মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা অঙ্গরাজ্যের একটি শহর লাস ভেগাস। সারাবিশ্বে এটি প্রমোদ নগরী হিসেবে বিখ্যাত। জুয়া খেয়ার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় ক্যাসিনো এবং সারাবিশ্বের বৃহত্তম বিলাসবহুল হোটেলগুলোর অধিকাংশই লাস ভেগাসে অবস্থিত। এছাড়াও প্রাপ্ত বয়স্ক বিনোদনের তীর্থ হিসেবেও লাস ভেগাস বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এখানে আসে…
জুয়া পতিতাবৃত্তি বা অর্থ পাচারের মত বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিউইয়র্ক ও শিকাগোর মাফিয়ারা আমেরিকার মোহাডি মরুভূমিতি গড়ে তোলে এই পাপের শহর। শুরুর দিকে এ শহর যেনো অপরাধীদের তৃণভূমিতে পরিণত হয়েছিল। স্পেনিশ ভাষায় লাস ভেগাস অর্থ তৃণভূমি। ১৯০৫ সালে লাস ভেগাস শহর এর জন্ম হলেও চল্লিশের দশক পর্যন্ত এর অগ্রগতি ছিল খুবি সামান্য। বিগত শতকের পঞ্চাশের দশকে লাস ভেগাস রাতারাতি বদলে যায়। সেসময় শিকাগো মাফিয়ারা অবৈধ পথে কামানো তাদের বিপুল অর্থ লুকানোর জন্য নতুন কোনো পথ খুঁজছিল, তখন তাদের নজরে আসে আমেরিকার মহাবি মরুভূমিতে উদীয়মান এক শহর লাস ভেগাস।
বলতে গেলে তখনো লাস ভেগাসের কোন নিয়ম কানুন ছিল না। তাই যে যেভাবে খুশি সেভাবে টাকা কামাচ্ছিল। তখন লাস ভেগাসের স্থানীয় বাসিন্দারাও এ ধরনের পরিবর্তন সাদরে গ্রহণ করে, কারণ এতে করে তাদের নিজেদের ব্যবসা ও দিন দিন বাড়তে শুরু করে। এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে শিকাগো মাফিয়াদের কালো টাকা সাদা করার চেষ্টায় লাস ভেগাসের চেহারাই বদলে দেয়। শিকাগো মাফিয়ারা লাসভেগাসের ব্যবসায় যাওয়ার আগেই সেখানে আস্তানা গড়ে তুলেছিল নিউ ইয়র্কের মাফিয়া গোষ্ঠী। সেসময় নিউ এক মাফিয়ারা এমন সব ব্যবসা করছিল, যা পুরো আমেরিকা জুড়ে নিষিদ্ধ হলেও লাস ভেগাসের কোন আইন কানুন না থাকায় সেখানে তা বৈধ হিসেবে গণ্য হতো।
নিউইয়র্ক মাফিয়ারাদের হোটেল ও ক্যাসিনো ব্যবসা বছরে প্রায় ৫ কোটি ডলার মুনাফা করতো। নিউইয়র্ক ও শিকাগো মাফিয়া মধ্যেকার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের কারণে দুই অপরাধী চক্র একসাথে লাস ভেগাসে তাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে শুরু করে। ফলে বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ লাস ভেগাসে এসে বৈধ সম্পত্তিতে পরিণত হতে থাকে। আর এর ফলে মানিলন্ডারিং অর্থ পাচারের রাজধানীতে পরিণত হয় লাস ভেগাস।
নিউইয়র্ক ও শিকাগো মাফিয়া একত্রে ব্যবসা শুরু করার দুই বছরের মধ্যে তারা লাস ভেগাসে বহু বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গরে তুলে। চার কিলোমিটার দীর্ঘ নেবাডা মরুভুমিতে চমকপ্রদক বিভিন্ন ভবন হোটেল ও ক্যাসিনো গড়ে তুলে তারা যে শহরের জন্ম দেয়, সেটি আজকে লাস ভেগাস স্ট্রিপ নামে পরিচিত।
১৯৫০ দশকের শেষের দিকে সব প্রায় ৮০ লাখের চেয়ে বেশী লোক মরুভুমিতে গড়ে ওঠা নতুন এই শহরে ঘুরতে আসে। এই বিপুল পরিমাণ পর্যটক লাস ভেগাসের ক্যাসিনোতে প্রায় ২০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে। তখন মাফিয়ারা এসব ক্যাসিনো গুলোতে জুয়ার পাশাপাশি সকল ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা চালু করে। লোক সমাগম আরও বাড়াতে তারা তৎকালীন সময়ের বড় বড় হলিউড তারকাদের আমন্ত্রণ জানায় এসব ক্যাসিনো গুলোতে। এভাবে লাস ভেগাস এক সময় পরিনত হয় হলিউড তারকাদের মিলনমেলায়। এসবের আড়ালে তৎকালীন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় দুই মাফিয়া ডন নতুন নতুন অর্থ পাচারের উপায় বের করতে থাকে। একসময় লাসভেগাসের জুয়ার ব্যবসা তৎকালীন সময়ের খনিজ তেল শিল্পের চেয়েও অধিক মুনাফা অর্জন করতে শুরু করে।
লাস ভেগাস শহরের আসল রূপ দেখা যায় রাতে, প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ জনসংখ্যার এ শহর যেন কখনো রাতে ঘুমায় না। প্রতিবছর প্রায় ৪ কোটিরও বেশি লোক এখানে ভ্রমণের জন্য আসে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবৈধ টাকায় মরুভূমির মাঝে গড়ে তোলা এই পাপের শহর বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ধনকুবেরদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।