হিমেশ রেশমিয়া’র সফলতার অজানা ইতিহাস

সময়টা ২০০৬, কোথেকে এক লোক উদয় হলেন। গায়ে আলখেল্লার মত লম্বা কোট, মাথায় বারান্দাওয়ালা ক্যাপ।  মুখে মলিন হাসি। আপ কা সুরুর নামে একটি অ্যালবাম বের হলো। অ্যালবামের মোড়কে এই মলিন হাসিওয়ালা লোকটির ছবি মানুষের নজর কেড়ে নিলো। না‍ঁকি সুরে গান গাওয়া এই লোকের প্রথম অ্যালবামটি এতটাই হিট হলো যে, পরের ১২ বছরেরও এখন পর্যন্ত ভারতের কোনো অ্যালবাম এই রেকর্ড ভাঙ্গতে পারেনি। সারাবিশ্ব জুড়ে মোট ৫ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে এই অ্যালবামটির !

এই মলিন মুখের সফল মানুষটি হিমেশ রেশমিয়া ! সঙ্গীত নিয়ে অনেকবছর ধরে কাজ করলেও জীবনের প্রথম অ্যালবাম দিয়েই তিনি কামিয়ে নিয়েছেন সর্বকালের সেরা ভারতীয় বেস্ট সেলার অ্যালবাম হোল্ডারের খেতাব।

হিমেশ রেশমিয়া জেনারেশনের গল্প…

যে সময়টার কথা বলছি, তখন আমরা স্কুলের ছাত্র। সময়টা এমন ছিলো যে, কেউই আমাদের বুঝত না। স্কুলে মেয়েদের যখন ছুটি হত, তখন গেটের সামনে; কিংবা সন্ধ্যায় কোচিং সেন্টারের বেঞ্চে খুঁজে পাওয়া নতুন নতুন টুকরো টুকরো ভালবাসা আমরা জমাতাম। জীবনের প্রথম ভালো লাগা, ভালোবাসার অনুভূতিগুলো আসতে শুরু করলো। হাতে মুঠোফোন ছিলো না। এমটিভির পর গান শুনার শেষ ভরসা ছিলো এফএম রেডিও, অথবা এমপিথ্রি প্লেয়ার। ঠিক ওই সময়টাতেই টিভির পর্দায় ভেসে এলো এই লোকের ছবি ! সাথে সুন্দর একটা গান, “Dil ki surrrrkh deewaron pe, naam hai tera tera” !

এই জেনারেশনের কাছে এইসব গান ভালো না লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তখনকার সময় শত অপ্রাপ্তির ম‍াঝে এই গানগুলোই আমাদের জীবনে এনে দিয়েছিলো কয়েক খন্ড সুখ ! পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় ঈদের দিন শুধু হিমেশের গানই বেজে চলেছে ধুমধামসে। সত্যি বলতে, হিমেশ তার গান এবং মিউজিক ভিডিওগুলোর মাধ্যমে আমাদের সেই ছোট ছোট ফিলিংসগুলোকে তুলে ধরতে সফল হয়েছিলেন !

… মাথায় সবসময় ক্যাপ পরে থাকাটা একসময় তার ট্রেডমার্ক হয়ে যায় !

যেভাবে পিছিয়ে পড়লেন হিমেশ

হিমেশ যে শুধু সফলই হয়েছেন, তা কিন্তু নয়। এপর্যন্ত ভারতের সবচেয়ে ট্রল ও সমালোচনার শিকার হওয়া অন্যতম ব্যক্তি হিসেবেও উপরের সারিতে রয়েছে তার নাম। সিনেমায় অভিনয় করাটাই ছিলো তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত। যখন হিমেশ দেখলেন, তার অ্যালবাম ইন্ডিয়ার সবচেয়ে বেশি বিক্রয় হওয়া অ্যালবামগুলোর তালিকায় প্রথমে চলে এসেছে, তখন তিনি তার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে একাই সবদিক থেকে উপার্জনের সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি নিজের হলেন নিজের সিনেমার নায়ক, পরিচালক, প্রডিউসার, গায়ক ও মিউজিক ডিরেক্টর ! একাই সবকিছু সম্ভব করে ফেলতে চেয়েছিলেন তিনি। আর এই ভুলটার কারণেই তাকে ‍মুখ থুবড়ে পরতে হয়েছে।

‘আপ কা সুরুর’ অ্যালবামের সফলতার কারণে একই নামে ‘আপ কা সুরুর’ সিনেমাটি সুপারহিট হলেও অভিনয় না জানা এই মানুষটি চরমভাবে ব্যর্থ হলেন তার বাকি জীবনের সবগুলো সিনেমায়। প্রতিটা ছবিই মূলত ব্যর্থ হয়েছে তার ‍বাজে অভিনয়ের কারণে। একই সাথে, সিনেমার নামগুলোও খুব একটা যু‍ঁতসই ছিলো না।

