ক্যাসিনো: বড়লোকের বিস্ময়কর বিরাট কারবার!

বিলাসবহুল পরিসরে বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলার আসরকে বলা হয় ‘ক্যাসিনো’। অভিজাত ক্যাসিনো গুলোর সাথে সংযুক্ত থাকে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও শপিং মলের মতো বিভিন্ন স্থাপনা। চীনের ম্যাকাও -এ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যাসিনোগুলো অবস্থিত। তবে ক্যাসিনোর জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত শহর হল আমেরিকার লাস ভেগাস।

আমাদের এই প্রতিবেদনে জানাবো বিলাসবহুল ক্যাসিনো সম্পর্কে কিছু গোপন ও বিস্ময়কর তথ্য।

ইতালিয়ান শব্দ ‘ক্যাসিনো’ অর্থ ঘর। সাধারনত সামাজিক ক্লাব ঘর বোঝাতে ক্যাসিনো শব্দটি ব্যবহার করা হয়। উনিশ শতকের দিকে ক্যাসিনো নামে এমন সব ভবন গড়ে উঠতে থাকে, যেখানে বিনোদন মূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। তখন শহরের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন এবং নাচ, গান ও জুয়া খেলা হতো ক্যাসিনোতে। আধুনিককালে ইতালির বিভিন্ন পতিতালয়কেও ক্যাসিনো বলা হয়। জার্মান এবং স্প্যানিশ ভাষায় ক্যাসিনো অর্থ অফিসার মেস। তবে বিশ্বব্যাপী ক্যাসিনো বলতে প্রধানত জুয়া খেলার ক্লাবকেই বোঝানো হয়।

১৬৩৮ সালে ইতালির ভেনিস শহরে প্রথম ক্যাসিনো প্রতিষ্ঠিত হয়।

ক্যাসিনোতে বিভিন্ন উপায়ে জুয়া খেলা হয়। তবে সকল ধরনের খেলা -কে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- টেবিল গেম, মেশিন গেম এবং টিকেট গেম।

টেবিল গেমের মধ্যে আছে ডাইস, রুলেট ও বিভিন্ন ধরনের তাস খেলা। তাসের মধ্যে জুয়ার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় কয়েকটি ধরন হলো পোকার, ব্ল্যাক জ্যাক, ব্র্যাকেট ইত্যাদি।

ইলেক্ট্রিক গেমিং মেশিনেও বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলা হয়। কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে গড়ে তোলা এই যন্ত্র গুলোকে বলা হয় ‘স্লট মেশিন’। স্লট মেশিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হলো জ্যাকপট, বিঙ্গো, ভিডিও পোকার ইত্যাদি। ক্যাসিনো গুলো সবচেয়ে বেশি টাকা আয় করে থাকে তাদের স্লট মেশিন থেকে।

টিকেট গেমের মধ্যে আছে লটারি, কেনো, হাউজি, পাকাপুস্, স্ক্র্যাচ কার্ড ইত্যাদি।

ইন্টারনেটের এই যুগে অনলাইনেও গড়ে উঠেছে বহু ক্যাসিনো নেটওয়ার্ক। ভার্চুয়াল জগতের এসব ক্যাসিনোতেও সকল ধরনের জুয়ার খেলা প্রচলিত আছে।

বিশ্বের অনেক দেশে সরকার অনুমোদিত ক্যাসিনো আছে। আমেরিকার লাস ভেগাস, মোনাকোর মন্টে কার্লো, চীনের ম্যাকাও ও পর্তুগালের ক্যাস্কেইস ক্যাসিনোর জন্য বিখ্যাত। এছাড়া ইতালি, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ড সহ বেশ ইউরোপিয়ান দেশে একাধিক বিখ্যাত ক্যাসিনো রয়েছে। চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ম্যাকাও শুধু এশিয়ার বৃহত্তমই নয়, বরং বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ক্যাসিনো নগরি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ১০ টি ক্যাসিনোর মধ্যে পাঁচটিই চীনের ম্যাকাও -এ অবস্থিত। নেদারল্যান্ডে ‘হল্যান্ড ক্যাসিনো’ নামে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে দেশজুড়ে ১৪ টি ক্যাসিনো আছে। যার সকল মুনাফা সরকারি কোষাগারে জমা হয়।

প্রথমদিকে আমেরিকায় জুয়ার আড্ডা গুলোকে বলা হতো ‘সেলুন’। আমেরিকায় সর্বপ্রথম সেলুন নির্মিত হয় শিকাগো, সান ফ্রান্সিস্কো, নিউ অর্লিন্স এবং সেন্ট লুইস শহরে। সেলুন গুলো ছিল মূলত মদপান করে আড্ডা দেওয়ার জায়গা। সেইসাথে নিয়মিত চলত জুয়ার আসর। পরবর্তীতে ১৯৩১ সালে আমেরিকার নেভাডা অঙ্গরাজ্যে জুয়াখেলাকে বৈধতা দেওয়া হয়। এরপর থেকে আমেরিকায় অসংখ্য বৈধ ক্যাসিনো নির্মিত হতে থাকে। বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ক্যাসিনো রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে প্রায় এক হাজারেরও বেশি ক্যাসিনো আছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ক্যাসিনো প্রতিষ্ঠানগুলো নেভাদা অঙ্গরাজ্যের লাস ভেগাস শহরে অবস্থিত। এমনকি চীনের ম্যাকাওয়ে অবস্থিত পৃথিবীর শীর্ষ কয়েকটি ক্যাসিনোর মালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলোও মূলত লাস ভেগাসের। জুয়া, পতিতাবৃত্তি ও অর্থপাচারের মতো বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার টাকা দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই পাপের শহর। আমেরিকার মহাভি মরুভূমিতে নিউইয়র্ক ও শিকাগোর মাফিয়ারা কিভাবে পাপের শহর লাস ভেগাস গড়ে তুলেছে তা জানতে আমাদের এই প্রতিবেদনটি পড়ুন।

পাপের শহর লাস ভেগাস !