সৌদি আরব টুরিস্ট ভিসা : একনজরে সৌদি আরবের দর্শনীয় স্থান

প্রথমবারের মত সৌদি আরব টুরিস্ট ভিসা দিতে চলেছে। সৌদি আরবের বর্তমান যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ‘ভিশন ২০৩০’ নামে সৌদিতে যে সংস্কার কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন, তারই অংশ হিসেবে সৌদি আরব তাদের কট্টরপন্থী অবস্থান থেকে কিছু কিছু নিয়মে খানিকটা শিথিলতা আনছে। তারই সুত্র ধরে এবার তারা প্রথমবারের মত সৌদি আরবে ট্যুরিস্ট ভিসা বা পর্যটন ভিসা ব্যবস্থা চালু করছেন।

সৌদি আরব টুরিস্ট ভিসা

এখন থেকে যে কোনো ব্যক্তি ট্যুরিস্ট ভিসার আওতায় ভ্রমণের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে যেতে পারবেন। হালাল ট্যুরিজম টার্মটি এখন সারা বিশ্বেই মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে একটি চর্চিত বিষয়। সৌদি আরব মুসলমানদের কাছে পুন্যভূমি। তাই এই দেশটি হালাল ট্যুরিজম এবং মুসলিম অধ্যুষিত অন্যান্য দেশের পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে, এমনটাই ধরে নেয়া যায় !

নিশ্চয়ই জানেন যে, বাংলাদেশের মানুষদের বেশ বড় একটা অংশ সৌদি আরবের প্রতি আত্মরিকভাবেই একাত্মবোধ করেন। আমাদের দেশের মুসলমানদের মধ্যে যারা বিত্তবান বা স্বচ্ছল, যারা জীবনে একবার হলেও সৌদি আরবে যেতে চান। এবং এজন্য তারা হজ্বকেই বেছে নেন। তবে যেহেতু সৌদিতে এখন ভ্রমণের অনুমতি দেয়ার নিয়ম চালু হয়েছে, তাই শুধু ধর্মীয় উদ্দেশ্য নয়, এমনিতেও আপনি এই দেশটিতে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যেতে পারেন !

চলুন জেনে নেয়া যাক সৌদি আরবের দর্শনীয় স্থান গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য…

সৌদি আরবের দর্শনীয় স্থান

১. আল ওহাবা আগ্নেয়গিরির অগ্নিমুখ (Al Wahbah crater) : তাইফ শহর থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে মরুভূমির মধ্যে এই আল ওহাবা ক্রেটারের অবস্থান। ৮২০ ফুট গভীর এই ক্রেটারের প্রান্তে যদি কেউ নামে, তাহলে তাকে পুনরায় তার আগের জায়গায় ফিরে আসতে সময় লাগবে প্রায় ২-৩ ঘন্টার মত। এখানে একরকম নিয়মিতই ক্যাম্পিং করে থাকেন স্থানীয়রা। এবার পর্যটকদেরও ক্যাম্পিংয়ের উপযুক্ত জায়গা হবে এটি।

২. কিং ফাহাদ ফাউন্টেন (King Fahd’s Fountain) : এটাকে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ফোঁয়ারা বলে ভাবা হয়। প্রায় ৮৫৩ ফুট উচ্চতায় পানি ছুঁড়তে সক্ষম এই কিং ফাহাদ ফাউন্টেন। জেদ্দায় অবস্থিত এই ফাউন্টেনে রাতের বেলা পাঁচশোর অধিক স্পটলাইট জ্বালিয়ে লাইট শো করা হয়।

৩. মসজিদে নববী (Al Masjid an Nabawi) : মসজিদ আল নববী হলো হজরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মসজিদ। সৌদি আরবের। মদিনা শহরে এই মসজিদটির অবস্থান। হজরত মুহাম্মদ (সা.) হিজরত করে মদিনায় আসার পর এই মসজিদটি নির্মিত হয়। আরব উপদ্বীপের মধ্যে এখানেই সর্বপ্রথম বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো হয়েছিল ১৯০৯ সালে।

৪. মসজিদুল হারাম (Masjid al-Haram) : সৌদি আরবের শহর মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম। পবিত্র কাবাকে ঘিরে এর অবস্থান। কাবার নিকটেই আবার জমজম কূপের অবস্থান। মসজিদুল হারামে একসঙ্গে ১০ লাখ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। এই মসজিদ সবসময় খোলা থাকে। হজ্জের সময় এখানে জমায়েত হন ৪০ লক্ষাধিক মানুষ।

