বেনারস : দ্যা সিটি অব লাইট

২৭টি ধর্মের মানুষ নিয়ে এই বেনারস শহর ! বেনারস নামটি গঙ্গা নদীর দুটি নাম মিলে হয়েছে। বেনারাস এর অর্থ হচ্ছে উজ্জ্বল আলো তাই বেনারসকে আলোর শহর বা সিটি অব লাইটস (The City of Light) বলা হয়।

বেনারস প্রাচীনতম একটি শহর। বৌদ্ধ ধর্মে গৌতম বুদ্ধের তীর্থ যাত্রার সময় এই শহরের নাম উল্লেখ্য পাওয়া যায়, যেখানে বেনারসকে কাঁসির রাজধানী বলা হয়। সেখানকার ভাষায় বেনারসকে বারাণসী বলা হয়।

মুসলমানদের কাবা, খৃষ্টানদের জেরুজালেম আর হিন্দুদের বেনারস যেনো একদম নিদিষ্ট শহর। বেনারস শুধু ধর্মের জন্য বিখ্যাত নয়, মসলিন থেকে শুরু করে বেনারসি শাড়ী, পান, ধর্ম, সঙ্গীত, মন্দির-মসজিদ, দেয়ালের গায়ে চিত্র, খাবার, যন্তর-মন্তর, গঙ্গার ঘাট, কারুকাজের সমাদৃত তৈজসপত্র, রামনগর কেল্লা এসব নিয়েই বেনারস এত বিখ্যাত।

আবার অন্যদিকে বেনারসকে নিষিদ্ধ শহরও বলা হয়। কারণ পৃথিবীর আদিমতম ব্যবসা এখানে লিগ্যাল বা সমাদৃত। বেশ্যাবৃত্তি এই প্রাচীন শহরে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে শুরু। এই শহরে দিনের আলোর মত সত্য যেন এখানের আদিমতা। মোঘল আমলে এই পেশাকে একটু অন্য ভাবে বা অন্য মর্যাদা দেয়া হয়। মুজরা বা তাওয়াইফ নামে একটি নাচের প্রচলন করা হয় , যারা এখানে গান নাচ করতেন তাদের বাইজী বলা হত এবং তাদের কে সমাজে মর্যাদাও দেয়া হত। এক একজন বাইজীর প্রসার অনুসারে তাদের মাসিক আয় দু’হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত ছিল। কেউ কেউ রাজা মহারাজা বা সম্রাটগণের উপপত্নী ছিলেন। এবং এই শহরের সকল আদি নির্মাণ-পানির ব্যবস্থা-রাস্তাঘাট তাদের দানের অর্থে নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এই আদিম পেশা থাকলেও মোঘল আমলের গৌরব এর কোন কিছু অবশিষ্ট নেই।

বেনারস এর চর্চা এত বেশী ছিল যে এই শহর দেখার জন্য গৌতম বুদ্ধের সময় থেকেই পর্যটকের আগমন ঘটে। চিনের বিখ্যাত পর্যটক হিউয়েন তিউসাং ৬৩৫ অব্দে এই শহর আসেন তিনি “পলনিস” নামের একটি বই লিখেন এর উপরে যেখানে উল্লেখ আছে – “শহরটিতে ৩০টি ভিন্ন মন্দির এবং ৩০টি ভিন্ন ধর্মের ধর্মীয়গুরু দ্বারা পরিচালিত”।

Beautiful Varanasi

Beautiful Varanasi | Photography by Olivier Follmi

১৮৫৭ সালে মার্ক টোয়াইন এই শহর দেখে বলেন – “বেনারস ইতিহাসের চে প্রাচীন, প্রচলিত ধর্মের থেকে প্রাচীন , গৌরব থেকে প্রাচীন এবং এই সকলকিছু একত্রিত করলে তার থেকেও দ্বিগুণ প্রাচীন শহর।”

বেনারস শুধু এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ না। এই শহরে বসে রচিত হয়েছে কালজয়ী বিখ্যাত কিছু উপন্যাস – রামচরিত , মানসমৃত এর মত উপন্যাস পরবর্তীতে ধর্মীয় গ্রন্থের মর্যাদা পান। কবির” তুলসিদাশ” রাবিদাশের” মত প্রাচীন লেখকদের শহর হচ্ছে বেনারস।

বেনারসের আর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, সেখানকার শহরের প্রতিটি বাড়ির দেয়ালে তৈলচিত্র পাওয়া যায় এবং এই তৈলচিত্র দিয়ে সেই বাড়ির সম্মান এবং মর্যাদাও প্রকাশ করা হয়। বাড়ির মূল ফটক বা দরজা ভারী কারুকার্যের নির্মিত থাকে।

উত্তর ভারতের এই প্রাচীনতম শহর তার রুপে বর্ণে গন্ধে যতটাই প্রাচীন হোক না কেন এই শহর আজও তার জৌলুস ধরে রেখেছে। তাই এই শহর কখনো ঘুমিয়ে যায় না, পুরনোও হয়ে যায় না। আজও ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের আচার অনুষ্ঠানের সাথে এবং তীর্থযাত্রার জন্য প্রসিদ্ধ এই শহর ভ্রমন পিপাসুদেরকে তৃষ্ণাক্ত করে রেখেছে। সেই সাথে ধরে রেখেছে তার প্রাচীন সৌন্দর্য !

Leave a Reply