ক্রিকেট ম্যাচ বন্ধ হবার যত ইতিহাস

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে থমকে গেছে সমগ্র বিশ্ব। বিশ্ব অর্থনীতি যেমন স্থবির হয়ে আছে, এর সাথে সাথে বন্ধ হয়ে আছে ক্রীড়া বিনোদনের প্রায় সকল ক্ষেত্রই। এর আগেও অনেকবার ক্রিকেট ম্যাচ বন্ধ হবার ঘটনা ঘটেছে, অস্বাভাবিক কারণে অনেক ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। কখনো তা রাজনৈতিক কারণে কখনো বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে। এমনই কিছু ঘটনার কথা বলা হচ্ছে আজ। পড়ুন বাকিটুকু…

ভিসা না দেয়া

১৯৮৮ সালে ইংলিশ ক্রিকেট দলের ভারত সফর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ইংলিশ ক্রিকেটারদের ভিসা জটিলতায়। গ্রাহাম গুচসহ ইংল্যান্ডের সাত ক্রিকেটারকে ভিসা দিতে চায়নি লন্ডনস্থ ভারতীয় হাই কমিশন। অভিযোগ, এই ক্রিকেটাররা দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেছিলেন। আশির দশকে বর্ণবাদের কারণে একঘরে হয়ে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের সঙ্গেই দক্ষিণ আফ্রিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। ভারতও ছিল সে দেশগুলোর তালিকায়। kfgd ভারত তাদের ভিসা দেয়নি। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড এজন্য ভারত সফর বাতিল ঘোষণা করে।

ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু

১৯৮৪ সালের ৩১ মার্চ, ভারতীয় ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফর করছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর দুই শিখ দেহরক্ষীর হাতে নিহত হন। খবরটা শিয়ালকোটের মাঠে যখন আসে তখন প্রথমে ব্যাটিং করা ভারতের ইনিংস সবে শেষ হয়েছে। পাকিস্তানের ইনিংস শুরুর ঠিক আগে দিয়ে সরকারিভাবে খেলা বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ভারতীয় দল দ্রুতই ফিরে যায় দেশে।

সন্ত্রাসী হামলা

২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদ আল নূরে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর হামলার ঘটনায় স্থবির হয়ে যায় ক্রিকেট দুনিয়া। নিউজিল্যান্ড সফরে থাকা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার ওই মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা ভেতরে প্রবেশ করার আগেই সন্ত্রাসী হামলার খবর পান। ভাগ্যের জোরে সেদিন তামিম-মুশফিকরা প্রাণে বাঁচলেও উগ্রবাদী জঙ্গীর হাতে সেদিন প্রাণ হারিয়েছিলেন ৪৬ জন মুসলিম। এরপর তৎক্ষণাৎ নিউজিল্যান্ড সফরের বাকি খেলা বাতিল করে দেশে ফেরে বাংলাদেশ দল।

অপরাধী মুক্তির দাবিতে

চলছে অ্যাশেজ সিরিজ, ১৯৭৫ সালের ১৯ আগস্ট। হেডিংলি টেস্টটি সেবার দারুণ জমেছিল। ম্যাচের পঞ্চম দিনের সকাল, জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন আরও ২২৫ রান, ইংল্যান্ডের ৭ উইকেট। কিন্তু খেলা শুরু হওয়ার আগেই দেখা গেল উইকেট কেউ বা কারা খুঁড়ে রেখে দিয়েছে। গর্তে ঢেলে রেখেছে পোড়া মোবিল। এমন অবস্থায় পণ্ড হয়ে গিয়েছিল দারুণ জমে ওঠা সেই টেস্ট। এমন কাজ সেদিন কারা করেছিল? পিচ খুঁড়ে হেডিংলি মাঠেই একটা গ্রাফিতি এঁকে রেখে গিয়েছিল অপরাধীরা। সেখানে লেখা ছিল একটা দাবি— অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে জর্জ ডেভিস নামের এক ব্যক্তিকে। ১৯৭৪ সালে লন্ডন ইলেকট্রিসিটি বোর্ড অফিসে অস্ত্র নিয়ে ঢুকে লুটতরাজ চালানো এই ডেভিসের সহযোগীরাই হেডিংলিতে পিচ খোঁড়ার কাণ্ডটা করেছিল।

বাবরী মসজিদের ঘটনা

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছিল উগ্র ধর্মান্ধরা। সে ঘটনার জের এসে লাগে প্রতিবেশী বাংলাদেশে। সে সময় ঢাকায় চলছিল প্রথম সার্ক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আসর। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সঙ্গে সে টুর্নামেন্টে অন্যান্য দলগুলো ছিল ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ‘এ’ দল। ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) চলছিল বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতীয় ‘এ’ দলের খেলা। বাবরি মসজিদের ঘটনার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে। পণ্ড হয়ে যায় ম্যাচটি, সঙ্গে সার্ক টুর্নামেন্টও। খেলা বন্ধ হওয়ার মুহূর্তে টসে হেরে ব্যাটিং করছিল ভারত। উইকেটে ছিলেন নভজোৎ সিং সিঁধু ও সুরেন্দর ভাবে। বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মিনহাজুল আবেদীন।