ইয়াজ‍ূজ ‍মাজূজ নামক ভয়ংকর দুই জাতির কাহিনী

ইয়াজূজ মাজূজদের পুরো পরিচয় কুরআনে দেয়া হয়নি। তাদের মূল ঘটনা বর্ণিত হয়েছে সূরা ক্বাহাফের শেষদিকে। সহীহ হাদিসের বর্ণনানুযায়ী,তাদের নাক চ্যাপ্টা, ছোট ছোট চোখ বিশিষ্ট। এশিয়ার উত্তর পুর্বাঞ্চলে অবশিত এ জাতির লোকেরা প্রাচীন কাল হতেই তাদের পাশের গোত্রগুলোর উপর অত্যাচার নির্যাতন চালাত। তাদের ধন সম্পদ লুট করত।

বাইবেলের ১০ম আধ্যায়ে তাদেরকে হযরত নুহ (আ‍ঃ) এর ছেলে ইয়াকেলের (উনার নাম নিয়ে মতভেদ আছে) বংশধর বলা হয়েছে। রাশিয়া ও উত্তর চীনে এদের মত দেখতে কিছু উপজাতি রয়েছে যারা তাতারী, মঙ্গল, হুন ও সেথিন নামে পরিচিত।

জিরোম এর বর্ণনামতে মাজূজ জাতির বসতি ছিল ককেশিয়ার উত্তরে কাস্পিয়ান সাগরের সন্নিকটে।

ইয়াজূজ মাজূজদের সাধারণ একটি বর্ণনা

ইয়াজূজ এবং মাজূজ তাদের মধ্যে কিছু মানুষ খুবই খাটো, আবার কিছু মানুষ খুবই লম্বা। দুয়েকটা দুর্বল মতানুসারে তারা অস্বাভাবিক আকারের কানের অধিকারী যারা কিনা এক কান মাটিতে বিছিয়ে এবং অপর কান গায়ে জড়িয়ে বিশ্রাম করে।

তারা বাদশা যুলকারনাইনের আমলে খুব বিশৃঙ্খল এবং অত্যাচারী জাতি হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। পরে বাদশা যুলকারনাইন এদেরকে একটা প্রাচীরের মধ্যে বন্দী করে দেন।তারা এখনো সেখানে বন্দী আছে।

বাদশা যুলকারনাইনের বর্ণনা

অনেকেই হুমায়ূন স্যারের বই পড়ে এটা মনে করে থাকেন, বাদশা যুলকারনাইন এবং বাদশা আলেকজান্ডার একই লোক। আসলে সেটা মোটেও ঠিক নয়। বাদশা যুলকারনাইন একজন ধার্মিক ব্যক্তি। উনি নবী নন কিন্তু সম্মানিত লোক। পবিত্র কোরআনে উনার ঘটনা আলোচনা করা হয়েছে। তারঁ আরেক নাম শাহ সেকান্দার। তিনি পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম দিক ভ্রমণ করেছেন বলে ওনাকে যুলকারনাইন বলা হয়।

অপরদিকে আলেকজান্ডার ছিলেন একজন বিধর্মী। তাঁর জন্ম খুব সম্ভবত যুলকারনাইনের জন্মের এক শতাব্দী পর।

ঐতিহাসিক সেই প্রাচীর নির্মাণের কাহিনী

যুলকারনাইনের আলোচনা করতে গিয়ে আল্লাহ্‌ তা’য়ালা পবিত্র কোরআন শরীফে বলেন – আবার সে পথ চলতে লাগল। অবশেষে যখন সে দুই পর্বত প্রাচীরের মধ্যস্থলে পৌঁছল, তখন সেখানে এক জাতিকে পেল, যারা তাঁর কথা একেবারেই বুঝতে পারছিল না। তারা বলল, হে যুলকারনাইন! ইয়াজূজ ও মাজূজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আপনি চাইলে আমরা আপনাকে কিছু খাজনা দিবো। তবে আপনি যদি ইয়াজূজ মাজূজদের একটা প্রাচীর বানিয়ে সেটার মধ্যে বন্দী করে দেন।

যুলকারনাইন জবাবে বললেন, আমার সৃষ্টিকর্তা আমাকে যথেষ্ট দিয়েছেন, তাই আমাকে তোমাদের কোনো কর দিতে হবেনা। তোমরা শুধু শ্রম দিয়ে আমাকে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেব। তোমরা লোহার পাত এনে দাও।

