পৃথিবীতে বৈচিত্র্যের শেষ নেই। এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভিন্নতা। তিন কোটি দুই লক্ষাধিক বর্গকিলোমিটারের আয়তনে আফ্রিকাও তেমনি বিস্ময়ের অপর নাম। বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বর্ণমালার আবিষ্কারক এই মহাদেশকে বলা হয় সভ্যতার জননী। যাদের হাত ধরে সভ্যতার যাত্রা শুরু, তাদের নিয়ে পৃথিবীর অন্য সবার কতই না বিস্ময়?
এর মূল কারণ হয়ত তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে আফ্রিকাবাসীর কারো কারো ভিন্নধর্মী জীবনব্যবস্থা। মুরগি, ছাগল, গরু, কুকুরের বিনিময়ে বিয়েপ্রথা, নিজের ঠোঁট কেটে, দাঁত ভেঙে সুন্দরী হওয়ার প্রচেষ্টাই বা কম কিসে বিস্ময় জাগাতে? অনেকে জীবনে একবার মাত্র গোসল করে। বছরজুড়ে থাকে স্বল্পবসনে। আছে পৃথিবীর সেরা হিংস্র প্রাণীর বসবাস। তাদের অদ্ভুত এই সব আচরণের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আশ্চর্যজনক তাদের বিবাহ প্রথা।
চলুন দেখে নেওয়া যাক আফ্রিকার এমন সব অদ্ভুত বিবাহ প্রথা যেগুলা প্রাচীন কাল থেকে এখনো পালিত হয়ে আসছে।
ইথিওপিয়া, আফ্রিকা
আধুনিক আফ্রিকার অন্যতম প্রতিনিধি দেশ হলো ইথিওপিয়া। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই দেশে এখনো এক ধরনের অদ্ভুত বিবাহ রীতি আছে।
ইথিওপিয়ার “গাল্লাদের” মধ্যে যে বিয়ে হয় তা অনেকটা অপহরণ পদ্ধতির মত। বর কনেকে কোলে তুলে নিয়ে যায় এক জায়গায়। সেখানে একটা বড় পাত্রে পানি ভরা থাকে। কনেকে তুলে পানির উপর ছেড়ে দেয় বর। তখন ঝপ্পাস করে আওয়াজ হয়, যত বেশি জোরে আওয়াজ হবে, বিয়ে ততই বেশি পাকাপোক্ত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।
এই রীতিটা যদিও অদ্ভুত, কিন্তু তারপরও “গাল্লা” উপজাতিদের কছে এটাই ভালোবাসার প্রতীক।
যেখানে কুকুর ছাড়া বিয়ে হয় না
কঙ্গো নদীর তীরে জঙ্গলে বাস করে ওলেম্বা উপজাতি।সভ্যতার এইযুগেও তাদের আচার ব্যবহার ও সংস্কৃতি রয়ে গেছে আদিম ও বর্বরদের মত। এই উপজাতির অনেক গোত্র এখনো আধুনিক পৃথিবীর সাথে পরিচিত নয়। তাদের বিবাহ পদ্ধতিটাও খুব অদ্ভুত।
এদের বিয়েতে বৌয়ের মূল্য ধরা হয় ৮টা তামার ক্রশ, ৩৫টা মোরগ এবং ৪টা কুকুর। এবং এই গোত্রের মেয়েরা একটি কাঁচা আস্ত মুরগির বাচ্চা খেয়ে বিয়ের যোগ্যতা দেখায়। সঠিক রীতি অনুযায়ী খেলে বিয়ের যোগ্য বলে গণ্য হয়। পরবর্তী এক বছর সেই কনেকে পরিবার অতি আদর যত্নে রাখে।
বলা বাহুল্য যে এই কুকুর তাদের বিবাহের নিরপত্তার প্রতীক এবং মোরগ তাদের সমৃদ্ধির প্রতীক।
মুখে চুনকালি দিয়ে বিয়ে
আফ্রিকার ছোট্ট একটা দেশ রুয়ান্ডা। এই দেশে এক সম্প্রদায়ের বিবাহ পদ্ধতি সত্যি খুব অদ্ভুত। কোন মেয়েকে যদি কোনো ছেলের পছন্দ হয়, তাহলে ছেলেটি সারা মুখে চুনকালি মেখে মেয়েটার সামনে দাঁড়ায়। যদি তার চুনকালি মাখা মুখ মেয়েটির পছন্দ হয় তাহলেই তাদের বিয়ে হয়।
কিন্তু এই প্রথাটা খুব ঘৃণ্য। কারণ এই সম্প্রদায় মেয়েদেরকে সমাজের কলঙ্ক মনে করে। কোনো ছেলের মুখে চুনকালি দেয়ার অর্থ হলো ছেলেটি এই কলঙ্ক মেনে নিতে রাজি আছে।
কুলি করার পানি দিয়ে বিয়ে
রুয়ান্ডাতে আরেক সম্প্রদায়ের বিয়ে আরো অদ্ভুত। এরা বিয়ে করে একজনের গায়ে আরেকজনের কুলি করা পানি ছুঁড়ে মারার মাধ্যমে। তাদের মতে কুলি করা পানি তাদের আত্মার প্রতীক।
হয়ত আরো অনেক না জানা অদ্ভুত বিবাহ রীতি রয়েছে যেগুলো এখনো সবার সামনে উন্মোচিত হয়নি। এজন্যই আফ্রিকা কে আজো বলা হয় “অন্ধকারের দেশ”।
(পরবর্তী পর্বে আফ্রিকা সম্পর্কিত আরো বিস্ময়কর কিছু তথ্য আসছে। সাথে থাকুন। লেখককে ফেসবুকে ফলো করুন)