আপ কা সুরুর এর সফলতার কারণে সারা বিশ্বের কাছে তিনি যে সফলতা পেয়েছিলেন, তা একসময় হাসিঠ‍াট্টায় পরিণত হয়। মানুষের মুখে মুখে ব্যর্থ তারকা হিসেবে জায়গা করে নেয় হিমেশ রেশমিয়া’র নাম।

কিন্তু আসলে কতটা ব্যর্থ হিমেশ ?

হিমেশ রেশমিয়া কি আসলেই ব্যর্থ তারকায় পরিণত হয়েছেন? নাকি ঠিকই তিনি আড়ালে সুখের হাসি হেসে চলেছেন? এবার সে কথাই জানবো। চলুন একনজরে জেনে নেয়া যাক ‘সফল তারকা হিমেশ রেশমিয়া’ সম্পর্কে অজানা সব তথ্য…

  1. হিমেশ রেশমিয়ার আপ কা সুরুর অ্যালবামটি মুক্তি পাবার পরপরই প্রায় ৫০ মিলিয়ন কপি বিক্রয় হয়েছে। অ্যালবামটি এখনো সারা বিশ্বজুড়ে বিক্রয় হচ্ছে। এবং এই গানের পুরো প্রফিটই হিমেশ রেশমিয়া পাচ্ছেন।
  2. বলিউডে ফারহান আখতার একাই মাল্টি ট্যালেন্ডেড নন। হিমেশ রেশমিয়াও একজন মাল্টি ট্যালেন্ডেড আর্টিস্ট। তিনি একাধ‍ারে অ্যাক্টর, সিঙ্গার, লিরিসিস্ট, মিউজিক ডিরেক্টর, প্রডিউসার এবং ডিস্ট্রিবিউটর !
  3. দিপিকা পাড়ুকোন -কে নিশ্চয়ই আপনার পছন্দ? জেনে অবাক হবেন, এই দিপিকার জনপ্রিয়তার পিছনের মানুষটিই হলেন হিমেশ রেশমিয়া। তার ‘আপ কা সুরুর’ অ্যালবামের ‘নাম হ্যায় তেরা তেরা’ গানটির মডেল বালিকা ছিলেন দিপিকা পাড়ুকোন। সেখান থেকেই মূলত ভারতীয় নির্মাতাদের নজরে আসেন দিপিকা !
  4. লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে পারফর্ম করা প্রথম ভারতীয় তারকা হিমেশ রেশমিয়া।
  5. বাজে অভিনয়ের কারণে এত সমালোচনার পরেও তার আপ কা সুরুর (সিনেমা) সুপারহিট হয়। ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি বক্স অফিসে প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার কামায়। তখনকার সময় এটাই ছিলো সুপারহিট সিনেমার আর্নিং ! এমনকি ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিমেশের Damadamm! সিনেমাটিও সুপারহিট হয়।
  6. পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য্য হিসেবে পরিচিত পেট্রা -তে হিমেশ অভিনিত Kajraare সিনেমাটির শ্যুটিং করা হয়।
  7. হলিউডের জুরাসিক পার্ক আর হিমেশের এক্সপোজ সিনেমার মাঝে একটা মিল রয়েছে। এই দুই সিনেমায়ই অভিনয় করেছেন ইরফান খান ! সে হিসেবে হিমেশের আর্টিস্ট সিলেকশনের রুচিবোধ কিন্তু খুব একট‍া খারাপ নয়। হিমেশ সবসময়ই চেষ্টা করেন তার সিনেমায় কিছু চমকপ্রদ তারকাদের নিয়ে আসার !
  8. এবং সবশেষে হিমেশের সিক্স প্যাক অ্যাবস রয়েছে। যা আপনার, আমার এবং আমাদের ছারপোকা ম্যাগাজিনের কোনো লেখকেরই নেই 😛

সবদিক বিবেচনা করে একটা কথাই বলা যায়, ভারতের সর্বকালের অন্যতম একজন সফল তারকা হিমেশ রেশমিয়া ! শুরুর দিকে যেই স্মৃতিচারণ করা কথাগুলো বলেছি, শৈশবের ওই দিনগুলোকে সুন্দর করে দেয়ার জন্য হিমেশকে এমনিতেও একটা ধন্য‍বাদ দেয়া যায় !

ধন্যবাদ হিমেশ রেশমিয়া !

Leave a Reply