মা দূর্গার মূর্তি তৈরীতে পতিতালয়ের মাটি ব্যবহৃত হয় কেনো ?

সৌন্দর্য্য, নির্মলতা, পবিত্রতা, শুভশক্তি আর দুর্গতিনাশিনী’র প্রতিমা হচ্ছেন মা দূর্গা। অথচ তার মূর্তি তৈরীতে ব্যবহৃত হয় তথাকথিত অপবিত্র, অশুভ এবং অশুচ হিসেবে চিহ্নিত পতিতালয়ের মাটি। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী মা দূর্গার মূর্তি তৈরীতে অবশ্যই ব্যাহার করতে হবে, এমন কয়েকটি উপাদান হচ্ছে গাভীর মূত্র, গোবর, গঙ্গার পবিত্র পানি, ধানের শীষ এবং পতিতালয়ের মাটি।

ভদ্রসমাজে যাদের স্থান হয় না, অবজ্ঞা আর বঞ্চনা যাদের নিত্যসঙ্গী, দিনের আলোয় যাদের ঘৃণা আর নোংরা দৃষ্টিতে দেখা হয় তাদের বাড়ির মাটিই আবার পবিত্র মায়ের মূর্তির অপরিহার্য অংশ ! কিন্তু কেনো?

পুরুষ মানুষ যখন পতিতালয়ে গিয়ে সেখানকার কোনো মেয়ের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়, তখন সে বীর্যের সাথে নিজের জীবনে অর্জিত সমস্ত পূন্য সেখানেই বিসর্জন দিয়ে আসে। এবং পতিতার অর্জিত সমস্ত পাপ নিজের কাঁধে নিয়ে ফিরে যায়। এভাবেই হাজার হাজার পুরুষের বিসর্জিত পূন্যে পতিতালয় হয়ে উঠে পবিত্র।

আবার হিন্দু পুরাণ মতে পতিতা’র ক্ষমতা দেবতাদের চেয়েও বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঋষি বিশ্বমিত্রের ধ্যান ভঙ্গের সমস্ত চেষ্টা ব্যার্থ হওয়ার পর দেবরাজ ইন্দ্র মেনকা-কে আদেশ দিয়েছিলেন বিশ্বমিত্রের ধ্যান ভঙ্গের চেষ্টা করতে। মেনকা নিজের কৌশল আর নাচের মাধ্যমে খুব সহজেই অসাধ্য সাধন করেছিলেন। বিশ্বমিত্র ইন্দ্রলোকের চৌকাঠে পা রাখতে পারেননি শুধুমাত্র মেনকা’র প্রতারনার শিকার হয়ে। তাই বলা যেতেই পারে যে, পতিতা সর্বময়ী ক্ষমতার উৎস।

এই আচারের মাধ্যমে নারীজাতির মর্যাদা সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। নারী সবসময়ই পবিত্র, নারীর গর্ভেই জন্ম হয় পুরুষের, নারীর দুধেই শক্তি পায় সদ্যজাত শিশু। আবার নারী পতিতা হয় পুরুষের প্রয়োজনে, পুরুষরাই নিজের কামনা-বাসনা-লালসা মেটানোর উদ্দেশ্যে নারীকে পতিতা’র আসনে বসায়। তাই নারী কখনো অপবিত্র হতে পারে না।

শরৎকালে হয় মা দূর্গার অকালবোধন। এই সময়ে মহামায়াকে নয়টি রূপে পূজা করা হয়। মা দূর্গা যেহেতু নারী শক্তির পরিচায়ক, তাই পতিতাকেও এখানে নারী সমাজের একটি রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই দূর্গা মায়ের মূর্তি তৈরীতে অষ্টকন্যার ঘরের মাটি নেয়ার পর নবকন্যা হিসেবে পতিতা’র ঘরের মাটিও নেয়া হয়। এই নবকন্যা হচ্ছেন,

  1. অভিনেত্রী
  2. কাপালিক
  3. ধোপানী
  4. নাপিতিনী
  5. ব্রাহ্মণী
  6. শূদ্রাণী
  7. গোয়ালিনী
  8. মালিনী এবং
  9. পতিতা

দূর্গা পূজা’র মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে নারী জাতির প্রতি সম্মান দেখানো, কাজেই নারী’র একটি রূপ হিসেবে পতিতাকেও এখানে সম্মান দেখানো হয়।