কোরআনে উল্লেখিত নবীদের সংক্ষিপ্ত জীবনী (পর্ব ২)

কোরআন শরীফে উল্লেখিত নবীর সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত আছে। কারো নাম সরাসরি নবী বলে সম্বোধন করা হয়েছে, আবার কারো নাম নবীদের নামের সাথেই সম্বোধন করা হয়েছে। এখন যাঁদের নাম নবীদের সাথে উল্লেখিত হয়েছে, তাঁরা নবী কিনা সেটা নিয়েই দ্বিমত। চলুন জেনে নেই তা‍ঁদের সবার নাম এবং সংক্ষিপ্ত জীবনী…

নবীদের সংক্ষিপ্ত জীবনী

সুপ্রসিদ্ধ মতানুসারে কোরআন শরীফে উল্লেখিত নবীর সংখ্যা ২৫ জন। এরমধ্যে প্রথম ৫ জনকে নিয়ে আমরা পূর্বে এখানে আলোচনা করেছি। এখন পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব…

হযরত সালিহ (আঃ)

হযরত সালিহ আল্লাহ পাঠিয়েছিলেন ‘সামূদ’ জাতীকে পথপ্রদর্শনের জন্য। তৎকালীন আরব দেশে সামূদ জাতীর বেশ প্রভাব ছিলো। তারাও আ’দ জাতীর মত সুউচ্চ অট্টালিকা এবং পর্বত খোদাই করে চমৎকার কারুকার্যসম্পন্ন প্রকোষ্ঠ নির্মান করতে পারত। হযরত নূহ এর পুত্র শাম, শামের পুত্র ইরম, ইরমের পুত্র আবর এবং আবরের পুত্র সামূদ। তার নামেই এই গোত্রটার নামকরণ হয়। তারাও ছিলো অত্যাচারী, অহংকারী এবং নানারকম অশ্লীলতায় সিদ্ধহস্ত। ইতিহাসের আলোকে প্রতীয়মান হয় যে মদীনা ও সিরিয়ার মধ্যে অবস্থিত ‘ওয়াদীল কুরাত’ এ সামূদ জাতীর বসবাস ছিলো। তাদের আদি নিবাসকে বলা হয় ‘আর হিজর’, যার বর্তমান নাম ‘ময়দানে সালেহ’।

সামূদ জাতীকে হযরত সালেহ সত্যের পথ প্রদর্শন করতে থাকেন। তাদেরকে তাওহীদের শিক্ষা দেন এবং গুমরাহীর অতল গহ্বর থেকে নিষ্কৃতির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু সামূদ জাতী হযরত সালিহ’কে মেনে নেয়নি। তারা হযরত সালিহকে তার নবুয়্যতের পক্ষে প্রমাণ উপস্থিত করতে বললো।

হযরত সালিহ’কে তারা মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। কিন্তু কোনোভাবেই মারতে না পেরে জিদের বশে তার উষ্ট্রীকে (মেয়ে উট) মেরে ফেললো। হযরত সালিহ তাদেরকে তার উষ্ট্রীর ব্যপারে পূর্বেই তার জাতীকে বলেছিলেন তারা যেনো এটাকে কষ্ট না দেয়। কিন্তু তারা হযরত সালিহ এর কথা না শুনে উষ্ট্রীকে হত্যা করে। এরপরেও হযরত সালিহ তাদেরকে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে তাগিদ করেন। তারা দীর্ঘ সময় পেয়েছিলো নিজেদের শুধরানোর জন্য, কিন্তু তারা সেই সময়রর সুব্যবহার করতে পারেনি। এরপর বাধ্য হয়ে হযরত সালিহ তাদেরকে তিনদিন তিনরাতের সময় দেন এবং বলেন তারা যদি এরমধ্যে তাওবা না করে তাহলে আল্লাহর গজব তাদের প্রতি নিপতিত হবে।

হযরত সালিহ এর সকল প্রচেষ্টার পরিসমাপ্তি হলো, তিনদিন ও তিনরাতের অবসান হলো এবং চতুর্থ দিনে আসমান থেকে বিকট ধ্বংস ধ্বনি শোনা গেলো, আর সামূদ জাতী যে যেখানে ছিলো তারা প্রাণশূণ্য দেহে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। এমনভাবে তাদের ধ্বংস হলো যেনা সেখানে কোনো মানুষেরই বসবাস ছিলোনা। হযরত সালিহ তার অনুসারীদের নিয়ে আল্লাহর নির্দেশে এক নিরাপদ স্থানে অবস্থান করে তাদের ধ্বংসলীলা অবলোকন করলেন।

