হারানো ইনকা সভ্যতা ও তাদের রহস্যময় শহর মাচু পিচু (পর্ব ৩)

পেরুর মাচু পিচু পৃথিবীর মানব সৃষ্ট সপ্তাশ্চর্যের একটি অংশ হিসেবে ধরা হয়। প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটক ছাড়াও গবেষকদের কাছে গবেষনার জন্য আদর্শ স্থান ধরা হয়। এই স্থান নিয়ে রয়েছে অসংখ্য উপকথা, গল্প  প্রচলিত। এর পূর্ন তথ্য সত্য এখনো সম্পূর্ন রুপে বের করা সম্ভব হয়নি।

পৃথিবীর অসংখ্য আবিষ্কারই অজান্তেই হয়ে গেছে। মাচু পিচুর আবিষ্কারও অনেকটা ওভাবেই। যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হাইরাম বিঙাম প্রথম বিশ্ববাসীর নজরে আনেন এই মাচু পিচুকে। এর আবিষ্কার নিয়ে ও এর ইতিহাস নিয়ে গবেষনা ধর্মী বেশ কিছু বই ও লেখেন তিনি।


ভাগ্যের বিচারে হাইরাম বিঙাম ছিলেন তুলনামূলক বেশি ভাগ্যবান। ইনকা সভ্যতা’র সম্রাজ্যগুলো নিয়ে অনেক আগে থেকেই তার আগ্রহ ছিল। ১৯০৬ সালের দিকে প্রায় ৪টি অভিজান পরিচালনা করেন তিনি, ভেনিজুয়েলা ও কলম্বিয়ার ভ্রমন নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন, যা তার জিবনে নতুন মোর নিয়ে আসে, এই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে চিলির স্যান্টিয়াগোতে একটি কনফারেন্স এর আমন্ত্রন পান। কনফারেন্স শেষে পেরু দিয়ে আসার সময় তার সাথে পরিচয় হয় একজন মানুষের যার নাম ছিল মিস্টার নুনেজ। নুনেজের অনুরোধে তিনি ও নুনেজ কলম্বিয়ান শহর চক্কোকুইরাও অনুসন্ধান করেন এবং সেটিতে সফল হন। প্রথম সাফল্যের পর বিঙামের নতুন আবিষ্কারের নেশা পেয়ে বসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভিটকস নামের একটি শহর অনুসন্ধানে বের হন, যা ছিল ইনকাদের শেষ হারানো শহর হিসেবে পরিচিত।

বিভিন্ন পুথি পড়ে স্থানীয় আদিবাসীদের দেয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে তিনি খুজতে থাকেন ভিসকট। বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে একসময় পরিচয় হয় আরটেগার নামের এক স্থানীয় জমির মালিকের কাছে, যার কাছ থেকে তিনি কিছু  পাথরের স্থাপনার খবর পান। মাত্র ৫০ সেন্ট এর বিনিময়ে  আরটেগার তাকে নিয়ে যায় সে স্থানে।

২৪ জুলাই ১৯১১ সালে আরটেগার  বিঙামকে নিয়ে গেলো মাচু পিচু পর্বতের অবস্থিত সেই পাথুরে স্থাপনার কাছে। বিঙাম এখানে এসে বেশ দ্বিধাদন্দে পরে যান। কারন যেখানে উপস্থিত হয়েছে স্প্যানিশ নথি থেকে শুরু করে কোথাও এর সম্পর্কে কোন উল্লেখ নেই । বুঝতে পারেন নতুন এক শহরের সামনে এসে পৌছেছেন তিনি যার সম্পর্কে পুরাতন কোন নথিতে উল্যেখ নেই । পাহাড়ের সাথে মিল রেখেই নাম দেন মাচু পিচু । মাচু পিচু আবিষ্কারের দু সপ্তাহের মাথায় তিনি ভিটকস শহরও খুজে পান।

গবেষনা চলাকালে বিঙাম ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল পেরুর উচ্চপদস্থ বেশ কিছু কর্মকর্তার সাথে যার ফলশ্রুতিতে গবেষনার নামে অসংখ্য পুরাকির্তী নিয়ে আসেন নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে। শর্ত ছিল পেরু সরকার ফেরত চাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্বাবধানে থাকবে।
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে যে তারা অনুমতি ব্যাতিত সেসব জিনিসের প্রদর্শন করছে এবং মুনাফা তৈরী করছে।

পরবর্তী বিভিন্ন আইনী জটিলতা ছাড়াই বিষয়টি একটি সমাধানে পৌছায়। নিদর্শন গুলোর সমস্ত সত্ব পেরুর এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় এবং পেরু সরকার যৌথ উদ্যোগে ব্যাবহার হবে নিদর্শনগুলো।