আহারে, প্রাণের শহর ঢাকারে !

“এ শহর জাদুর শহর, প্রাণের শহর ঢাকারে…”

মেগাসিটি’র তালিকায় ২১তম অবস্থানে থাকা ঢাকা শহর, এক আজব শহর, জাদুর শহর ! বাংলাদেশের রাজধানী এবং সবচেয়ে বড় শহর। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ জীবিকার তাগিদে দেশের প্রত্যেকটা অঞ্চল থেকে এই শহরে পাড়ি জমায়। এই শহর কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয় না।

প্রায়ই দেখা যায় ঢাকার বাইরে থেকে আসা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের লোকেরা ঢাকার বিভিন্ন বদনাম করে। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকে ঢাকার জ্যাম, লোডশেডিং, টাউট বাটপার আর ধূলোবালির মত বিষয়গুলো। আজকে নাহয় ঢাকার সমালোচনা সাইডে রেখে আকর্ষণীয় বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা যাক !

রিকশা

১. রিকশা : বলা হয়ে থাকে ঢাকা হচ্ছে রিকশার শহর। বর্তমানে ঢাকা শহরের মোট যানবাহনের প্রায় ৪৯ শতাংশ স্থান দখল করে আছে এই রিকশা। রিকশা হচ্ছে এমনি এক সুখকর বাহন, যেটাতে আপনি ইচ্ছা করলেই হুড তুলে বা নামিয়ে স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণ করতে পারবেন। আপনাকে রিকশা চেনাচ্ছি ভেবে হাসবেন না। রিকশা সম্পর্কে কিন্তু সত্যিই আপনার ধারণা খুবই কম। যেমন ধরুন, বাংলাদেশের সব জেলার রিকশার মডেলগুলো এক নয়। এটা হয় আপনি আগে জানতেন না। সত্যি বলতে কেউই জানে না এপর্যন্ত কত রকমের কত ডিজাইনের রিকশা বাংলাদেশের রাস্তায় চলেছে ! আসলে এর কোনো হিসাবই কখনো রাখা হয়নি। তাই সবগুলো মডেলের নাম উল্লেখ করা সম্ভব নয়।

বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় রিকশায় চড়ে ঢাকার রাস্তায় না ঘুরলে জীবনের ষোল আনাই বৃথা। মধ্যবিত্ত প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্যে তো রিকশায় চড়ে ‘লং-ড্রাইভে’ যাওয়াটা কম্পালসারি। রিকশার আবিষ্কার জাপানে হলেও বর্তমানে উন্নত বিশ্বের প্রায় সব শহরেই এই বাহনটির উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে দেয়া হয়েছে।

Dhaka Street Food

২. স্ট্রিট ফুড : ঢাকা এমনই এক অসাধারণ শহর, যেখানে পকেটে ২০ টাকা থাকলেও মজাদার খাবার দিয়ে পেট ভরা সম্ভব। ঝালমুড়ি আর মামা হালিম থেকে শুরু করে চটপটি, ফুচকা, পানিপুরি, কি নেই এখানে ! সেইসাথে শসা, আম, জাম, বড়ই সহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলের ভর্তা আর আচার তো রয়েছেই। আরো আছে বাদাম, ছোলা ভাজা, ডাবরি ভাজা, আখের রস আর লেবুর শরবত। রাস্তার মোড়ে মোড়ে আছে ডাবের পানি। শহরের পার্কগুলোয় পা‍ঁপর ভাজা, ছোলা বুট, শিক কাবাব, ভ্রাম্যমান ফাস্টফুড কিংবা আইস্ক্রিমের গাড়ি প্রায়ই চোখে পরবে। রং-বেরঙের হাওয়াই মিঠাই তো বাচ্চা বুড়ো সবারই পছন্দের। ঢাকাই স্ট্রিটফুড নিয়ে একটা পুরো আর্টিকেল লিখলেও একদিনে শেষ করা যাবেনা।

৩. মসজিদ : বিদেশীরা বলে, “Dhaka is the city of mosque.” বলাটাই স্বাভাবিক, কারণ ঢাকা শহরে যেমন অলিতে গলিতে কিংবা বাসার নিচের গ্যারেজে পর্যন্ত মসজিদ গড়ে উঠেছে, এমনটা পৃথিবীর আর কোনো শহরেই হয় না। আজানের সময় শহরের যেকোনো প্রান্তে দাঁড়িয়ে একাধিক মসজিদ থেকে ভেসে আসা আজান শোনা যায় এখানে। এ যেনো এক অন্যরকম অনুভূতি !

৪. শপিংমল : ঢাকা শহরের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে শপিংমল। ছোট বড় হাজারো শপিংমল গড়ে উঠেছে এই শহরে। ধনী থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত হয়ে সমাজের একেবারে নিন্ম আয়ের জনগণের চাহিদা মিটিয়ে চলার মত সবধরণের শপিংমল সারাবছরই এখানে জমজমাট থাকে।

৫. রাতের ঢাকা : প্রথমেই বলে রাখি, রাতের ঢাকায় ভূতের উপদ্রব নেই ! সারাদিনের ব্যস্ততার চাদর ফেলে দিয়ে শহরটা যেনো তুলে ধরে নিজের আসল সৌন্দর্য, লুকিয়ে রাখা রূপ আর যৌবন। শান্ত-নির্মল নিয়ন আলোর পথে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দুয়েকটা হিমুর দেখা পাওয়াটাও অসম্ভব কিছু নয়। হাজারো ভাসমান যৌনকর্মীর পেট চালায় রাতের ঢাকা। রাতের ঢাকার ফুটপাত যে কত ছন্নছাড়া মানুষের একমাত্র আশ্রয়, তা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউই বোধহয় জানেনা।

এসব ছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির ক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য শহরের তুলনায় ঢাকা অদ্বিতীয়। রাজধানী হিসেবে এসব খুব একটা অসাধারণ বিষয় না, তাই আর বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি না। দেশের কথা বলুন, দেশের কথা ভাবুন, দেশকে প্রমোট করুন।

পরিশেষে, ভালো থাকুন। ধন্যবাদ…

Leave a Reply