সামূদ জাতীর ধ্বংসের পর হযরত সালিহ ফিলিস্তিনে হিজরত করেন এবং সেখানে বসতি স্থাপন করেন। তার মৃত্যুকালীন সময় এবং তার সন্তান সন্ততি নিয়ে কোনোপ্রকার তথ্য আমার কাছে নেই।

হযরত লুত (আঃ)

হযরত লুত ছিলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর ভাই হারানের পুত্র। লুত যখন শিশু, তখন উনার বাবা মারা যান এবং হযরত ইবরাহীম লুতকে নিজের সন্তানের মত লালন পালন করেন। লুত অধিকাংশ সময়েই ইবরাহীমের সাথে থাকতেন। হযরত ইবরাহীম যখন নিজের জাতীর রোষানলে পড়ে মিসর চলে যান, তখন লুত ওনার সাথে ছিলেন। মিসর থেকে ফেরার সময় ইবরাহীম কেনানে থেকে যান এবং লুত দ্বীন প্রচারের জন্য জর্দানের পূর্ব এলাকা সুদূম ও উমূরায় গমন করেন।

বর্তমান পূর্ব জর্দান ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী মৃত সাগরের দক্ষিণ এলাকাতে যে সবুজ শ্যামল মরুদ্যানটি অবস্থিত সেখানে সুদূম ও উমূরা জাতীর অবস্থান ছিলো।

সুদূম ও উমূরা জাতী ছিলো ধনশীল। তাদের কোনো অভাব অনটন ছিলোনা। তারা ছিলো দাম্ভিক এবং তাদের মধ্যে সত্য মিথ্যার কোনো ভেদাভেদ ছিলোনা। লুত সম্প্রদায় ছিলো সমকামী। তাদেরতে বলা হয় ‘লাওয়াতাত’। ইংরেজীতে এদের বলা হয় ‘Sodmy’ যা ‘Sodom’ শব্দ থেকে এসেছে।

হযরত লুত তাদেরকে তাদের সকল প্রকার পাপকাজ থেকে বিরত রাখার আদেশ দেন। তারা তার কথা শুনলোনা এবং তাকে সপরিবারে জনবসতি থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়। এবং তারা হেলার ছলে বলে, তুমি যদি সত্যিই নবী হয়ে থাকো, তাহলে পারলে তুমি আমাদের যেসব আজাবের ভয় দেখাচ্ছো সেগুলা নিয়ে এসো।

সুদূমবাসীরা লুত এর আহবানে সংশোধিত না হওয়ায় তাদের উপর আল্লাহর গজব চলে এলো। আল্লাহ তাদের শাস্তি প্রদানের উদ্যেশ্যে তিনজন ফেরেশতাকে মানবাকৃতিতে হযরত লুতের নিকট প্রেরণ করলেন। হযরত লুত তার মেহমানদের নিরাপত্তার ব্যপারে চিন্তিত হয়ে উঠলেন। কারণ তার জাতি যদি খবর পায় তার ঘরে সুন্দর তিনজন ছেলে মেহমান হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে তাহলে তারা ওদেরকে বলাৎকার করতে চলে আসবে। কিন্তু হযরত লুতের জাতী তার বিধর্মী স্ত্রীর মাধ্যমে এই খবর পেয়ে রাতের দিকে মেহমানদের বলাৎকার করতে চলে এলো। লুত তাদেরকে অনেক বোঝালেন, এমনকি তারা যদি তাদের মেহমানদের ছেড়ে দেয় তাহলে উনি ‍উনার নিজের মেয়েদের ওদের সাথে বিয়ে দেয়ার কথা দেন। তবুও তারা লুতের কথা শুনলোনা এবং ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করতে উদ্যত হলো। তখন ফেরেশতারা লুতকে জানালেন, আপনি চিন্তিত হবেন না, কারণ আমরা মানুষ নই, আমরা ফেরেশতা। আমরা আপনার জাতীকে শাস্তি দেয়ার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে প্রেরিত হয়েছি।

