ফুটবলে ট্রান্সফার : প্লেয়ার কেনাবেচা

শেষ হয়ে গেল ইউরোপিয়ান ফুটবলের এক রোমাঞ্চকর ট্রান্সফার উইন্ডো। কি ছিল না এবারের ট্রান্সফার উইন্ডোতে? বিশ্বের সেরা ৩ সাইনিং এর পাশাপাশি মেসির ম্যানসিটিতে যোগ দেবার গুঞ্জন আর রোনালদোর ম্যানইউতে যোগ দেবার গুঞ্জন এবারের ট্রান্সফার উইন্ডোকে নতুন রঙ দিয়েছিল। রেকর্ড পরিমান অর্থ ২২২ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বার্সেলোনা ছেড়ে প্যারিসে পাড়ি জমান ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন নেইমার। আর তার জায়গা পূরণ করতে ১৪৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ডর্টমুন্ডের ফ্রেঞ্চ তারকা উসমান ডেম্বেলেকে দলে ভেড়ায় বার্সা।আর ট্রান্সফার উইন্ডোর একেবারে শেষ দিনে আরেক ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পেকে সাইন করায় পিএসজি।

ইউরোপিয়ান ফুটবলে মূলত দুইটি ট্রান্সফার উইন্ডোতে খেলোয়াড় কেনাবেচা হয়। একটি গ্রীষ্মকালীন অর্থাৎ নতুন মৌসুম শুরু হবার পূর্বে এবং অন্যটি মৌসুমের মধ্যবর্তী সময়ে শীতকালীন। প্লেয়ার কেনাবেচার এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে কমবেশি সবাই আগ্রহী।চলুন দেখে নেওয়া যাক একটি ট্রান্সফারের সকল খুঁটিনাটি বিষয়সমূহ।

ইউরোপিয়ান ফুটবলে মূলত দুইটি ট্রান্সফার উইন্ডোতে খেলোয়াড় কেনাবেচা হয়। একটি গ্রীষ্মকালীন অর্থাৎ নতুন মৌসুম শুরু হবার পূর্বে এবং অন্যটি মৌসুমের মধ্যবর্তী সময়ে শীতকালীন। প্লেয়ার কেনাবেচার এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে কমবেশি সবাই আগ্রহী।চলুন দেখে নেওয়া যাক একটি ট্রান্সফারের সকল খুঁটিনাটি বিষয়সমূহ।

প্লেয়ার ট্রান্সফার ইতিহাস

ফুটবলে সর্বপ্রথম প্লেয়ার ট্রান্সফার চালু হয় ইংল্যান্ডে ১৮৮৫ সালে।এবং ২০০২-০৩ সালে উয়েফা প্লেয়ার কেনাবেচার জন্য ট্রান্সফার উইন্ডোর সংযোজন করে।২০০৩ সালে চালু হয় লোনের মাধ্যমে ট্রান্সফার।পূর্বে প্লেয়ার ট্রান্সফার মূলত দুটি ক্লাব এবং প্লেয়ারের মধ্যেই সম্পন্ন হত।সেক্ষেত্রে দুটি ক্লাব সম্মত হলে এবং উক্ত প্লেয়ার এগ্রি করলে ট্রান্সফার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হত।

বর্তমান ট্রান্সফার প্রক্রিয়া

বর্তমানে প্রতিটি প্লেয়ারের এজেন্ট থাকে।কোনো ক্লাব উক্ত প্লেয়ারকে সাইন করাতে হলে প্রথমে তার এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করে। এজেন্ট প্লেয়ারকে ট্রান্সফারের ব্যাপারে অবহিত করে।প্লেয়ার যদি ট্রান্সফারে ইচ্ছুক হয় তাহলে দুটি পক্ষের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা শুরু হয় রিলিজ ক্লজ, ট্রান্সফার ফি, বেতন, ইমেজ রাইটসহ অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে।তারপর সব কাগজ কলমের কাজ শেষে মেডিকেল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মাধ্যমে উক্ত প্লেয়ারকে দলে ভেড়ানো যায়।

