বুটস্ট্র্যাপ প্যারাডক্স : ভবিষ্যৎ থেকে অতীতে

প্যারাডক্স ব্যাপারটি বেশিরভাগ মানুষের কাছেই অস্পষ্ট। পৃথিবীর বিখ্যাত কিছু প্যারাডক্স আছে যা দিয়ে সহজেই মানুষের চিন্তায় মাথা ঘুরিয়ে দেয়া যায়। এর মধ্যে অন্যতম হলো বুটস্ট্র্যাপ প্যারাডক্স (bootstrap paradox)। তার আগে চলুন জেনে নেই প্যারাডক্স ব্যাপারটি আসলে কি?

প্যারাডক্স

উইকিপিডিয়া অনুযায়ী হেঁয়ালি (ইংরেজি – Paradox, গ্রীক – παράδοξος) বলতে একটি আংশিক সত্য বিবৃতি বা প্রস্তাবনা বুঝায়।  যা সাধারণ চিন্তাধারার সাথে একটি বিরোধের সৃষ্টি করে। যা যৌক্তিকভাবে সত্য নয়,আবার মিথ্যাও নয়। অন্যভাবে বলতে গেলে প্যারাডক্স হচ্ছে সে ধরনের বাক্য বা উক্তি, যা থেকে অনন্য কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায় না। বরং এ ধরনের সমস্যার বিবরণগুলো দুটি পরস্পরবিরোধী সমাধান তৈরি করে, যার একটি সত্য হলে অন্যটি সম্ভব না। কিছু প্যারাডক্স আছে যাদের কোনো সমাধান নেই, আবার কিছু আছে যাদের অত্যন্ত জটিল গাণিতিক এক দার্শনিক সমাধান আছে। একটি উদাহরন দেই, একটা কাগজে পরপর দুইটি লাইন আছে এরকম:

“পরের লাইনটি মিথ্যা। প্রথম লাইনটি সত্যি নয়”

একে বলা হয় ডাবল লায়ার প্যারাডক্স। প্রথম লাইন অনুসারে পরের লাইন মিথ্যা এবং পরের লাইন অনুসারে প্রথম লাইন মিথ্যা। তাহলে এখানে আসলে সত্য কোনটি বা মিথ্যাই কোনটি। মূলত এই জটিল ব্যাপারগুলোই প্যারাডক্স হিসেবে পরিচিত।

বুটস্ট্র্যাপ প্যারাডক্স

বুটস্ট্র্যাপ নামটা সবচেয়ে বেশি পরিচিত ওয়েব ডিজাইনারদের কাছে। বুটস্ট্র্যাপ শব্দটির অর্থ জুতার ফিতা। ইংরেজি প্রবাদ ‘Pulling yourself by bootstrap‘ তথা নিজের জুতার ফিতা ধরে নিজেকে টেনে তোলা থেকেই এর এই নামকরণ করা হয়েছে। বুটস্ট্র্যাপ প্যারাডক্স অনেক ক্ষেত্রে  অন্টোলজিক্যাল প্যারাডক্স(ontological paradox) বলাহয়। একে  ইনফরমেশন প্যারাডক্স(Information paradox) নামেও পরিচিত। এটির সাথে টাইম ট্র্যাভেলের সম্পর্ক রয়েছে। গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স নামেও একটি বিখ্যাত প্যারাগ্রাফ রয়েছে । কিন্তু এটি গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্সের বিপরীত। এতে অতীতে গিয়ে কোনো ঘটনার পরিবর্তন করা হয় না। উলটো ভবিষ্যত থেকে কোনো তথ্য অতীতে নিয়ে আসা হয়, যা পরবর্তীতে কাজে লাগানো হয়। তখন প্রশ্ন ওঠে, তথ্যটি আসলে কোথা থেকে এসেছে।

একটা উদাহরন দিয়ে বোঝানো যাক। মনে করুন আপনি ২০২০ সালে আপনি দেশের একজন সেরা লেখক । আপনি আপনার সবচেয়ে বিখ্যাত বই কোন দোকান থেকে কিনলেন। সেটি নিয়ে টাইম ট্র্যাভেল করে আপনার যুবক বয়সের সময়ে গেলেন । তারপর নিজেকে নিজেই বই দিয়ে এলেন। এই বই দেখেই যুবক (আপনি নিজে ) বইটি লেখে প্রকাশনীতে দিয়ে দিলেন । বিখ্যাত বই প্রকাশ পেল আর বিখ্যাত হয়ে গেলেন। এখন প্রশ্ন আসে তাহলে বই এর মূল রচয়িতা কে?

প্যারাডক্সগুলো ব্যাবহার করে বিভিন্ন দেশে কিন্তু চমৎকার কিছু মুভি , সিরিজ বা ডকুমেন্টরী তৈরী করেছে। হলিউডের প্রিডেস্টিনেশন (Predestination) মুভিটি দেখে ফেলতে পারেন, এছাড়াও নেটফ্লিক্স এর বিখ্যাত Dark সিরিজটাতেও বুটস্ট্র্যাপ প্যারাডক্সের ব্যাবহার হয়েছে। উপরে যে বই এর উদাহরনটি দেয়া সেটি মূলত এই সিরিজের কন্সেপ্ট থেকেই লেখা হয়েছে। এছাড়াও ডিসকভারির প্যারাডক্স সংক্রান্ত বেশকিছু ডকুমেন্টরী রয়েছে। যা দিয়ে সুন্দর ভাবে সজানো হয়েছে প্যারাডক্সের গল্পগুলো ।