৫. কিংডম সেন্টার (Kingdom Centre) : সৌদির অন্যতম উঁচু ও সুদর্শন স্থাপনা হলো এই কিংডম সেন্টার। অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর এই ৯৯ তলা ভবন, যার ৯৯২ ফুট উচ্চতা, যেন বানিজ্যিক সৌদি আরবের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই ভবনটি। এই ভবনের ভেতর বিখ্যাত ফোর সিজন হোটেল, অত্যাধুনিক শপিং মল সহ নান্দনিক এপার্টমেন্ট এবং কম্পলেক্সও আছে এখানে।

৬. মেদান সালাহ (Madain Saleh) : প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটনে যাদের আগ্রহ আছে, তাদের জন্যে মেদান সালাহ জায়গাটা লিস্টের প্রথমে থাকা উচিত। পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত সামুদ জাতি এই মেদান সালাহ অঞ্চলে বসবাস করত। সামুদ জাতি নানান অপকর্ম আর ব্যভিচারে লিপ্ত ছিল। হযরত সালেহ (আ.) এই জাতিকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তারা অস্বীকৃতি জানায়। একসময় সামুদ জাতি ধ্বংস হয়। মেদান সালাহ আরবে অভিশপ্ত জায়গা হিসেবে খ্যাত।

৭. সিটি সাইটসিয়িং আল মদীনা (City Sightseeing Al Madinah) : সৌদি আরবে মদীনায় গেলে আপনি এই বাসটির দেখা পাবেন। হজযাত্রী ও পর্যটকদের নিয়ে দর্শনীয় স্থান ঘুরিয়ে আনে এই স্পেশাল সিটি ডাবল ডেকার বাসটি। ৮০ রিয়ালের টিকেট কিনে এই বাসে চেপে বসতে পারেন। বাসে করেই দেখতে পারবেন – মসজিদে নববী, জান্নাতুল বাকি কবরস্থান, আল মানাখায় অবস্থিত মসজিদে গামামাহ বা মেঘের মসজিদ। আরো দেখতে পাবেন ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া উহুদ প্রান্তর, আল নূর শপিং মল, সুলতানা শপিং স্ট্রিট, মসজিদে কিবলাতাইন। সালা পর্বতের দক্ষিণে খন্দক যুদ্ধের স্থানে সাত মসজিদ, সাদা মিনার ও বহু খেজুর গাছ সংবলিত ঐতিহাসিক মসজিদে কুবা ও ওসমানীয় আমলের আল হেজাজ রেল স্টেশন জাদুঘরও দেখার সুযোগ মিলবে এই সিটি বাসে চড়ে বসলে।

৮. মক্কা ক্লক রয়েল টাওয়ার (Makkah Clock Royal Tower) : মক্কা নগরীতে মসজিদুল হারামের পেছনের দিকে গেলে আপনি দেখতে পাবেন সুবিশাল মক্কা ক্লক রয়েল টাওয়ার। এখানে আছে হোটেল, রেস্তোরাঁ শপিং মল সহ অবারিত আকর্ষণ। এটিকে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ উচ্চতার ভবন বলা হয়ে থাকে।

৯. জাবাল সাওদা পর্বতমালা (Jabal Sawda) : যারা প্রকৃতিপ্রেমী তাদেরকে এই জায়গাটি ভীষণভাবে মুগ্ধ করবে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০০  মিটার উঁচুতে উঠলে আপনি জাবাল সাওদা পর্বতমালায় একটি পার্কের দেখা পাবেন। আভা শহর থেকে ২৫ কিলো পশ্চিমে এই জাবাল সাওদা পার্ক সৌদির অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান।

এই স্থানগুলো ছাড়াও সৌদিতে আরো অজস্র স্থাপনা, মসজিদ সহ বিভিন্ন ভ্রমণ স্থান আছে। সৌদি আরব ধর্মীয় কারণে মুসলিমদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ বলে বিবেচিত। এই দেশটিতে মুসলিমদের জন্যে তাই দেখার আছে অনেক কিছুই।

সবচেয়ে বড় কথা, সৌদির কালচার সম্পর্কেও জানার এক সুযোগ তৈরি হলো সৌদি আরব ট‍ুরিস্ট ভিসা চালু হওয়ায়। নিশ্চয়ই ভ্রমণপিয়াসীরা এই সুযোগটি নিতে চাইবেন। আমরা তখন সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ জীবনযাপনের আরো গভীর গল্প জানতে থাকব। সেই অপেক্ষায়…ভ্রমণ সুন্দর হোক, পরিবেশ বাঁচানো হোক ভ্রমণের প্রথম অঙ্গীকার।

এ প্রসঙ্গে অন্যান্য লেখাগুলো :

  • Saudi Arabia Tourist Visa
  • Saudi Arabia Tourist Places
  • Saudi Arabia Tourist Attractions