আমাদের সমাজের সবচেয়ে নিগৃহীত মানুষদের মধ্যে পতিতারা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মৃত্যুর পর এদের লাশের সৎকারটা পর্যন্ত ঠিকভাবে হয় না। কোনোরকমে মাটিচাপা দিয়ে লাশ পুঁতে রাখা হয়। অথচ সমাজের এই বিবর্জিত মানুষগুলোই সমাজকে প্রতিনিয়ত নানারকম যৌন অনাচার থেকে রক্ষা করে আসছে। প্রতিটা জেলা, উপজেলা কিংবা অলিগলিতে এদের অস্তিত্ব থাকলেও অনেকেই জানেন না পতিতাদের গল্প ! অনেকেই জানেন না পতিতাবৃত্তির শুরু কিভাবে, কেমন হয় এদের রমজান কিংবা কেমনই বা কাটে এদের ঈদ? এসব নিয়েই আজকের এই পোস্ট…
পতিতাদের ঈদ উৎসব নিয়ে কথা বলার আগে একমিনিটে তাদের ইতিহাস সারসংক্ষেপ জেনে নেয়া যাক !
পতিতাদের সাধারণ জীবন
যারা প্রত্যক্ষভাবে টাকার বিনিময়ে যৌনসেবা প্রদান করেন, আবিধানিক ভাষায় তাদের পতিতা (Prostitute) বলা হয়। তাদেরকে অনেক ক্ষেত্রে গণিকা, সেক্স ওয়ার্কার, বেশ্যা ইত্যাদিও বলা হয়।
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন পেশাগুলোর একটি হল পতিতাবৃত্তি। সাধারনত সকল পতিতারাই বাধ্য হয়ে কিংবা ভাগ্যের ফেরে পতিতাবৃত্তি শুরু করেন। কোন কোন পরিবার বোবা, অন্ধ ও শারীরিকভাবে অক্ষম মেয়েদের বোঝা মনে করে পতিতালয়ের দালালদের কাছে বিক্রি করে দেন। আবার এক শ্রেণীর প্রতারক আছে, যারা স্বল্পশিক্ষিত ও দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের সাথে প্রেম করে কিংবা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বাসা থেকে ভাগিয়ে নিয়ে বিক্রি করে দেন পতিতালয়ে। বাংলাদেশে অপহরণ কিংবা দালালের মাধ্যমে পতিতাবৃত্তি শুরু করা মেয়েদের বয়স, চেহারা অনুযায়ী শর্তসাপেক্ষে ২০,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা দেওয়া হয়।
পতিতাদের রোজা – রমজান
ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো পতিতাই ধর্মকর্মে আকৃষ্ট নয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই রমজানে এদের কোন ভাবান্তর ঘটে না। উপরন্তু দিনের বেলায় গ্রাহক হারানোর চিন্তায় থাকে তারা। রমজানে মূলত সন্ধ্যার পরপরই এরা পতিতাবৃত্তি শুরু করে। পতিতা পল্লিতে যেসব পতিতারা থাকে, তাদের জীবনপদ্ধতি মূলত ৩ ধরনের। সবচেয়ে উচুস্তরে থাকেন মা, মাসী, খালা, সর্দারনী, বাড়িওয়ালা। প্রাক্তন পতিতা যারা স্বাধীন, স্থানীয় রাজনীতিবিদ কিংবা প্রশাসনের সাথে ভালো হাত-পরিচিতি রয়েছে, তারা উচ্চপদ ধারন করেন। আর সবচেয়ে নিচুস্তরের হল ছুকরি কিংবা এই লাইনে নতুন আসা পতিতারা। ঈদের সময় ক্ষেত্রবিশেষে তাদের আয়ের ৫০% থেকে ৬০% পর্যন্ত নিয়ে যান সর্দারনী। ঈদে উপরি আয়ের জন্য ছুকরিরা দশের অধিকবার যৌনমিলনে বাধ্য হন সর্দারনীর নির্দেশে।
বাংলাদেশে ১০টি যৌনপল্লিতে এবং ভাসমান মিলিয়ে মোট রেজিস্টার্ড যৌনকর্মীর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ হবে বলে ধারণা করা হয়। ঈদের আগে এই সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। নিম্নশ্রেণীর মেয়ে কিংবা মহিলারা পরিবাবের জন্য এ পেশায় আসেন সাময়িকভাবে। এদিক থেকে বিবেচনায় পতিতাদের রমজান মাস আয়ের দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ন।
পতিতাদের ঈদ এবং ঈদ শপিং
নিয়মিত গ্রাহকদের সাথে পতিতাদের এক ধরনের প্রেমের সম্পর্ক থাকে, যারা পরিচিত থাকেন সাধারনত ‘বাবু’ নামে। ক্ষেত্র বিশেষে বাবুদের সন্তানও ধারণ করেন পতিতারা ! ঈদের সময় পতিতারা সেই বাবুদের কাছ থেকে আলাদা বখশিশ দাবী করেন, পাশাপাশি সর্দারনীরাও ছুকরিদেরকে উপহার দিয়ে থাকেন। যৌনপল্লীতে যেসব পতিতারা থাকেন, তাদের বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। পল্লীতেই থাকা দোকান, মার্কেট, পার্লার থেকে তারা ঈদের প্রয়োজনীয় সাজগোজ, পোশাক, পিঠা কিংবা সেমাই কেনেন।
পতিতালয়ের বাইরে থাকা আনরেজিস্টার্ড বা ভাসমান পতিতারাও প্রয়োজনীয় জিনিস কেনেন বাইরের দোকান থেকে। আর পরিচিত হলে পল্লীতে এসেও কেনাকাটা করতে দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে পতিতাদের রমজান কিংবা ঈদ খুব একটা খারাপ না কাটলেও আবার খুব একটা ভালোও কাটেনা !
সন্তানকে নিয়ে ঈদে শিশুপার্কে ঘুরতে যাওয়ার সুখ এদেশের কোনো পতিতার কপালের জোটে না…
আরো পড়ুনঃ