বাংলাদেশের ভাসমান পেয়ারা বাজার

যদি থাইল্যান্ডের ফ্লোটিং মার্কেটে কখনো গিয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের দেশের ভাসমান পেয়ারা বাজারকেও এদিক থেকে কোনো অংশে কম মনে হবেনা !

ভাসমান পেয়ারা বাজার পরিচিতি

বাংলাদেশের ভাসমান পেয়ারা বাজার বসে দক্ষিণাঞ্চলের ঝালকাঠি জেলা ও স্বরূপকাঠি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। এরমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ভিমরুলি, আটঘর, কুড়িয়ানা বাজার। প্রতিদিন কয়েক হাজার মন পেয়ারা কেনাবেচা হয় এই অঞ্চলে। দূর দুরান্ত থেকে নদীপথে পাইকাররা এসে এখানে পেয়ারা কিনে। এই এলাকায় রয়েছে অসংখ্য পেয়ারার বাগান। চাষীরা সরাসরি বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারদের কাছে বিক্রি করে। প্রতি বছরের জুলাই, আগষ্ঠ, সেপ্টেম্বর এই মৌসুমে কয়েকশ কোটি টাকার পেয়ারা উৎপাদন ও কেনাবেচা হয়।

ভিমরুলি হাট খালের একটি মোহনায় বসে। তিনদিক থেকেই এই খালটি খোলা আর প্রশস্ত। ভিমরুলি গ্রামের আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য পেয়ারা বাগান।পেয়ারার মৌসুম শেষ হলে আসে আমড়ার মৌসুম। এ অঞ্চলে আমড়ার ফলনও সর্বত্র। আর সবশেষে আসে সুপারি। একটু কম হলেও বছরের অন্যান্য সময়ও ব্যস্ত থাকে এই হাট। ফল ছাড়াও এখানের প্রধান পণ্য বিভিন্ন রকম সবজি। একটি ভাসমান বাজার ভ্রমনের জন্য এখন অনেক পর্যটকই ছুটে বেড়ান ভিমরুলি ঘুরতে।

ভাসমান পেয়ারা বাজার

Floating Guava Garden in Bangladesh

ভাসমান পেয়ারা বাজার ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময় জুলাই থেকে আগস্ট মাস। এই দুমাস প্রায় প্রতিদিনই এই মেলা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলে।

যাতায়াত ব্যবস্থা

ঢাকা থেকে সড়ক ও নৌপথ দুভাবেই যাওয়া যায়। সড়ক পথে ঢাকার গাবতলী থেকে বরিশালের বাস ছাড়ে, ভাড়া ৪০০ টাকা। এছাড়া আপনি মাওয়া যেয়ে লঞ্চে বা স্পীড বোটে ওপাড়ে যেয়ে বিআরটিসি বাসে করে বরিশাল যেতে পারবেন। বরিশাল এর নতুল্লাবাদ থেকে বাসে অথবা সিএনজি করে যেতে হবে বানারিপাড়া। সিএনজিতে ভাড়া নিবে ৪০-৫০ টাকা। তারপর সেখান থেকে নসিমনে ১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে যাবেন কুড়িয়ানা। একটু হেঁটে একটা ব্রীজ পাড় হয়ে আবার অটো করে ৫ টাকা ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন আটঘর ও কুড়িয়ানা বাজারে।আর ভিমরুলি যেতে চাইলে বানারিপাড়া থেকে নৌকা বা ট্রলারে যাওয়াই ভালো।

অথবা নৌপথে ঢাকার সদরঘাট ঠেকে প্রতিদিন পিরোজপুর/বরিশাল এর লঞ্চ ও ষ্টীমার ছাড়ে বিকেল ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত। ডেকের ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা আর কেবিন সিঙ্গেল ৭০০ থেকে ১০০ টাকা এবং ডাবল ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। আপনি পিরোজপুরের হুলার হাট নেমে চলে যাবেন বানারিপারা। বানারিপারা থেকে উপরে উল্লেখিত নিয়মে যেতে পারেন। অথবা এখান থেকেই ট্রলার রিজার্ভ করে নিতে পারেন। ভিমরুলি, আটঘর, কুড়িয়ানা সহ আরো অনেক ছোট বাজার ও বাগান ঘুড়িয়ে আনার জন্য ৫০০-৭০০ টাকা ভাড়া নিবে। ছোট ট্রলারে আর বড় ট্রলার ১২০০-১৫০০ টাকা। অবশ্যই দামাদামী করে ভাড়া ঠিক করবেন।

ভাসমান পেয়ারা বাজার

Heaven of Guava, Bangladesh

কোথায় থাকবেন?

আপনি দিনে যেয়ে দিনেও ফিরে আসতে পারেন। আর রাত্রিযাপন করতে চাইলে বরিশাল নতুল্লাবাদ চলে আসতে পারেন। অথবা ঝালকাঠি শহরে রেস্ট হাউসে গিয়েও উঠতে পারেন। মানসম্মত কয়েকটি হোটেলের মধ্যে কালিবাড়ি রোডে ধানসিঁড়ি রেস্ট হাউস, বাতাসা পট্টিতে আরাফাত বোর্ডিং, সদর রোডে হালিমা বোর্ডিং উল্লেখযোগ্য। ভাড়া ১০০ থেকে ২৫০ টাকা।

খাবার ব্যবস্থা

ভিমরুল, আটঘর, কুড়িয়ানা বাজারের পাশেই মোটামুটি মানের খাবারের হোটেল আছে। অথবা জেলা সদরে ফিরে এসেও খাওয়া-দাওয়া সেরে নিতে পারেন।

পাশ্ববর্তী অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

ভাসমান পেয়ারা বাজার ভ্রমণের পাশাপাশি বরিশালের ঐতিহ্যবাহী গুঠিয়া মসজিদ ঘুরে আসতে পারেন। সাথে দুর্গাসাগর দিঘী। বানারিপারা থেকে বরিশাল আসার পথে সড়কের পাশেই অবস্থিত এই দুটি স্থান।

টিপসঃ

  • গ্রুপ করে গেলে ভালো।
  • নৌপথে যাওয়াই ভালো সড়ক পথ থেকে।
  • রেইনকোট, ছাতা নিয়ে যাবেন।
  • বাগানে ঢুকে পেয়ারা ছিড়বেন না।
  • আমাদের প্রকৃতি রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই। তাই কোনো চিপস, চানাচুর বা পানির বোতল নদীতে ফেলবেন না।

যারা এখনো আমাদের দেশের এই অসাধারণ সৌন্দর্যপূর্ণ ভাসমান পেয়ারা বাজারটি দেখেননি, তারা অবশ্যই এবারের ঈদে একটা ছোটখাট ট্রিপ দিয়ে ফেলুন। আশা করছি, সময়টা মন্দ কাটবেনা। ভ্রমণের জন্য দেশের ভেতর এটা আমাদের দেখা অন্যতম সেরা স্থানগুলোর একটা !

Leave a Reply