বাংলা সিনেমার বর্তমান সাফল্যে অনলাইনে যাদের অবদান

বাংলা চলচ্চিত্র অশ্লীলতার যুগ পার করে এসেছে অনেক বছর হয়। মোটামুটি ২০০৭ এর দিকেই অন্ধকার জগতকে পেছনে ফেলে আস্তে আস্তে মোড় ঘুরতে শুরু করে আমাদের সিনেমা ইন্ড্রাষ্টি। কিন্তু দেশের সর্বস্তরের মানুষজনের কাছে আগের মত আর গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছিলো ন‍া। মানুষ এরকম একটা শ্রেণীবৈষম্য তৈরি করে ফেলেছিলো যে, অমুকের সিনেমা রিকশাওয়ালা দেখবে, তমুকের সিনেমা ড্রাইভার হেল্পাররা দেখবে। অবাঞ্ছিত এই শ্রেণীবৈষম্য দুর হয়ে আমাদের সিনেমাকে ইন্ডাষ্ট্রি এখন অনেকটাই সচল। আর এই ‍সাফল্যের পেছনে যে ফেসবুক এবং কয়েকজন তরুণ জড়িয়ে আছে, তা অনেকেরই অজানা।

ফেসবুকে বাংলা চলচ্চিত্র গ্রুপটির মাধ্যমে বর্তমানে সবাই বাংলাদেশের নতুন পুরান সবধরণের সিনেমা নিয়ে জানতে পারছেন। কিছু সিনেমাপ্রেমী তরুণের হাত ধরে এই গ্রুপটি এতটাই এগিয়েছে যে, দেশীয় কোনো সিনেমা সম্পর্কে জানতে হলে এই গ্রুপেই এখন চোখ রাখতে হয়। আর একমাত্র এখানেই সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। এসবের পেছনে অবদান রাখা কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন। বলতে পারেন, বাংলা সিনেমার বর্তমান সাফল্যের পেছনে অনলাইনে এদের অবদানটাই মূখ্য !

১. ফজলে এলাহী (কবি ও কাব্য) : ‘কবি ও কাব্য’ নামে অনলাইনে সর্বপ্রথম বাংলা সিনেমা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু করেন তিনি। ঠিক যে সময়টাতে বাংলা সিনেমা নিয়ে কথা বললে আশপাশের অনেকে বা‍ঁকা চোখে তাকাতো, ঠিক তখন বাংলা সিনেমার সোনালী অতীত সবার সামনে তুলে নিয়ে আসেন তিনি। ব্লগে “কবি ও কাব্য” নামে লিখতেন। পরে ফেসবুকে আসল নাম নিয়ে ফিরে আসেন। ইউটিউবে “পাপ্পু কবি ও কাব্য” নামেও তাঁর একটি চ্যানেল আছে। বাংলা চলচ্চিত্রের দূর্লভ সব গান এমনকি সিনেমাও পাওয়া যায় এ চ্যানেলটিতে। যদিও তিনি এখন আর আগের মত বাংলা সিনেমা নিয়ে খুব একটা লেখালেখি করেন না।

২. হাবিব উল্লাহ (বিবাহিত ব্যাচেলর) : ব্লগ জামানায় ‘বিবাহিত ব্যাচেলর’ নাম নিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। বাংলা চলচ্চিত্র সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান নিয়ে সমালোচক হিসেবে তিনি সিনেমাপ্রেমীদের কাছে পরিচিত। যদিও তিনি বর্তমানে আগের মত সিনেমা নিয়ে অতটা আগ্রহ দেখান না, লেখালেখিও করেন না। তবে বাংলা চলচ্চিত্রের নত‍ুন দিনের সাফল্যে ‍তার অবদান অনেক।

৩. তানভীর খালেদ (Tanvir Khaled) : অন্তর্মুখী চরিত্র, কোথাও নেই কোথাও নেই টাইপের আরকি ! কিন্তু সব জায়গায়ই আছেন তিনি। বাংলা সিনেমা নিয়ে আলোচনার সবচেয়ে বড় গ্রুপ “বাংলা চলচ্চিত্র” এর ক্রিয়েটর তানভীর খালেদ। বাংলা সিনেমা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করার সবচেয়ে বড় জায়গাটাই তার তৈরি। তার প্রতি বাংলা সিনেমা আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে।