বাই আউট ক্লজ বা রিলিজ ক্লজ

রিলিজ ক্লজ ফুটবল ট্রান্সফারে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিটা ক্লাব প্লেয়ারকে সাইন করানো বা চুক্তি নবায়ন করার সময় একটি নির্দিষ্ট এমাউন্ট রিলিজ ক্লজ হিসেবে সেট করে রাখে। পরবর্তীতে চুক্তিথাকালীন সময়ে যদি কোনো ক্লাব ওই প্লেয়ারকে কিনতে চাই এবং প্লেয়ার যদি রাজি থাকে তাহলে রিলিজ ক্লজের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করে উক্ত ক্লাব ওই প্লেয়ারকে কিনতে পারে।যেমনটা পিএসজি নেইমারের ২২২ মিলিয়ন ইউরো রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করে তাকে দলে ভেড়ায়।বর্তমানে সবচেয়ে বেশি পরিমান রিলিজ ক্লজ রিয়াল মাদ্রিদের দুই ফরোয়ার্ড ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও করিম বেনজেমার (১ বিলিয়ন)।

লোন প্রক্রিয়া

লোন ডিল হচ্ছে এমন এক ট্রান্সফার প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনো ক্লাব তাদের তরুন খেলোয়াড়দের অন্য ক্লাবে পাঠায়।যাতে করে সেই ক্লাবে গিয়ে তারা পর্যাপ্ত প্লেয়িং টাইম পায় এবং পরিপক্ব হয়ে পুনরায় ফিরে আসতে পারে।তবে চুক্তিতে উল্লেখ থাকলে প্যারেন্ট ক্লাব উক্ত প্লেয়ারকে একেবারেই বেঁচে দিতে পারে।তাছাড়া লোন ডিলের চুক্তিতে আরো একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায় তা হল ঐ প্লেয়ার তার প্যারেন্ট দলের বিপক্ষে খেলতে পারবে না।

ফ্রি ট্রান্সফার

ফ্রি ট্রান্সফার বা বসমান ট্রান্সফার তখনই হয় যখন কোনো প্লেয়ারের একটি ক্লাবের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।তখন অন্য কোনো ক্লাব ফ্রিতে অর্থাৎ কোনো রিলিজ ক্লজ ছাড়ায় ঐ প্লেয়ারকে নিজেদের দলে ভেড়াতে পারে।এইজন্য কোনো ক্লাব একটি নির্দিষ্ট প্লেয়ারকে দলে রাখতে চুক্তি শেষ হবার পূর্বেই চুক্তি রিনিউ করে ফেলেন।

মেডিকাল পরীক্ষা

ট্রানফারের সকল কাজ শেষ হবার পর প্লেয়ারকে মেডিকাল এক্সাম দিতে হয়।এটা ট্রান্সফার সম্পন্ন হবার পূর্ববর্তী ধাপ। বর্তমানে প্লেয়ারের মেডিকালে MRI স্ক্যান এবং ECG করা হয় প্লেয়ারের লিগামেন্ট, জয়েন্ট, হার্ট কন্ডিশন , দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করার জন্য। মেডিকাল এক্সামে ফেইল করে ট্রান্সফার অসম্পন্ন হবার নজিরও রয়েছে। ২০০০ সালে তৎকালীন ক্লাব রেকর্ড ১৮.৫ মিলিয়নে রুড ভ্যান নিস্তেলরয়কে কিনেও দলে সাইন করাতে পারে নি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

ফুটবল ট্রান্সফারে এজেন্টের ভূমিকা

ফুটবলে ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে এজেন্টের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন এজেন্ট উক্ত প্লেয়ারের হয়ে ট্রান্সফারে ইচ্ছুক বিভিন্ন ক্লাবের সাথে কথা বলে। একজন প্লেয়ার তার খেলা নিয়ে যাতে সম্পূর্ণ মনোযোগী থাকতে পারে সেজন্য তার বিভিন্ন আইনগত ও চুক্তিগত বিষয়গুলো দেখাশোনা করার জন্য এজেন্টের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া বিভিন্ন স্পন্সর, ইমেজ সত্ত্ব ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করে দেওয়া এজেন্টের কাজ। সাধারণত এজেন্টরাই এসব বিষয় দেখাশোনা করে এবং মার্কেটিং কোম্পানিগুলোর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে। নির্দিষ্ট বেতনের বিনিময়ে এজেন্ট নিয়োগ করে একজন প্লেয়ার এসব কাজ করিয়ে নেয় এবং নিজের খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

Leave a Reply