লুত তখন ফেরেশতাদের পরামর্শ অনুযায়ী তার পরিবার পরিজন সহ সদূম ছেড়ে চলে গেলেন। তারা যেখানে যান, সে জায়গাটাকে বাইবেলে ‘যগর’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। ওখানে তারা সবাই নিরাপদে অবস্থান করলেন, তবে লুতের দুশ্চরিত্রা স্ত্রী তাদের সাথী হলোনা। রাতের শেষ দিকে ফেরেশতাগণ পুরো সুদূম জনপদটি উল্টে দিলেন এবং প্রজ্বলিত অগ্নিধারার সাথে প্রস্তর এবং গন্ধক বর্ষণের মাধ্যমে পুরো এলাকাকে জ্বালিয়ে দিয়ে জনপদ হতে পাপের সকল চিহ্ন মুছে ফেলেন।

তাওরাতের বর্ণনানুযায়ী হযরত লুত হিজরত করে সুদূম জনপদ ছেড়ে তিনি যগর নামক জায়গায় চলে যান। এবং পরে আবার সেখান থেকে নিকটবর্তী একটি পর্বতে বসতি স্থাপন করেন এবং সেখানেই মারা যান। উনার সন্তানাদি সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানিনা।

হযরত ইবরাহীম (আঃ)

হযরত ইবরাহীম ছিলেন জগদ্বিখ্যাত নবী। উনি ইহুদী, খ্রিস্টান ও মুসলিম জাতির আদিপুরুষ। উনার বংশেই হযরত ইসমাঈম, ইসহাক, ইয়াকুব, ইউসুফ, মূসা, ঈসা এবং সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) জন্মগ্রহণ করেন।

হযরত ইবরাহীম হযরত ঈসা’র প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে ইরাকের প্রাচীনতম শহর ‘উর’ এ জন্মগ্রহণ করেন। কোরআন ও বাইবেলে তার জীবনী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।ওনার ইতিহাস অনেক গৌরবোজ্বল। হযরত ইবরাহীম এমন একটা সময়ে পৃথিবীতে আগমন করেন, যখন পুরো পৃথিবীজুড়ে একজন মানুষ ছিলোনা আল্লাহর নাম নেয়ার মত। আগের যত নবী দুনিয়াতে এসেছিলেন তাদের সব শিক্ষাই পৃথিবী থেকে মুছে গিয়েছিলো। উনার পরে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর আগপর্যন্ত যত নবী রাসুল দুনিয়াতে এসেছিলেন, মোটামোটি তারা সবাই ইবরাহীমের প্রদর্শিত শিক্ষাকে প্রচার ও প্রসার দান করেন। হযরত ইবরাহীমই প্রথম নবী, যার তাওহীদবাদীতার পূর্ণ ইতিহাস অবিকৃত আছে এবং চার হাজার বছর অতীত হওয়ার পরেও এখনো পর্যন্ত পৃথিবীতে অগণিত লোক তার অনুসারী।

হযরত ইবরাহীমের নিজের গোত্রের লোকেরা মূর্তিপূজা করত। উনার বাবা ‘আজর’ ছিলেন একজন মূর্তি প্রস্তুতকারক। তাদের মূর্তি রাখার স্থানের নাম ছিলো ‘বায়াল’। সেখানে বায়াল নামক বিশাল একটা মূর্তির পাশাপাশি আরো ছোটবড় অনেক মূর্তি থাকত। তারা প্রত্যেকে তাদের নিজেদের ঘরে সারা বছর ১২টি মূর্তি রাখত।

হযরত ইবরাহীম ছোটবেলা হতেই মূর্তিপূজার বিরোধী ছিলেন। তিনি নিজের ঘর থেকেই প্রথম সত্যের দাওয়াত দিতে শুরু করেন। তিনি তার পিতাকে মূর্তিপূজা হতে বারণ করেন। কিন্তু ইবরাহীমের উপদেশ তার পিতার মধ্যে কোনো প্রভাব বিস্তার করেনি। বরং তিনি ইবরাহীমকে ধমক দেন এবং ভয় দেখান। এরপর পিতার নিকট ব্যর্থ হয়ে পিতাকে এবং পিতৃগৃহ ত্যাগ করলেন। এরপর জাতীর নিকট তাওহীদের দাওয়াত পেশ করতে লাগলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার উপর অনেক মুসিবস অর্পিত হয়, কিন্তু তিনি সেগুলার তোয়াক্কা না করে তার কাজে অটল থাকেন।

