হারানো ইনকা সভ্যতা ও তাদের রহস্যময় শহর মাচু পিচু (পর্ব ২)

মাচু পিচু নামক শহরটি একসময় মানুষের অন্তরালে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাইরাম বিঙ্গাম  প্রথম গবেষনা কার্যে এসে স্থানীয়দের সহায়তায় এই মাচু পিচু আবিষ্কার করেন। পাহাড়ের উচ্চতায় অবস্থান থাকায় মেঘে ঢেকে থাকত নগরটি। আবিষ্কারের পর থেকেই চলছে গবেষনা , প্রতিবারই নতুন নতুন তথ্য বেড় হয়ে এসেছে কিছু তথ্য গবেষনা হতে কিছু তথ্য নিছক ধারনার উপর ভিত্তি করে।

কেন তৈরী হয়েছিল এই মাচু পিচু?

তৎকালীন ইনকা সম্রাট পাচুকুটি ১৪৩৮ সালের দিকে ক্ষমতায় বসেন। ১৪৫০ সালের দিকে তিনি মাচু পিচু নগরী তৈরী করেন। এর প্রতিটি দেয়াল পাথরের ও নিখাদ বুননে তৈরী হওয়ায় অনেকে মনে করেন এটি সম্রাটের নিজের সম্পদ তাই এত নিখুদ। আবার অনেকের মতে শীতকালীন রাজধানী তৈরী করার লক্ষ্যে এটি তৈরী । অনেকের মতে ধর্মীয় উপাসনার জন্যই এই মাচু পিচু ।

স্প্যানিশদের কাছে পরাজয় ও অবস্থানগত কারনে ইনকাদের এই সৃষ্টিকর্ম ছিল মানুষের অজানা। তাছাড়া ইনকাদের কিছু কাজেও প্রমান পাওয়া গেছে যে এ রাজ্যের খোজ যেন স্প্যানিশ রা না পায় তাই তারা পথের ধারের গাছে আগুন লাগিয়ে দেয় যেন সেখানে গাছ হয়ে পথ ঢেকে যায়।

মাচু পিচুর গঠন

আবিষ্কারের পর থেকেই মাচু পিচুর ঘরগুলোতে কোন ছাদ নেই । যার কারনে ধারনা করা হয় দেয়াল পাথরের হলেও মাচু পিচুর ঘরগুলোর ছাদ ছিল কাদা ও ঘাসের সংমিশ্রনে তৈরী। বাড়ীগুলো পাহাড়ের পাশ দিয়ে সুন্দর ভাবে ধাপে ধাপে তৈরী হয়েছিল। মাঝের অংশে ছিল কৃষি ক্ষেত্র। গঠনগত বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনায় নগরীর অংশ ও কৃষি অংশ এই দুই ভাগেই বিভক্ত ছিল শহরটি। উচু ধাপ ও ঘরের আকৃতি দেখে আন্দাজ করা হয়ছিল যে অভিজাত শ্রেনী ও সৈনিকরা  কৃষি ক্ষেত্র থেকে দুরে বাস করত। কৃষি জমির পরিমান ছিল কম , মাত্র ৪.৯ হেক্টর। প্রয়োজনের চেয়ে কম হওয়ায় বাহির থেকে শষ্য আনানো প্রয়োজন ছিল ।


এবার একটি মজাদার তথ্য দেই । মাচু পিচুতে কোনপ্রকার চুন সুড়কি কিছু দেয়া হয়নি। নির্মানশৈলীর ভাষায় এসলার বলা হয় এই পদ্ধতিকে। যেখানে একটির উপর আরেকটি আয়তাকার পাথর খন্ড বসানো হয়। দেয়ালগুলো উপরদিকে ক্রমাগত সরু। ঘর তৈরীর এ পাথরের মধ্যের ফাকা স্থান নেই বললেই চলে । এটা এতই সরু যে চিকন ছুড়ি পর্যন্ত পাথরের ফাকায় ঢোকানো সম্ভব না। এর ভেতরে প্রায় ১৪০ টা স্থাপনা রয়েছে। থাকার ঘর , মন্দির , ও বিভিন্নরকমের প্রতিষ্ঠান ছিল সেখানে। প্রায় ১০০ এর ও বেশি সিড়ি রয়েছে সেখানে।  তবে পানির রয়েছে ব্যাবস্থা। ১৬ টি ঝড়না ব্যাবহার করে প্রায় ৮ মাইল দূর থেকে পানি প্রবাহকে কাজে লাগানো হয়েছে। ফলে মাচু পিচুতে উন্নত জলসেবা বিদ্যমান ছিল।

ইনকারা জাতিহিসেবে বুদ্ধিমান ছিল কঠোর পরিশ্রমী ।যার ফলে ইতিহাসে অভুক্ত থেকে মানুষ মারা গিয়েছে এমন ঘটনা নজীরবিহীন আছে । সেখানের অধিবাসীরা ছিল অতিরিক্ত কুসংস্কারে বিশ্বাসী। সূর্য দেবতা ইন্টি ছিল তাদের মূল দেবতা । কিছুকিছু মানুষ আলাদা দেবতার পুজা করত। ইনকাতে দেবতাদের উদ্যেশ্যে মাঝে মাঝে বলির প্রচলন ছিল । দেবতাদের খুশি করার জন্য ছোট বাচ্চাদের নরবলি দেয়া হয়। সেখানের মমিগুলো পরীক্ষা করে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে।

(চলবে)