ইরাম শহরটির অবস্থান ছিলো বর্তমান সৌদি আরবে। আরব্য রজনীর বিখ্যাত গল্প সম্ভারে এই শহরটির নাম পাওয়া যায়। কোরআন শরীফেও এসেছে এই নগরীর নাম। এছাড়াও মিথে নানারকম বর্ণনা এসেছে এই নগরকে ঘিরে। মিথে এটিও প্রচলিত আছে মাত্র এক রাতেই শহরটি উধাও হয়ে যায়। কিন্তু অনেকের মাঝে বিতর্কের সৃষ্টি হয় এই শহরকে নিয়ে। কেউ দাবি করেন শহরটির অস্তিত্ব ছিলো আবার কেউ কেউ তা মানতে নারাজ। এই ইরাম অব দ্যা পিলারস নিয়ে অনেক গবেষণা পর্যন্ত চলে আসছে বছরের পর বছর।
এই নগরটিকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলতে থাকায় এটি নাসার নজরে পরে যায়। এবং তখন থেকেই নাসা ইরাম অব দ্যা পিলারস নিয়ে গবেষণা শুরু করে। বহু পরিশ্রমের বদৌলতে নাসার স্যার ফিন্যাস ও ভূ-তত্ত্ববিদ জুলিয়াস জারিন নব্বই দশকের শুরুতে এই শহরটি খুঁজে পেয়েছিলেন এবং সৌদি আরবের ঠিক কোথায় এর অবস্থান তা নিশ্চিত করেন। স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যাবহার করে ১৯৯২ সালে একধরনের শহরের অস্তিত্ব খুঁজে পান।
পূর্বে এই শহরে যারা বসবাস করতেন, তারা এই শহরের নিচে প্রবাহিত পানির উৎস খুঁজে বের করেন। এবং উৎসের কাছে বালু খনন করে যাওয়ার চেষ্ঠা করতে থাকেন। তারা তাদের নিরাপত্তার জন্য চারপাশে বিশাল বিশাল পিলার স্থাপন করে দেন মরুভূমির বালু ঝড় থেকে রক্ষা পাবার জন্য।
বিস্তর মরুভূমির মাঝে এমন সুঠাম উঁচু পিলারগুলোই মূলত তখন সকলের নজর কেড়ে নেবার জন্য যথেষ্ট ছিলো। তাছাড়া পিলারগুলো মজবুত হওয়ায় এগুলো নিয়ে সবসময় মানুষের মাঝে কথা হয়ে আসছে। আর এই কারণেই ইরাম নগরের সাথে পিলার শব্দটি যুক্ত হয়।
অন্যদিকে মিথে বর্ননা করা হয়, এই শহরটি আধুনিক সভ্যতায় গড়ে উঠলেও এই শহরের সমাজ ব্যাবস্থা ছিলো নিম্নমানের। কিন্তু চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে অর্থনৈতিক দিক থেকে এই শহরটি ছিলো স্বাবলম্বী। কারণ শহরটি এমন জায়গায় অবস্থান করেছে যা তখনকার যুগে বণিক-ব্যাবসায়ীদের জন্য চৌরাস্তার মতো ছিলো অর্থাৎ এটি ছিলো তাদের জন্য ক্রসপয়েন্ট। তাই এই নগর দিয়ে অনায়াসে ব্যবসায়ীরা যাতায়াত করতেন পুরো আরব অঞ্চলে। তাই আস্তে আস্তে সেখানে গড়ে উঠেছিলো হোটেল।
তাছাড়া এ শহরের অন্যতম রোমাঞ্চকর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এই শহরে ব্যাপক মাত্রার পতিতালয় ছিলো। যার দরুন এই শহরের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিলো স্বচ্ছল। অর্থাৎ এই শহরের মূল ইনকাম সোর্স ছিলো এই পতিতালয়গুলো, যা বাইরে থেকে আগতদের আকর্ষিত করতো। তাই শহরটিকে মরুভূমির আটলান্টিস বলা হতো। কারণ পুরো আরবের মানুষেরা আমোদ ফুর্তি করার জন্য এই শহরে আসতো এবং তারা এখানে প্রচুর টাকা-পয়সা উড়াতো।
মিথে শহর সম্পর্কে বর্ননায় এসেছে, এ শহরের মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধির সাথে সাথে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো সেখানকার সমাজ ও অর্থনৈতিক অবস্থা। এখন এই মরুপ্রান্তরে কোনো মানুষের যাতায়াত নেই বছরের পর বছর। শহরটি আবিষ্কারের পর থেকেই মিথে বর্ণিত শহরের অনুরুপ স্মৃতিচিহ্ন মিলতে শুরু করে।
তাছাড়া মিথ দাবী করে, মানুষের মাঝে অপরাধ প্রবণতা এতোটাই বেড়ে গিয়েছিলো পরবর্তীতে স্রষ্টার অভিশাপে ভয়ানক দুর্যোগে চিরদিনের জন্য শহরটি মাত্র এক রাতেই নিঃশেষ হয়ে যায় মরুভূমির মাঝে।