পনি দ্য ওরাংওটাং : মানুষ যাকে বানিয়েছে যৌনদাসী

ওরাংওটাং চিনেন? কিছুটা হনুমান আর খানিকটা বানরের মতো দেখতে বিশেষ একটা জন্তু হচ্ছে এই ওরাংওটাং। মালয়েশিয়া আর ইন্দোনেশিয়ায় এদের আদি বসতি হলেও বর্তমান পৃথিবীর শুধুমাত্র ব্রুনাই এবং সুমাত্রা’র ঘন জঙ্গলে এদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

পৃথিবীর সবচেয়ে দু‍ঃখী অথবা দুর্ভাগা ওরাংওটাং এর গল্প বলবো আজ। নাম তার পনি। বিশ্বজুড়ে পনি দ্য ওরাংওটাং নামে পরিচিত সে।

পনি দ্য ওরাংওটাং

অন্যান্য বন্য প্রানীর মতই জঙ্গলে চড়ে বেড়াত শিশু পনি। মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়ে যেত পরম নির্ভরতায়। কিন্তু সেই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি তার জন্যে। জঙ্গল থেকে তাকে অপহরণ করে কিছু স্বার্থান্ধ এবং লোভী নরপিশাচ। অপহৃত পনির জায়গা হয় ইন্দোনেশিয়ার এক পাম বাগানের ভিতরে থাকা পতিতালয়ে।

না, বানরের মত নেচে কিংবা শারীরিক কসরত দেখিয়ে দর্শকের মনোরঞ্জন করার জন্যে নয়। বরং পনিকে ওখানে রাখা হয়েছিলো কিছু বিকৃতমনা মানুষের যৌন চাহিদা মেটানোর জন্যে। ছোট্ট ওরাংওটাংটিকে জোরপ‍ূর্বক বাধ্য করা হয়েছিলো সেক্স স্লেভ হতে !

পনি দ্য ওরাংওটাং

যৌনপল্লী থেকে উদ্ধার হওয়া পনি দ্য ওরাংওটাং

পনির সমগ্র শরীরের লোম শেভ করে তাকে লোহার শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হত সেই যৌনপল্লীর একটা বদ্ধ ঘরে। ওই অবস্থায় একের পর এক খদ্দের এসে নিজের খুশিমত ভোগ করত পনির শরীরটা। এভাবে প্রায় ৩-৪ বছর একটানা নির্যাতন চলে পনির উপর।

২০০৩ সালে ইন্দোনেশিয়ার এক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থার কানে আসে পনির কথা। তারা স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর সহায়তায় পনিকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আসে। এরপর প্রায় ১০ বছর যাবৎ পনির মানসিক ও শারীরিক সুস্থ্যতার জন্যে নিরলস কাজ করে যায় সংস্থাটি। ২০১৪ সালে পনি জঙ্গলে বসবাস করার জন্যে সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে গেলে তাকে ব্রুনাই’র একটি রেইনফরেস্টে ছেড়ে দেয়া হয়।

দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, পনিকে যখন ছেড়ে দেয়া হয়, তখন সে ওরাংওটাংদের মত দৌড়ঝাপ দিয়ে এ গাছ থেকে ও গাছে উঠে পালিয়ে যায়নি। সে আসলে জানতই না যে কিভাবে গাছে চড়তে হয়। ওরাংওটাংয়ের আর কোনো বৈশিষ্ট্যই তার মাঝে ছিলো না। একেবারে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে গেছিলো প্রাণীটি ! পরবর্তীতে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

ওরাংওটাং পনি’র গল্প হয়ত এখানেই শেষ। কিন্তু এ ঘটনাটি আসলে এখানেই শেষ নয়। পনি’র ব্যাপারটি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নজরে আসার পর জানা যায়, গত দশবছরে প্রায় ২০,০০০ ওরাংওটাং প্রাণীকে বন থেকে অপহরণ করা হয়েছে শুধুমাত্র যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। বিশ্বের নানান দেশের অন্ধকার গলিতে যৌনকর্মী হিসেবে জীবন কাটাচ্ছে ওরাংওটাংরা ! একটু অন্যরকম যৌনসুখের জন্য এতটাই নিচে নেমে গেছে আমাদের সভ্যতা !

আরো পড়ুনঃ

Leave a Reply