকিছু জানার পর টনি তার স্ত্রীকে খুন করার পরিকল্পনা করে। যাকে বলে একদম পারফেক্ট মার্ডার প্ল্যান ! কোনো ক্লু থাকবেনা, কোন প্রমাণ থাকবে না। একদম পিউর মাস্টার প্ল্যান ফর কিলিং হিজ ওয়াইফ।

টনি ওয়েন্ডিস

টনি ওয়েন্ডিস

পরিকল্পনা অনুসারে খুনটি সম্পন্ন করার জন্য টনি তার পুরনো এক সহপাঠী অ্যালেক্সজ্যান্ডার সোয়ান কে ব্ল্যাকমেল করে। কারণ পরিকল্পনা অনুযায়ী টনি নিজ হাতে মার্গটকে খুন করবে না। সোয়ানকে দিয়ে সে খুনের কাজটি সম্পন্ন করবে। সোয়ান একজন ছোটখাট অপরাধী। বিভিন্ন মানুষকে ধোঁকা দিয়ে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে। এবং বর্তমানে কিছু মানুষকে ধোঁকা দেয়ার প্ল্যানও করেছে। টনি তার ব্যাপারে সবকিছুই জানত। তাই কোন উপায় না দেখে সোয়ান খুনের জন্য রাজি হয়ে যায়।

মার্গট এবং মার্ক

মার্গট এবং মার্ক

খুনের সময় ঠিক করা হয় রাত ১১ টা। খুনের ঠিক আগ মুহূর্তে টনি তার স্ত্রীকে ফোন করবে। টেলিফোনের অন্য পাশ থেকে সে তার স্ত্রীর মরণ কান্না শুনবে। এটাই ছিল টনির পারফেক্ট মার্ডার প্ল্যান। কিন্তু পারফেক্ট মার্ডার প্ল্যানও যে ছোট্ট একটা ভুলের কারনে ব্যর্থ হতে পারে টনি মনে হয় সেটা ভাবেনি। যে কারণে টনির এই নির্ভুল খুনের পরিকল্পনাটিও ছোট্ট একটি ভুলের কারণে ভেস্তে যায়। স্ত্রীকে খুন করার জন্য টনির পারফেক্ট মার্ডার প্ল্যান কিভাবে ব্যর্থ হয় এবং টনির শেষ পরনতি কি হয় তা জানতে হলে আপনাকে সিনেমাটি দেখতে হবে।

১ ঘন্টা ৪৫ মিনিটের এই সিনেমাতে আপনি প্রতি পরতে পরতে পাবেন টান টান উত্তেজনা। ১ মিনিটের জন্যেও স্ক্রিন থেকে আপনি চোখ সরাতে পারবেন না। প্রত্যেকটা দৃশ্যে উত্তেজনা। আসলে এরকম অতি সাধারণ একটা প্লট থেকে এরকম দারুণ একটা সাসপেন্স সিনেমা তৈরি করা একমাত্র হিচককের দ্বারাই সম্ভব। ইটস কলড হিচকক ম্যাজিক পাওয়ার !

খুনের আগমুহূর্তে মার্গট এবং সোয়ান

খুনের আগমুহূর্তে মার্গট এবং সোয়ান

অভিনয়ের কথা বললে সবাই খুবই ভালো অভিনয় করেছে। তবে সবচেয়ে যার অভিনয়টা বেশি ইফেক্ট করেছে সে হচ্ছে রে মিলান্ড। টনি ওয়েন্ডিস এর চরিত্রটা সুনিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। পুরো সিনেমা জুরে তার অভিনয় ছিলো অতুলনীয়। ঠাণ্ডা মাথার খুনীদের যেমন ধূর্ত আর যেমন স্মার্ট হওয়া চাই পুরো সিনেমাতে ঠিক তেমনটিই ছিলেন রে মিলান্ড। কথা বলার স্টাইল থেকে শুরু করে সেন্স অফ হিউমার পর্যন্ত সবই ছিল তার প্রশংসার দাবীদার। এক কথায় বলতে গেলে পুরো সিনেমা জুরে রে মিলান্ড ছিলো ওয়ান ম্যান আর্মি।

আলফ্রেড হিচককের এই ডায়াল এম ফর মার্ডার এর আদলে পরবর্তীতে আরো অনেক সিনেমাই নির্মিত হয়েছিল। যেমন হলিউডেই ১৯৯৮ সালে এই সিনেমার রিমেক করা হয় যার নাম ছিলো ‘এ পারফেক্ট মার্ডার’। শুধু হলিউডই না বলিউডের ‘এইতবার (১৯৮৫)’ এবং তামিলের ‘ছাভি (১৯৮৫)’ এ দুটি সিনেমাও ছিলো ডায়াল এম ফর মার্ডার এর রিমেক। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এগুলোর একটাও হিচককের এই সিনেমার মত এতোটা জনপ্রিয় হয়নি। ইনফ্যাক্ট একটা সিনেমাও হিচককের ‘ডায়াল এম ফর মার্ডার’ এর আশেপাশেও নেই।

আলফ্রেড হিচকক

আলফ্রেড হিচকক

সিনেমাটি AFI : 100 Most Thrilling Movies Ever এর মাঝে ৪৮ তম অবস্থানে আছে। সিনেমাটি ১টা বাফতা সহ আরো ২টা নমিনেশন পায় এবং মোট ৩ টি এ্যাওয়ার্ড জয়লাভ করে। ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর ওয়ার্নার ব্রস কোম্পানি থ্রীডি ব্লু-রেতে সিনেমাটি রিলিজ দেয়।

Leave a Reply