বিশ্বের কয়েকজন ধনী ভিক্ষুক !

মানুষ অভাবের তাড়নায়ই ভিক্ষাবৃত্তিতে নামে। আর যত কষ্টই সহ্য করা যাক না কেনো, পেটে খাবার না থাকার কষ্ট সামল‍ানোটা সবার জন্যই কঠিন। তাই বাধ্য হয়ে অনেককে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে হয়। অনেকে আবার নিছক কাজের প্রতি আলসেমি থেকেও এ পথে নামেন। জেনে অবাক হবেন, ভিক্ষাবৃত্তি করে এরা আপনার আমার চেয়েও দ্রুত ভাগ্য বদল করে ফেলে, যেখানে আমরা প্রচুর শ্রম দিয়েও অনেক বছরের চেষ্টায় সফল‍তা আনতে পারিনা ! বাংলাদেশেই অনেক ভিক্ষুক আছে, যারা স্বাবলম্বী হয়েও ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়েনি। নিয়মিত ভিক্ষার টাকায় বাড়ি বানাচ্ছে, জমি কিনছে। সন্তানদের জন্য বানিয়ে যাচ্ছে অর্থ সম্পত্তি ! কিন্তু এগুলো কমই আলোচনায় আসে…

আজকের এই প্রতিবেদনে বিশ্বের এমন কিছু ধনী ভিক্ষুক নিয়ে আমরা কথা বলবো, যাদের উপার্জন ও সম্পদের পরিমাণ আমাদের দেশের অনেক দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের চেয়েও বেশি ! অল্প কথায় পড়ুন বাকিটুকু…

ভারত জেইন

ভারতের মুম্বাই শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত ভিক্ষুক ভারত জেইন ! বয়স ৫০ এর কাটায়। ভিক্ষুকদের জীবন্ত কিংবদন্তি বলা হয় তাকে। সন্তানদের পড়ালেখা করানোর জন্য ভারত জেইন ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেছিলেন। তার সম্মোহন ক্ষমতা এতটাই ভালো যে, এ পথে নামার প্রথমদিন থেকেই তিনি প্রতিদিন ৩০০০ রুপি করে উপার্জন করতে শুরু করেন। ৩০ বছর যাবৎ তিনি এ পথে রোজগার করে যাচ্ছেন। শুধু মুম্বাই শহরেই তার‍ এখন দুটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে, যার একেকটির দাম ৭৫ লাখ রুপি ! এছাড়াও তার একটি জুস বার রয়েছে যেখান থেকে তিনি মাসে আরো ৩০ হাজার রুপি উপার্জন করেন।

ইশা

সৌদি আরবের সবচেয়ে ধনী ভিখারী ইশা ! দেশটিতে নারীদের বোরকা ব্যবহার করতে হয়। তাই এই ইশাকে খুব সহজে চেনা যায় ‍না। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইশা প্রতিদিন কামিয়ে নিচ্ছিলেন অসংখ্য টাকা ! ইশার মৃত্যুর পর একটি রিপোর্টে বেরিয়ে আসে, তার কাছে প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার জমা রয়েছে। ভিক্ষাবৃত্তিতে আসার পর থেকে সারাজীবন সে এই অর্থ উপার্জন করেছিলেন। কিন্তু ভোগবিলাসের ধারেকাছেও যাননি ! রহস্যজনকভাবে তিনি শুধু ভিক্ষাই করে গেছেন !

সিমন রাইট

আমেরিকার একমাত্র ধনী ভিক্ষুক, যাকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে আইন প্রয়োগ করে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিলো। মানুষের কাছে হাত পাততে পাততে সিমন গড়েছিলেন কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি ! শুধু সাড়ে তিনলাখ ডলারের একটা ফ্লাটে তিনি একাই বসবাস করতেন !

রং ফেং

চীনের খুব দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা কিশোর রং ফেং। তার থাকার মত কোনো জায়গা ছিলো না। রাস্তাই ছিলো তার ঘর। রং ফেং একদিন একটি নুডলসের দোকানে গেলেন। সেই দোকানের নারী তাকে খাবার আর কিছু টাকা দিলেন। সেই টাকায় তিনি নিজেই একটি দোকান দিলেন এবং ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে আরো কিছু টাকা জমিয়ে সেই ছোট্ট দোকানটিকে মাত্র একবছরে পরিণত করেন বড় একটি রেস্টুরেন্টে ! একবছরের মাথায় তিনি ওই নুডলসের দোকানের নারীকে সম্মান প্রদর্শন করে ১৬৩,০০০ ডলার দিয়ে আসেন ! বর্তমানে রং ফেং ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ব্যবস‍ায় মন দিয়েছেন।

সার্ভাতিয়া দেবী

ভারতের বিখ্যাত ভিক্ষুক সার্ভাতিয়া দেবী। টুরিস্ট বেগার (Tourist Beggar) হিসেবে তিনি সুপরিচিত। তিনি ভ্রমণ করতে করতে ভিক্ষা করতেন। ভিক্ষা করতে করতে ভ্রমণে যেতেন। ভ্রমণে গিয়েও ভিক্ষা করতেন। আর এভাবেই সম্পদের প্রাচুর্য গড়েছেন তিনি। একসময় প্রতিমাসে ২০০ ডলারের একটি ইন্স্যুরেন্সও ছিলো তার।

কৃষ্ণ কুমার গীতা

মুম্বাইয়ের ‍আরেক ধনী ভিখারী কৃষ্ণ কুমার গীতা ! তিনি চারনী রোডের সিপি ট্যাংক এলাকায় ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়িতে গাড়িতে ভিক্ষা করেন। প্রতিদিন ২০০০ রুপি উপার্জন করেন তিনি। তার মাসিক আয় প্রায় ৭০ হাজার রুপি। মুম্বাইর নালাসোপাড়ায় তার একটি ফ্লাট আছে, যার মূল্য প্রায় ১৫ লাখ রুপি !

টেড উইলিয়াম

আমেরিকার সবচেয়ে ধনী ভিখারী হিসেবে পরিচিত টেড উইলিয়াম। অর্থের অভাব দেখে শৈশব কাটানো এ মানুষটি শুধু খেয়েপড়ে বেঁচে থাকার ‍তাগিদেই ভিক্ষাবৃত্তিতে আসেন। তবে তিনি শুধু হাত পেতে বসে থাকেননি। গান গেয়ে ভিক্ষা করেছেন। একদিন এক সাংবাদিকের নজরে এলো কেউ একজন খুব দারুণ কন্ঠে গান গাইছেন। তিনি পেছনে ফিরে এ ভিক্ষুককে দেখতে পান এবং ‍তার ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করেন। তারপর থেকেই সে বিশ্বের সবচেয়ে সৎ ধনী ভিক্ষুক ! টেড উইলিয়াম এখন ইউটিউবে গান গেয়ে অর্থ উপার্জন করছেন। যার অংকটা প্রতি বছর কোটি টাকারও বেশি !