কোথায় আছে সিরিয়াল কিলার রসু খাঁ ?

বাংলাদেশের কুখ্যাত সব সিরিয়াল কিলারদের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? সেঞ্চুরি মানিক, রসু খাঁ, বিপ্লব, এরশাদ শিকদার। অনেকের কাছেই এদের নাম অজানা, আবার অনেকেই এখনো এদের কথা মনে করে শিহরিত হন। একেকজনের নামের সাথে যেনো জড়িয়ে আছে এক একটা ভয়ানক অভিশপ্ত গল্প। আজকে মনে করিয়ে দিতে চাই তেমনই একজনের কথা !

সিরিয়াল কিলার রসু খাঁ

দেখতে আট দশটা সাধারণ মানুষের মত হলেও রসু খাঁ হচ্ছেন একজন বিশিষ্ট সিরিয়াল কিলার। তিনি মেয়েদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তাদেরকে হত্যায় মারাত্মক পারদর্শী। তার সম্পর্কে একটি পত্রিকায় রিপোর্ট এসেছিলো এরকম –

“দুর্ধর্ষ রসু খাঁ চাকুরি প্রত্যাশী তরুণীদের চাকুরি বা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের পর একের পর এক তরুণীকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। অধিকাংশ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জে। রসু একাই ধর্ষণের পর হত্যা করে একাধিক তরুণীকে খাল বা ডোবায় ফেলে দেয়। বিভিন্ন জেলার তরুণীদের প্রলোভনে ফেলে সমঝোতার মাধ্যমে দৈহিক মিলনের পর তাদেরকে গলা টিপে হত্যা করে আসছিলো সে।”

রসু খাঁকে নিয়ে বেশ কিছুদিন পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। তাকে যে মামলায় ফাঁসানো (!!) হয়েছে, সেটা হলো পপি হত্যা মামলা। এ মামলায় রসু খাঁর আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের বিবরণের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো –

“বাস্তুহারা নামে এক জায়গায় পপি’র সাথে আমার পরিচয় হয়। সেখানে সে ভাড়া থাকত। পরিচয়ের পর তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিই। সে রাজি হয়। ২০০৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তাকে চাঁদপুর নিয়ে আসি। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার হাঁসা বিলে এসে পৌঁছাই রাত ১১/১২ টায়। বিলে আমি তার সাথে কুকাজ করি। সে আমাকে বাধা দেয়নি। কুকাজের পর আমি তাকে গলা টিপে হত্যা করে লাশ পাশের একটি খালে ফেলে দিই। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমি তাকে গলা টিপে ধরে রাখি। সে সুন্দরী মেয়ে, বয়স হবে ২১-২২ বছরের মত। মন চেয়েছে তাই আমি তাকে কুকাজের পর হত্যা করেছি।”

এই হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম সিরিয়াল কিলার রসু খাঁ -এর কাহিনী। অবাক হবেন জেনে, রসু খাঁকে এই মামল‍া থেকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে ! এব্যাপারে একটি জাতীয় পত্রিকার রিপোর্টে পাওয়া কয়েকটি অংশ তুলে দিচ্ছি –

  • চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. আমির জাফর বলেন, রসু খাঁর স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই মামলাগুলো করা হয়েছিল। এসব ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী না থাকায় মামলাগুলোর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা কঠিন ব্যাপার। এক্ষেত্রে পুলিশের অবহেলা ও দুর্বল চার্জশিটের অভিযোগ সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
  • ফরিদগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মো. জাবেদ বলেন, আমাদের থানায় দায়েরকৃত ৬টি মামলারই চার্জশিট হয়ে গেছে। এসব মামলা এখন আদালতে আছে। এর বাইরে আর কোনো তথ্য জানা নেই। রসু খাঁর ইচ্ছা ছিল ১০১ নারীকে খুন করে সিলেটের মাজারে গিয়ে সন্যাসী হওয়ার। ১১ খুনের পর ধরা পড়ে যাওয়ায় তার সেই সিরিয়াল খুন থমকে যায়। একে একে সব মামলায় খালাস পেলে জেল থেকে বের হয়ে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন রসু খাঁ।”

অর্থাৎ মূল কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, রসু খাঁ যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তার কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি শুধুমাত্র রসু খাঁর নিজস্ব জবানবন্দি ছাড়া। আর রসু খাঁ যা বলেছে তা সত্য কিনা, এই নিয়ে আইনের চোখে বিশাল সন্দেহ আছে। এছাড়াও ডাক্তাররা রসু খাঁকে মানসিক রোগী বলে সাব্যস্ত করেছেন। এ কারণেই ২৩ অাগস্ট ২০১১ সালে রসু খাঁকে একটি মামলা থেকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।

ওসি জাবেদের সাথে একমত হয়ে বলতে চাই, আইনের ফাঁকফোঁকর গলে হয়ত একদিন ঠিকই রসু খাঁ সব মামলা থেকে খালাস পেয়ে যাবে। ত‍ারপর কি হবে?

তারপরের গল্পটা আর আমাদের জানা নেই। কয়টা গল্পই বা জানবো বলুন? হতে পারে এরকম হাজারো রসু খাঁ আপনার আমার আশেপাশেই কোথাও বসে চা সিগারেট খাচ্ছে। কিংবা আপনি এই পোস্ট পড়তে পড়তে এদের হাতে ধর্ষিত হচ্ছে প্রেমের টানে ঘর ছেড়ে আসা আরো কিছু তরুণী !

Leave a Reply