তারা যখন লোহার পাত এনে দিল, তখন যুলকারনাইন সেই লোহা দিয়ে ইয়াজূজ মাজূজদের চারদিকে প্রাচীর তুলে দিলেন। প্রাচীর তুলার পর তিনি লোকদের বললেন তোমরা এই লোহার উপর হাঁপড় দিয়ে দম দিতে থাকো। এভাবে দম দেয়ার পর যখন লোহার প্রাচীর গরম হয়ে আগুনের মত হয়ে গেল, তখন তিনি লোকদের নির্দেশ দিলেন তোমরা গলিত তামা নিয়ে এসো। তারা গলিত তামা নিয়ে আসলে সেই তামা ওনি গরম লোহার উপর ঢেলে দেন। এভাবে ইয়াজূজজ মাজূজরা প্রাচীরের মধ্যে বন্দী হয়ে যায়। (সূরা ক্বাহাফ ৯২-৯৭)

এখানে একটা মতভেদ আছে। অনেকে বলে, তিনি ৩ দিকে প্রাচীর নির্মাণ করেন। আরেকদিকে ছিলো খাড়া পাহাড়। তাই সেদিকে প্রাচীর নির্মাণ করতে হয়নি।

ইয়াজূজ মাজূজদের প্রাচীর ভাঙার চেষ্টা

যুলকারনাইনের নির্মিত সুদৃঢ় প্রাচীরের কারণে দীর্ঘকাল তারা পৃথিবীতে আসতে পারেনি। প্রাচীরের ভিতর তারা নিজস্ব পদ্ধতিতে তারা জীবন যাপন করছে। তবে তারা প্রতিনয়ত প্রাচীর ভাঙার জন্য পূর্ণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা প্রতি সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত প্রাচীর ভাঙার চেষ্টা করে। পরে যখন সকাল হয় তখন তারা বলে, আজকে অনেক কাজ হলো। এবার চলো বাকিটা পরে করা যাবে। এরপর তারা চলে গেলে আল্লাহ আবার সেই প্রাচীর পূর্বের ন্যায় করে দেন। ইয়াজূজ মাজূজরা এখনো অবিরত চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে। (ক্বাছাছুল আম্বিয়া)

ইয়াজুজ মাজূজরা কখন প্রাচীর ভাঙতে সক্ষম হবে

কেয়ামতের কিছুদিন আগে হযরত ঈসা (আঃ) এর সময়ে তারা প্রাচীর ভেঙে ফেলতে সক্ষম হবে। সেদিন তাদের মধ্যে কোনো একজন হঠাৎ বলে উঠবে, “আল্লাহ যদি চায় তাহলে আজকে আমরা প্রাচীর ভাঙবই”। এর পরেরদিনই প্রাচীর ভেঙে যাবে এবং ইয়াজূজ মাজূজরা পঙ্গপালের ন্যায় পৃথিবীতে বেরিয়ে আসবে। এসেই তারা জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলবে। এবং তারা সংখ্যায় বিশাল।

হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সাহাবীদের উদ্যেশ্যে বলেন, ‘হাশরের ময়দানে ইয়াজূজ-মাজূজ, পর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি এবং ইবলিস বংশধরদের উপস্থিতিতে তোমাদেরকে মুষ্টিমেয় মনে হবে। ঠিক উটের গলায় ক্ষুদ্র চিহ্ন আঁকলে যেমন ক্ষুদ্র দেখা যায়, হাশরের ময়দানেও তোমাদের তেমন দেখাবে। (তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ)

তারা নদীর সমস্ত পানি পান করে নিঃশেষ করে ফেলবে। ভয়ে আতঙ্কে মানুষ দূরে দূরান্তে পলায়ন করবে। অতঃপর আকাশের দিকে তারা তীর ছুড়বে, তীর রক্তাক্ত হয়ে ফিরে আসবে। (তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ, মুস্তাদরাকে হাকিম)

ইয়াজূজ মাজূজদের ধ্বংস কিভাবে হবে

হযরত ঈসা (আঃ) তাদের জন্য বদদোয়া করবেন। এতে তাদের কা‍ঁধের দিক থেকে এক প্রকার পোকা সৃষ্টি করে আল্লাহ্‌ তাদেরকে ধ্বংস করবেন। তারা সবাই মারা যাবে ও পঁচে দুর্গন্ধ হবে। সারা পৃথিবী জুড়ে তাদের লাশ থাকবে। আল্লাহ শকুন পাঠাবেন। লাশগুলোকে তারা নাহবাল নামক স্থানে নিক্ষেপ করবে। মুসলিমরা তাদের তীর ও ধনুকগুলো ৭ বছর জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)

উপসংহার

এই ছিলো ইয়াজ‍ূজ ‍মাজূজ এর ঘটনা। ছোটবেলাতেই পড়েছিলাম। যেহেতু ক্বোরআন শরীফের ঘটনা সেহেতু মুসলমান হলে এই ঘটনা আপনাকে বিশ্বাস করতেই হবে। আমি আমার মত করে লিখেছি নানা জায়গা থেকে ঘটনা সংগ্রহ করে। ভূল হলে ক্ষমাপ্রার্থী। এবং ভূলগুলা ধরিয়ে দিলে খুশি হবো। ধন্যবাদ…

Leave a Reply