৪. এস রাব্বি (S Rabbee) : রাব্বি হলো “Theatre Thread” এর ফাউন্ডার। তার নির্মিত এ প্রতিষ্ঠানটি বলতে গেলে একদম প্রফেশনাল ভাবেই অনলাইন এবং অফলাইনে বাংলা সিনেমার প্রমোশন চালায়। বর্তমানে আপকামিং বাংলা সিনেমা সংক্রান্ত খবরগুলো সবার আগে দর্শকদের কাছে পৌ‍ঁছে দিতে এস রাব্বি এবং তার প্রতিষ্ঠান অগ্রগামী ভুমিকা পালন করছে।

৫. আব্দুল্লাহ আল মানী (Abdullah Al-Manee) : ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে লেখাপড়া শেষ করে নাম করা কর্পোরেট হাউজে জব করছেন। অবসরের পুরো সময়টা দিচ্ছেন অনলাইনে বাংলা চলচ্চিত্রকে সবার কাছে পৌঁছে দিতে ! সিনেমার প্রতি ভালোবাসা থেকেই একটা সময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রগুলাে নিয়ে লেখালেখি শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তিনি ‘FilmCast’ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে প্রফেশনালি বাংলা চলচ্চিত্র কে পৌ‍ঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন।

৬. রহমান মতি (Rahman Moti) : বর্তমান সময়ে বাংলা সিনেমা নিয়ে সবচেয়ে বেশি লেখালেখি করেন রহমান মতি। তার লেখাগুলে‍া পড়ে বোঝা যায়, সিনেমা দেখার সময় প্রতিটা দৃশ্য এবং প্রত্যেকটা দিকে তিনি খুব সুক্ষ্মভাবে খেয়াল রাখেন এবং তা নিয়ে আলোচনা করেন। একজন বাংলা সিনেমাপ্রেমী হিসাবে তিনি খারাপটাকে সব সময় সমালোচনা করেন। এজন্য বছরখানেক আগে বাংলা সিনেমার একজন প্রভাবশালী নায়ক তাকে হুমকিও দিয়েছিলো বলে কথিত আছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, বাংলা সিনেমা রহমান মতির কাছে আবেগের জায়গা। হৃদয় দিয়ে এরকম নিঃস্বার্থভাবে বাংলা চলচ্চিত্রকে তুলে ধরার নজির খুব কমই আছে। রহমান মতি একজন সত্যিকারের সিনেমাবোদ্ধা !

৭. মালিক বাহাদুর (Malik Bahadur) : মালিক বাহাদুর বাংলা চলচ্চিত্রের দৈনিক ম্যাগাজিনের মত। তাঁর ফেসবুক আইডিতে বাংলা সিনেমার বাইরে আর কিছুই নেই। বাংলা সিনেমার খবরাখবর জানতে মালিক বাহাদুরের আইডি ফলো করলেই হবে। আর কোথাও যেতে হবে না।

৮. হিমেল হিমু (হিমু সিনেমাখোর) : বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ও লেখালেখি করা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন এই হিমেল হিমু। তিনি ‘হিমু সিনেমাখোর’ নামেই অধিক পরিচিত। একসময় ব্লগে বাংলা সিনেমা নিয়ে অনেক লিখেছেন। মেধাবী এই মানুষটির রিভিউ লেখার হাত খুবই দারুণ। ফেসবুকে এখন হিমেল হিমু নামে আইডি চালান তিনি।

৯. সৈয়দ নাজমুস সাকিব (Syed Nazmus Sakib): সৈয়দ নাজমুস সাকিব সিনেমা নিয়ে এ পর্যন্ত দুটি বই লিখেছেন, ‘সিনেম্যান’ এবং ‘সিনেমামা’। অনলাইনে বাংলা সিনেমার প্রচারণার বর্তমান প্রসারে দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি অসাধারণ ভূমিকা পালন করে আসছেন।

এখানে আমরা যে ৯ জনকে নিয়ে কথা বললাম, মুলত এরাই বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথমসারির অ্যাক্টিভিস্ট। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের টাইমলাইনে, অথবা সিনেমা সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রুপে তারা অনেক বছর যাবৎ লেখালেখি করে আসছেন। এছাড়াও তাদের মত আরো অনেক সিনেমাপ্রেমীই রয়েছেন। একটা কথা আপনাকে ‍মানতেই হবে, এই মানুষগুলো না থাকলে বাংলা চলচ্চিত্র আজকের এই সুন্দর অবস্থানে ফিরে আসতে পারত না। আপনি আর আমি হিন্দি সিনেমা নিয়েই পরে থাকতাম…

ধন্যবাদ জানাই সিনেমাপাগল এই মানুষগুলোকে। ভালোবাসা রইলো !