ইদানিং হয়ে এক বিরাট ঝামেলা। ফেসবুকে একটুআধটু ভিডিও ছাড়লেই সেটা ভাইরাল হয়ে যায়। যে জিনিস যত বেশি “আজাইরা”, যত বেশি ফালতু, সে জিনিস ভাইরালও হয় তত বেশি ! এক-আধ মিনিট ভিডিওর পেছনে কোনো গল্প আছে কিনা, বা ভিডিওতে আমরা যা দেখছি, তা আসলেই সেরকম কিছু কিনা, এসব নিয়ে কোনো প্রকার না ভেবে যার যার মত করেই এখন ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করে ফেলা হয়।
যেহেতু প্লাটফর্মটা ফেসবুক, সেহেতু দেখা যায় সমাজ কিংবা পরিবারের সবচেয়ে অগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ফেসবুকে এসে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়ে যাচ্ছে। যে ব্যক্তির অসহ্য কাজে পরিবার বিরক্ত, সেই ব্যক্তিটাই আবার ফেসবুকে এসে সমাজ বদলে দেওয়ার বাণী প্রসব করে বেড়াচ্ছে।
গতকাল রাত থেকেই এরকম একটা ভিডিও ফেসবুক নিউজফিডে ভেসে বেড়াচ্ছে। সেলফি তোলার সময় এক ভক্তের হাত মাশরাফি তার শরীর থেকে সরিয়ে দিয়েছে। ঘটনা জাস্ট এটুকু। এরপরই ফেসবুকে মাশরাফিকে শূলে চড়ানো শুরু হয়েছে। যারা শূলে চড়াচ্ছেনা, তারা প্রচন্ড দুঃখ প্রকাশ করছে। মাশরাফি হৃদয় ভেঙ্গে দিয়েছে বলে বুক চাপড়াচ্ছে।
এইযে আধামিনিট একমিনিটের ভিডিও দেখে যারা পুরো বিষয়টা নিয়ে মতামত দিচ্ছে। মাশরাফি কতটা খারাপ কাজ করেছে বলে প্রমাণ করতে চাচ্ছে। এদের কাছে কি কেউ বিচার দিয়েছে? যার সাথে ঘটনাটা ঘটছে সে কি কিছু বলেছে? তাইলে হুট করে এসব মানুষ বিচারক সেজে গেলেন কেনো? কারণ এটা ফেসবুক। এখানে যা ইচ্ছা তাই বলা যায়…
আসলে সমস্যাটা বাঙালির মানসিকতার। ঠিক কোন পর্যন্ত এগিয়ে থামা উচিৎ, তারা এটা জানেনা। তারা এটাও বোঝেনা, পাবলিক ফিগার আর পাবলিক প্রপার্টি না। কোনো পাবলিক ফিগারই রাস্তায় বসানো ডাস্টবিন না যে যার যেমন ইচ্ছা সে তেমন ব্যবহার করবে।
এবার মাশরাফির ব্যাপারটাতে একটু আসি। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, ছেলেটা মাশরাফির পিছুপিছু দৌড়ে এসে পিছন থেকে হাত ধরে টানাটানি করে। তবুও মাশরাফি দাঁড়িয়ে ছেলেটিকে সেলফি তোলার সুযোগ দেয়। কিন্তু ছেলেটি এবার ছবি তুলতে গিয়ে মাশরাফিকে জড়িয়ে ধরে, যেটা বেশ অস্বস্তির। তখন মাশরাফি একটু ঝাড়ি দিয়ে ছেলেটির হাতটি সরিয়ে দেয়। তারপর ছেলেটি সেলফি তোলে। ঘটনা হলো এটা। এখানে মাশরাফির অপরাধ কি? জনপ্রিয় ক্রিকেটার বলে কি মাশরাফির অস্বস্তি লাগতে পারে না?
এ তো গেলো মাশরাফির ব্যপার। দর্শক হিসাবে কি কোনো দায় নেই? একজন মানুষের গায়ে হাত দেয়া কতটা সভ্যতার মধ্যে পড়ে? এটা কি একবারো আমরা ভেবে দেখেছি। আপনার সাথে কেউ গায়ে হাত দিয়ে কথা বললে আপনার কি খুব ভালো লাগবে? বিরক্ত হবেন না?
মাশরাফি পাবলিক ফিগার , তাই বলে কি সে পাবলিক প্রপার্টি? তার ইচ্ছা অনিচ্ছা বলে কিছু থাকবেনা। ভালো লাগা খারাপ লাগা বলে কিছু থাকবে না। যার যেমন ইচ্ছা হবে সে তেমন করে ব্যবহার করবে!
আমি মোটেও মাশরাফি ভক্ত না ! আমার লেখার ভক্তরা সবাই ভালোমতই জানেন আমি আহমেদ অরিত্র একজন সাকিব ভক্ত। সত্যি বলছি, একজন সাকিব ভক্ত হিসেবে মাশরাফির আচরণ আমার কাছে মোটেও খারাপ লাগেনি। এজন্য ফেসবুক অসভ্যদের সাথে গলা মিলিয়ে মাশরাফিকে দু চার কথা শুনিয়ে দিতে পারছিনা। দুঃখিত…