বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত রহস্যময় দ্বীপ সেন্টিনেল

পৃথিবীতে রহস্যময় স্থান খুব কমই রয়েছে আজ উন্নত স্যাটেলাইট ব্যবস্থার কারণে। দুঃসাহসিক মানুষদের জন্য অনাবিষ্কৃত জায়গাও আর তেমন খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে হ্যাঁ, একটি আছে। সেটি হচ্ছে রহস্যময় দ্বীপ সেন্টিনেল !

পৃথিবীতে এমন কিছু স্থান রয়েছে, যেগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়েও জয় করা সম্ভব হয়নি। এরকমই একটি দ্বীপ হলো সেন্টিনেল। এ রহস্যময় দ্বীপটি বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত। ভূতাত্বিকদের মতে প্রায় ৬০ হাজার বছর আগে এ দ্বীপটি তৈরী হয়েছিল। এর আয়তন ৭২ বর্গকিলোমিটার। কাগজে কলমে দ্বীপটি ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলেও দ্বীপটির উপর ভারতের কোনো রকম কর্তৃত্ব নেই। ভারত সরকার বহুবার চেষ্টা করেও দ্বীপটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে পারেনি ! আরো নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে তারা দ্বীপটিতে ঢুকতেই পারেনি, যার একমাত্র কারণ হলো দ্বীপটিতে বসবাসকারী অধিবাসীরা। এ দ্বীপটিতে মোট কতজন মানুষ বাস করে, তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি।

২০০১ সালে সরকারিভাবে দ্বীপটির ব্যাপারে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তবে তা অসম্পূর্ণই রয়ে গেছে। অসম্পূর্ণ সে পরিসংখ্যানে মাত্র ৩৯ জনের হিসেব পাওয়া গেছে। সেন্টিনেল দ্বীপে বসবাসরত অধিবাসীদের সেন্টিনেল জনগোষ্ঠী বলা হয়।

এরা সভ্যতার আলো থেকে দূরে থাকা শিকারি জনগোষ্ঠী। এরা ঠিক কোন ভাষায় কথা বলে তাও জানা যায়নি। ধারণা করা হয় এদের ভাষার সঙ্গে আন্দামানি ভাষার মিল রয়েছে। এই দ্বীপটির বাসিন্দারা প্রচন্ড হিংস্র ও আদি মানষিকতার। এদের নিষ্ঠুরতার কাহিনীও শোনা যায়। জানা যায়, ২০০৬ সালে ২ জেলে ভুল করে ওই দ্বীপে ঢুকে পরে। দ্বীপের অধিবাসীরা তাদের মেরে ফেলে। জেলেদের উদ্ধারে আসা হেলিকপ্টার থেকে লাশের সাথেই কিছু মানুষ দেখা যায় এবং সে মানুষগুলো হেলিকপ্টার লক্ষ করে তীর ছুঁড়ছিলো। যে কারণে জেলেদের উদ্ধার না করেই তাদের ফেরত যেতে হয়। ওই দ্বীপের বাসিন্দাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তাও ব্যর্থ হয়।

১৯৬৭ সালে প্রথম ভারত সরকার সে দ্বীপের মানুষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। সেই সময় ভারতের ট্রাইব্যুনাল এর মহা পরিচালক টি.এম.পণ্ডিত ছিলেন। তাদের সাথে যোগাযোগের জন্য দ্বীপটির তীরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপহার রেখে আসা হত। যেমন খাবার, পোষাক ইত্যাদি। তাতেও তাদের হিংস্র মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি, বরং তখন থেকে তারা তীরের কাছে কোনো নৌকা বা ভেলা দেখলেই তেড়ে আসত ও তাদের বানানো প্রাচীন অস্ত্র জাতীয় বস্তু ছুঁড়ে মারত। এভাবেই সেখানে চলতে থাকা তাদের নিজস্ব শাসনের কারণে এখনো দ্বীপটি প্রায় অনাবিষ্কৃত। কেবল দ্বীপটির নাম ও আয়তনই জানা সম্ভব হয়েছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি হয়ত তারাও সভ্যতার আলোয় আসবে ভারত সরকারের চেষ্টায়।

Leave a Reply