একদিন হযরত ইবরাহীম সুযোগমত তাদের বায়ালে ঢুকে সেখানে রাখা একমাত্র বায়ালের মূর্তি ব্যতিত বাকীসব মূর্তিগুলোকে একটা কুঠারের মাধ্যমে ভেঙে ফেলেন। লোকজন যখন পরে তাদের মূর্তিদের এহেন অবস্থায় দেখলো, তখন তারা সবাই বুঝতে পারলো এটা অবশ্যই ইবরাহীমের কাজ। কারণ একমাত্র ইবরাহীমই মূর্তিপূজার বিরুদ্ধাচরণ করে থাকেন। এরপর তারা ইবরাহীমকে বন্দী করে ইরাকের বাদশার নিকট উপস্থিত করলো। তৎকালীন ইরাকের বাদশা ছিলো নদরুদ। আসলে নমরুদ কোনো নাম নয়,বরং তখনকার সময়ে যে ইরাকের বাদশা হতো তাকেই নমরুদ নামে ডাকা হতো। ইবরাহীমের আমলের নমরুদ এতোটাই ক্ষমতাশীল ছিলো যে সে নিজেকে খোদা বলে দাবী করেছিলো।

ইবরাহীমকে যখন বাদশা নমরুদের দরবারে হাজীর করা হলো তখন তিনি উন্নতমস্তকে তার দরবারে উপস্থিত হলেন। নমরুদের সাথে ইবরাহীমের ‘বাহাস’ হলো। বাহাসে হেরে গিয়ে নমরুদ ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে ইবরাহীমকে আগুনে জীবন্ত মারার হুকুম দিলো। হুকুম অনুযায়ী একটা স্থান নির্দিষ্ট করে সেখানে বিশাল অগ্নি প্রজ্বলিত করা হলো। অগ্নির উত্তাপ এতোটাই প্রকট ছিলো যে সেই এলাকার আশেপাশের সকল পাখি আকাশ থেকেই পুড়ে যাচ্ছিলো। এমতাবস্থায় একটা বিশাল চরখগাছের মাধ্যমে ইবরাহীমকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু সেই মূহুর্তে আল্লাহ আগুনকে নির্দেশ দেন, “হে অগ্নি! তুমি ইবরাহীমের জন্য শীতল ও শান্তিপূর্ণ হয়ে যাও।” নমরুদের অনুসারীরা বিস্মিত নয়নে দেখলো হযরত ইবরাহীম আগুনের মাঝখানে অকুন্ঠচিত্তে বসে আল্লাহর গুণগাণ করছেন।

এরপর তিনি দ্বীনের তাওয়াতের উদ্যেশ্যে স্বপরিবারে ফিলিস্তিন চলে যান। ফিলিস্তিনে দুর্ভিক্ষ শুরু হওয়ার কারণে তিনি পরে আবার মিসর গমন করেন, এবং তৎকালীন ফিরাউনের কবলে পড়েন। ফিরাউন পরে তার মহিমা সম্পর্কে জানতে পরে অনুতপ্ত হন,এবং ইবরাহীমকে উপহার হিসেবে হযরত হাজেরা কে দিয়ে দেন। মতান্তরে তখনকার ফিরাউন স্বাচ্ছন্দেই ইবরাহীমের বশ্যতা স্বীকার করেন এবং হাজেরাকে দান করেন। পরে হযরত ওনার স্ত্রী সারার গর্ভে কোনো সন্তান না হওয়ায় সারার অনুরোধেই হাজেরাকে বিয়ে করেন, এবং যথাসময়ে হাজেরা গর্ভবতী হন। তখন ইবরাহীমের বয়স ছিলো ৮৬ বছর। কোরআনে বলা হয়েছে,”অতঃপর আমি তাকে এক ধৈর্যশীল পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দান করলাম।” (সূরা আস-সাফকাতঃ১০১)

এরপরের হাজেরা আর শিশুপুত্র ইসমাঈলকে মরুভূমিতে নির্বাসন, তাদের দ্বারা মক্কা নগরীর পত্তন এবং ইবরাহীম কর্তৃত ইসমাঈলকে কোরবানীর ঘটনা, ক্বাবাঘর পুনঃনির্মাণ এসব মোটামোটি আমাদের সবারই জানা। সে আলোচনায় গেলে বিষয়টা অনেক লম্বা হয়ে যায়, তাই আর সেদিকে গেলাম না।

হযরত ইবরাহীম তিনটি বিয়ে করেছিলেন। তাদের নাম সারাহ,হাজেরা এবং কাতূরা। হাজেরার গর্ভে হযরত ইসমাঈল এবং সারার গর্ভে হযরত ইসহাক জন্মগ্রহণ করেন, এবং পরে তারা নবুয়্যত লাভ করেন। আর কাতূরার গর্ভে ছয়টি সন্তান জন্মগ্রহণ করেন, যাদের নাম ইকসান, যীরান, মুদান, মাদইয়ান, ইসবাক ও সুখ। এদেরকে বনু কাতূরা বলা হয়।

