পৃথিবীতে কোনো টাইম মেশিন নেই কেনো?

টাইম ট্রাভেল করা সম্ভব হলে পৃথিবীতে ‍এখন পর্যন্ত কোনো টাইম মেশিন নেই কেনো? বেশ বিদঘুটে একটা প্রশ্ন। এর উত্তর নিয়েই ছারপোকা ম্যাগাজিনের আজকের এই পোস্ট…

কখনো কি ভেবে অবাক হয়েছেন, তথ্য প্রযুক্তি বিকাশের এই চরম পর্যায়ে এসেও কেনো আমরা টাইম মেশিন আবিষ্কার করতে পারিনি? কোনো না কোনো বিজ্ঞানীর কি উচিৎ ছিলো না এমন একটা ফর্মূলা আবিষ্কার করা, যার মাধ্যমে আপনি অতীতে ফিরে যেতে পারতেন এবং ফেলে আসা কিছু ভুল-ভ্রান্তি শুধরে নিতে পারতেন? টাইম ট্রাভেল বা সময়ের পরিভ্রমণ কি আসলেই সম্ভব?

চলুন তো দেখি অাসলেই কি সম্ভব অতীতে ফিরে যাওয়া? প্রিয় সময়গুলো ফিরে পাওয়া? কিংবা অপ্রিয় কোনো ঘটনা পরিবর্তন করা !

প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব?

অবশ্যই, আমরা সবসময়ই টাইম ট্রাভেল করছি। মানে আপনি যখন বসে বসে এই লেখাটা পড়ছেন, তখনো কিন্তু সময়ের মধ্যে দিয়ে পরিভ্রমণ করছেন। অথবা যখন প্রিয়জনের সাথে ঝগড়া করছেন কিংবা আরামদায়ক ঘুমে যখন পরিতৃপ্ত হচ্ছেন তখনো সময়ের মধ্যে দিয়েই পরিভ্রমণ করছেন। কিন্তু হ্যা, আমি জানি আমাদের উদ্দেশ্য এভাবে সময় পরিভ্রমণ করা নয়। আমরা জানতে চাচ্ছিলাম আমরা কি প্রচলিত গতির চেয়ে দ্রুত বা ধীরে সময় পরিভ্রমণ করতে পারি কি’না কিংবা সময় পরিভ্রমণের মাধ্যমে পেছনে যেতে পারি কিনা।

এর উত্তর হচ্ছে, “হ্যাঁ” !

অবশ্যই আমরা আনুপাতিক দৃষ্টিতে সময়ের গতি কম বা বেশি নির্ধারন করতে পারি। ১৯০৫ সালে মহান বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন তার বিখ্যাত স্পেশাল রিলেটিভিটি’র সূত্রে প্রমান করেন যে, “সময় সকল ব্যক্তির জন্য একই হারে অতিক্রান্ত হয় না।”

ব্যাপারটা কিরকম? বলছি…

ধরা যাক, আপনি স্থির অবস্থানে বসে একটা গতিশীল বস্তুকে দেখছেন। তখন সেই বস্তুটির পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে চিন্তা করলে তার সময় পরিভ্রমণের হার আপনার সাপেক্ষে কম হবে।

মনে করুন উসাইন বোল্ট অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় দৌড়াচ্ছে আর আপনি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে সেটা দেখছেন। কাছাকাছি থাকার পরেও এই ক্ষেত্রে আপনার সময় পরিভ্রমণের হার বোল্ট সাহেবের সাপেক্ষে বেশি দ্রুত হবে।

ঠিক একই কারনে মহাকাশে যাওয়া ব্যক্তির বয়স, পৃথিবীতে থাকা তার জমজ ভাই-বোনের তুলনায় কম বাড়ে।
অর্থাৎ এটা শুধুমাত্র গতি’র বিষয় নয়, মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি যতো বেশি হবে, সময় ততো দ্রুত পরিভ্রমণ করবে।

এই বিষয়ে আইনস্টাইন তার জেনারেল রিলেটিভিটি’র সূত্রে আলোকপাত করেছেন। তিনি প্রমান করতে সার্থক হয়েছিলেন যে, পৃথিবীর নিকটবর্তী ঘড়ির কাঁটার তুলনায় পৃথিবীর দূরবর্তী ঘড়ির কাঁটা খানিকটা দ্রুত ঘূর্নায়মান হবে। সম্ভবত এজন্যই আমাদের মাথার তুলনায় পা অনেকটা চিকন হয় 😛

কিন্তু সময় পরিভ্রমণের মাধ্যমে অতীতে ফিরে যাওয়া কি সম্ভব?

বেশিরভাগ বিজ্ঞানীদের মতে এটা কখনো সম্ভব হবে না। বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর মতে মানবজাতি কখনোই সময় পরিভ্রমণ করে অতীতে ফিরে যেতে পারবে না। বিষয়টা প্রমান করার জন্য সে একটি পরীক্ষা করেছিলো। সে রবিবারে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিশাল পার্টির আয়োজন করে। কিন্তু তিনি সেই পার্টির খবর প্রকাশ করেন সোমবারে। তার মতে, “যদি পৃথিবীর মানুষ সময় পরিভ্রমণ করতে পারতো তাহলে কেউ একজন অন্তত তার এই পার্টির কথা জেনে ভবিষ্যৎ থেকে তার পার্টিতে যোগ দিতে অবশ্যই আসতো। যেহেতু কেউ তার পার্টিতে আসেনি, তারমানে ভবিষ্যতেও মানুষ কখনো টাইম মেশিন আবিষ্কার করতে পারবে না বা সময় পরিভ্রমণ করতে পারবে না।”

এতে নিশ্চই এটা প্রমানিত হয় না যে টাইম ট্রাভেল একেবারেই অসম্ভব। তবুও এটা অবশ্যই একটা মজাদার পরীক্ষা ছিলো!

আমার তো মনে হয় একসময় মানুষ টাইম মেশিন আবিষ্কার করবে, এবং হকিং সাহেবের পার্টিতে উপস্থিত হয়ে তাকে চমকে দিবে। তো আপনার কি ধারনা? সময় পরিভ্রমণ করা কি আদৌ সম্ভব?

Leave a Reply