আফ্রিকান ঐতিহ্যবাহী ‘অ্যান্টোগো’ উৎসবের আদ্যোপান্ত

আফ্রিকা পৃথিবীর বুকে প্রবাহমান এক বিস্ময়ের নাম। আফ্রিকা মহাদেশ প্রাকৃতিক ভৌগলিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন দিক দিয়ে অন্য যেকোনো মহাদেশের তুলনায় বিস্ময়ের কেন্দ্রবিন্দু। আফ্রিকা মহাদেশের ঐতিহ্য নিয়ে অনেকসময় আমরা অনেক ধরনের আগ্রহ প্রকাশ করে থাকি। তাদের সংস্কৃতিতে যেমন বৈচিত্র রয়েছে, তা অন্যান্যদের চাইতে বেশ ভিন্ন।

মাছ ধরতে ভালোবাসেন অনেকেই। মাছ ধরাকে অনেকে ভাবেন শিল্প। মাছ ধরার মধ্যে দিয়ে ছুটি উৎযাপন অনেকের কাছেই স্বাচ্ছন্দ্যের। মাছ ধরার জন্য হয়ে থাকে অনেক ধরনের উৎসব। আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে মাছ ধরার জন্য এক একটি ঐতিহ্যগত অনুষ্ঠান রয়েছে। আফ্রিকা মহাদেশের প্রায় সব দেশেই এই প্রথা বা উৎসবগুলো পালন করা হয়। তেমনি একটি উৎসব হলো “Antogo” উৎসব। এই উৎসবের প্রচলন হয়েছিলো আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্গত দেশ মালি -তে।

Antogo fishing

Antogo fishing frenzy

প্রতিবছর মে মাসের যেকোনো একটি শনিবারে তিথি অনুযায়ী পালন করা হয় এই উৎসব। উৎসবটির কেন্দ্রবিন্দু হলো মালির বাম্বা গ্রাম। এই গ্রামের একটি হ্রদের মাছ এইদিন পুরোপুরি নিঃশেষ হয়ে যায় মাত্র ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে। নিজের চোখে না দেখলে কেউই বিশ্বাস করবেনা কিভাবে ১৫-২০ মিনিটের ভিতর একটি বেশ বড় হ্রদের মাছ শেষ হয়ে যায়। প্রায় ২ শতাব্দী ধরে চলে আসা এই উৎসবে বাম্বা গ্রাম ছাড়াও আশেপাশে থাকা বিভিন্ন গ্রামের শত শত মানুষ এইদিন এখানে চলে আসেন মাছ শিকারের জন্য। নির্দিষ্ট সময়ে একত্রিত হবার পরে সবাই হ্রদের পাশে জড়ো হয়ে থাকে। এরপরে আশেপাশে যত গ্রামের মোড়ল বা গ্রাম প্রধান রয়েছে তাদেরকে জড়ো করা হয় তাদের ভিতর থেকে দলপতি নির্বাচনের জন্য। সেখানে আসা জনগণের উপর ভিত্তি করে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্মতি পাওয়া ব্যক্তিকে দলপতি নির্বাচন করা হয়। দলপতি নির্বাচন করার পর দলপতি একটি কাঠের নৌকা দিয়ে হ্রদের ঠিক মাঝে চলে যান। একটি ফাকা গুলি ছুড়ে এই উৎসবের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুর করে দেন তিনি। এখন গুলি ছোঁড়া হলেও আগেকার সময় শিঙায় ফুঁক দেয়া হত।

শিঙাতে ফুঁক দেয়া কিংবা গুলি ছোঁড়ার সাথে সাথে মানুষের ঢল নেমে আসে হ্রদের উপরে। ছেলে বুড়ো জোয়ান সকলে একযোগে বল্লম, খাঁচা সহ আরো বিভিন্ন দেশীয় যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মাছ ধরার জন্য। এই উৎসবের একটি অন্যতম খারাপ দিক হলো একে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দ্বন্দ্ব এবং পরে যা গ্রামে গ্রামে সংঘর্ষ তৈরি করে। তবে এই হ্রদের মাছ ধরেই এখানকার মানুষ খাদ্য মজুদ করে রাখে। যখন খাদ্যাভাব হয়। খরা সহ প্রাকৃতিক দ‍ূর্যোগে সবাই আক্রান্ত তখন সেখানকার লোকদের মাঝে এই সঞ্চিত মাছ হয়ে ওঠে অমৃত।

এখানকার মানুষরা মনে করেন এখানে অর্থাৎ এই হ্রদে তাদের দেবতারা স্বর্গের অন্যতম স্থান বানিয়েছেন। যার ফলে এখানে অনেক শুভ আত্মা বাস করে। এসব শুভ আত্মারা তাদের জন্য এই মাছ মজুদ রাখে। এখানে একটি বিষয় বেশ বিস্ময়কর। তা হলো মেয়েরা এই হ্রদের ত্রিসীমানা তে পা রাখতে পারে না এই উৎসব শুরুর ১ সপ্তাহ আগে থেকে এবং উৎসব শুরুর ২ সপ্তাহ পর পর্যন্ত। এমনকি মেয়েরা এখানে মাছ পর্যন্ত ধরতে পারেনা। গ্রামবাসীর ধারণা, মেয়েরা যদি এখানে মাছ ধরে তাহলে শুভ আত্মারা অসন্তুষ্ট হবে। তারা তখন হ্রদ থেকে চলে যাবে। তাই মেয়েদেরকে মাছ ধরা এমনকি উৎসবের সময় হ্রদের ত্রিসীমানায় আসতে দেয়া হয় না। এভাবেই আফ্রিকার মালি তে প্রতিবছর পালিত হয় তাদের অন্যতম প্রধান উৎসব “অ্যান্টোগো” উৎসব।

Leave a Reply