ক্রিকেটের ঐতিহাসিক যত স্পট ফিক্সিং ও বল টেম্পারিং

ক্রিকেট, বর্তমান দুনিয়ার এক জনপ্রিয় খেলা। ক্রিকেট এর প্রত্যেকটি ম্যাচ মানুষের মনে জন্ম দেয় অসংখ্যা জল্পনা-কল্পনার। সেই জল্পনা-কল্পনার মাঝে বিষফো‍ঁড়ার মত কিছু জিনিস বিদ্যমান। স্পট ফিক্সিং এবং বল টেম্পারিং এর ভিতর অন্যতম। বল টেম্পারিং এবং স্পট ফিক্সিং এর কারণে ভদ্রলোকের খেলা নামে পরিচিত ক্রিকেট খেলা কলুষিত হয়েছে অনেকবার। আসুন জেনে নেওয়া যাক বল টেম্পারিং ও স্পট ফিক্সিং সম্পর্কিত কিছু তথ্য।

বল টেম্পারিং

ক্রিকেটে বল ট্যাম্পারিং হলো সোজা কথায় বলের স্বাভাবিক আকৃতি নষ্ট করা। তা নখ, ধাতব কিছু কিংবা শিরিষ কাগজ বা বাইরের যে কোনো বস্তু দিয়ে ঘটতে পারে। মূল কথা হলো, ফিল্ডার বা বোলার যখন বাড়তি সুবিধা পেতে বলের স্বাভাবিক আকার আকৃতির ক্ষতি করেন সেটি বল ট্যাম্পারিং।

স্পট ফিক্সিং

জুয়াড়িরা বাড়তি উপার্জনের জন্য অবৈধ অর্থের বিনিময়ে কোনো দল বা খেলোয়াড় নতুবা টিম ম্যানেজমেন্টকে ম্যাচের নিয়মবহির্ভূত নির্দিষ্ট কিছু করতে রাজি করান। তখনই সেটা হয় ম্যাচ ফিক্সিং। একটি ম্যাচের দুইটি ইনিংসকে কয়েক ভাগে ভাগ করে নিয়েই জুয়াড়িরা বড় ধরনের ফিক্সিংয়ের পরিকল্পনা করে থাকেন। ম্যাচের যে কোনো একটি অংশ পাতানোকে বলা হয় স্পট ফিক্সিং। স্পট ফিক্সিং হতে পারে জুয়াড়িদের নির্দিষ্ট করে দেওয়া কোনো ওভারে অথবা নির্দিষ্ট কোনো ওভারের নির্দিষ্ট করে দেয়া কোনো বলে, যেখানে বলা হতে পারে যে, ঐ বলটি হবে নো বা ওয়াইড নতুবা ঐ বল থেকে চার বা ছয় দেওয়া বা নেওয়া। এমনকি নির্দিষ্ট কোনো ওভারে কত রান উঠবে, বোলারদের মধ্যে কোন বোলার কোন প্রান্ত থেকে বোলিং করবেন সেটা নিয়েও জুয়াড়িরা বাজি ধরে থাকেন। এমনকি আম্পায়ারদের নিয়েও জুয়া হয়ে থাকে। যেমন কোন আম্পায়ার কোন প্রান্তে প্রথমে দাঁড়াবেন, আম্পায়ারের মাথায় টুপি থাকবে কিনা নতুবা কোন রঙের টুপি পরে মাঠে নামবেন ইত্যাদি।

ক্রিকেট ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য কিছু বল টেম্পারিং এর ঘটনা

বল টেম্পারিং এর অভিযোগ উঠেছে অনেল বার। ২০১৩ সালে জিপারে ঘষে বল টেম্পারিং এর অভিযোগ ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস এর বিরুদ্ধে। এছাড়া মিন্ট চুইংগাম চাবিয়ে বল পরিষ্কার করার চেষ্টা করায় শাস্তি পান ডু প্লেসিস। সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার মাইকেল আথারটন ১৯৯৪ সালে পকেটে বালু রেখে বল মসৃণ করে বল টেম্পারিং করার চেষ্টা করেন। এছাড়া জহির খানের বিরুদ্ধে মুখে জেলি বিন ব্যবহার করে বল টেম্পারিং এর অভিযোগ ওঠে। শহিদ আফ্রিদির দাত দিয়ে প্রকাশ্যে বলের সিম তুলে ফেলে বল টেম্পারিং করার ঘটনা সবারই জানা। সাম্প্রতিক সময়ে স্টিভ স্মিথ,ডেভিড ওয়ার্নার ও ক্যামেরুন বেনক্রাফট কে বল টেম্পারিং এর জন্য শাস্তি প্রদান করা হয়।

স্পট ফিক্সিং এর কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা

১৯৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন, টিম মে ও মার্ক ওয়াহ কে বাজে খেলার প্রস্তাব দিয়ে আজীবন নিষিদ্ধ হন পাকিস্তানের শোয়েব মালিক। তবে ২০০৮ সালে তার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। পাকিস্তান আতাউর রহমান জুয়াড়িদের সাথে লেনদেন এর কারণে আজীবন নিষিদ্ধ হন। ২০০৬ সালে তার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। ভারতের অজয় জাদেজা কে জুয়াড়িদের সাথে সংযুক্ত থাকার অভিযোগে ৫ বছর নিষিদ্ধ করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার হানসি ক্রনিয়ে কে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়। হার্শেল গিবস কে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মারলন স্যামুয়েলস কে দলের অভ্যন্তরীণ তথ্য জুয়াড়িদের দেয়ার কারণে ২ বছর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। ২০১০ সালে পাকিস্তানের আমির ও মোহাম্মদ আসিফ নিষিদ্ধ হন যথাক্রমে ৫ ও ৭ বছরের জন্য। সালমন বাটকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। মোহাম্মদ আশরাফুল কে ২০১৩ বিপিএল মৌসুমে স্পট ফিক্সিং এর দায়ে প্রথমে ৮ বছর ও পরে ৫ বছর এর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হয়।

এভাবে ক্রিকেটে স্পট ফিক্সিং বা বল টেম্পারিং এর মতো অন্যায় কাজের দ্বারা ক্রিকেটকে যেমন ধ্বংস করা হচ্ছে সাথে ধ্বংস হচ্ছে খেলোয়াড় দের ক্যারিয়ার। স্পট ফিক্সিং বা বল টেম্পারিং এর মতো বিষয় গুলো তাই প্রশাসন এর কড়া দৃষ্টিতে থাকার পাশাপাশি খেলোয়াড় দের নৈতিকতা দ্বারা প্রতিহত করা বাঞ্ছনীয়।

Leave a Reply