হযরত ইসমাঈল (আঃ)

হযরত ইসমাঈল ছিলেন আল্লাহ তায়ালা প্রেরিত একজন সম্মানিত নবী। তিনি আরব, হিজায, ইয়েমেন ও হাদরামাউতের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। তিনি তার সম্মানিত পিতা হযরত ইবরাহীমের দ্বীনই বজায় রাখলেন এবং সবাইকে শিক্ষা দিলেন। কোরআন শরীফের বেশ কয়েক জায়গাতেই তার নাম উল্লেখ হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “এবং এই কিতাবে ইসমাঈলের স্মরণ করো,নিশ্চই সে প্রতিজ্ঞায় সত্যপরায়ণ ও প্রেরিত নবী ছিলো, স্বীয় পরিজনের জন্য সালাত ও যাকাতের আদেশ করত এবং তার প্রতিপালকের নিকট প্রিয় ছিলো।

হযরত ইসমাঈল তার মাতৃভাষা কিবতী ও পিতৃভাষা হিব্রু ছাড়াও আরবী ভাষা জানতেন। যার ফলে সহজেই তিনি বিভিন্ন গোত্রকে দ্বীনে ইবরাহীমের দাওয়াত প্রদান করেন। ফলে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে ঐক্য স্থাপিত হয়েছিলো।

তাওরাতে বর্ণিত আছে,হযরত ইসমাঈলের এক কন্যা ও বারোজন পুত্র ছিলো। বারোজন পুত্রের নাম বানাইয়ূত, কাইদার, আদবঈল, মাবশাম, মাশমা, দুমাহ, মাবশা, হুদুর, তাইমা, জুতূর, নাফীশ ও কুদামাহ। কন্যার নাম আমার জানা নেই। এবং ওনি ১৩৭ বছর জীবিত ছিলেন। (তারিখে তাবারী, ১ম খন্ড ১৬২ পৃষ্ঠা। তারীখে ইবনে কাসীর, ১ম খন্ড ১৯১ পৃষ্ঠা)। প্রচলিত মতানুযায়ী তিনি মক্কায় মৃত্যুবরণ করেন এবং মাতা হাজেরার পাশেই তাকে দাফন করা হয়।

হযরত ইসহাক (আঃ)

হযরত ইসহাক ছিলেন হযরত ইবরাহীমের পুত্র এবং হযরত ইসমাঈলের ছোট সৎভাই। তিনি সারার গর্ভে জন্মধারণ করেছিলেন। হযরত ইবরাহীমের বয়স যখন ৯০ বছর, তখন তিনি আল্লাহ কর্তৃক ফেরেশতার মাধ্যমে ইসহাকের জন্মের সুসংবাদ লাভ করেন।

হযরত ইসহাক তার পিতা ইবরাহীম ও ভাই ইসমাঈলের দ্বীনই প্রচার করেন। কোরআনে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পাওয়া যায়।তবে তাওরাতে তার সম্পর্কিত বহু কাহিনী রয়েছে।

হযরত ইসহাক ৪০ বছর বয়সে রুফাকা নামের এক মহিলাকে বিয়ে করেন। রুফাকার পিতার নাম বতুয়েল। তাদের বিয়ে পড়ান স্বয়ং ইবরাহীম। ইসহাকের বয়স যখন ৬০ বছর তখন তিনি ইসূ ও ইয়াকূব নামে দুই জমজ সন্তানের পিতা হন। বয়স্ক হলে ইসূ তার চাচা ইসমাঈলের কাছে চলে যান। ইসূর বংশধরদের থেকে আইউব নবী জন্ম নেন। এবং ইসহাকের অপর পুত্র ইয়াকূব তার মামার নিকট চলে গিয়ে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। আল্লাহ ইয়াকূবকে নবুয়্যত প্রদান করেন। ইসহাক থেকেই বণী ইসরাঈলের উৎপত্তি।

কোরআনে উল্লেখিত নবীদের সংক্ষিপ্ত জীবনী -এর তৃতীয় পর্বে আমরা ইয়াকূব সহ আরো নবীদের জীবনী নিয়ে আলোচনা করবো। কোনো তথ্য কিংবা যেকোনো কিছুতে ভূলত্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। পারলে জানিয়ে দিবেন কোথায় ভ‍ুল হয়েছে। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেছি সব সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে। সবাইকে ধন্যবাদ।