সিনেমায় নয়, বাস্তবেও রয়েছে থ্রি ইডিয়টসের মত এক স্বপ্নের স্কুল !

থ্রি ইডিয়টস মুভিটা আমরা প্রায় সবাই দেখেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমার বেশ পছন্দের একটা মুভি এটা। কিন্তু আমরা কতজন জানি যে ওই মুভির শেষের দিকে যেই স্কুলটা দেখানো হয়েছিলো, সেরকম একটা থ্রি ইডিয়টস স্কুল সত্যি সত্যিই আছে !

ওই স্কুলের ফাউন্ডার কাম প্রিন্সিপালের নাম কিন্তু ফুংসুক ওয়াংরু না, তার নাম সোনাম ওয়াংচু। সোনাম সাহেব ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের বর্ডার এলাকায়, লাদাখ নামক স্থানে এই স্কুলটা তৈরী করেছেন। এখানে ভর্তি হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে, মাধ্যমিকে ফেইল করা ! হ্যাঁ, শুধুমাত্র তারাই এখানে ভর্তি হতে পারবে, যারা এসএসসিতে এক বা একাধিক বার ফেইল করেছে !

এখানে সাধারণ আর দশটা স্কুলের মতো বইয়ের পাতা মুখস্ত করানো হয় না। এখানে সবকিছু হাতে-কলমে শেখানো হয়। এই স্কুলটা চলে একটা স্বাধীন দেশের মত। এরা নিজেরাই নিজেদের সব কাজ করে। একটা দেশে যেমন নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করা হয়, তেমনি এখানেও প্রতি ২ মাস পরপর নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে স্কুলটা পরিচালনা করা হয়। এখানে ক্ষমতাসীন দল, বিরোধীদল আর সাধারণ জনগণ সবাই এই স্কুলের স্টুডেন্ট। একটা দেশের যেমন নিজস্ব রেডিও চ্যেনেল এবং সংবাদপত্র থাকে, তেমনি এরাও নিজেরাই নিজেদের রেডিও চ্য‍ানেল এবং সংবাদপত্র তৈরী এবং বিক্রি করে।

এখানকার স্টুডেন্টরা নিজেদের উৎপাদিত ফল-মূল নিজেরাই জ্যাম বা জেলিতে পরিণত করে, যাতে বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায়। এই কাজের সময় তারা বিভিন্ন ফলের নিউট্রিশন ভ্যালু সম্পর্কে ধারনা পায়। নিজেদের উৎপাদিত ফল-মূল এবং শাক-সবজি স্থানীয় বাজারে বিক্রি কর‍ার মাধ্যমে এরা ইকোনোমিক্স এবং মার্কেটিং শিখতে পারে। একইসাথে এসব বিক্রি করে তারা যেই অর্থ উপার্জন করে, তা দিয়ে বছর শেষে স্কুলের সবাই মিলে ইন্ডিয়ার অন্যান্য রাজ্যতে ঘুরতে যায়। এর মাধ্যমে এরা ভূগোল শিখতে পারে।

শুধু তাই না, এরা নিজেদের টেকনোলজিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। নিজেদের ক্লাস রুম এরা নিজেরাই মাটি দিয়ে তৈরী করে। এবং এমনভাবে তৈরি করে যেনো বাইরের টেম্পারেচার যখন (-১৫) ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড, ঠিক তখনি ক্লাসরুমের ভিতরের টেম্পারেচার থাকে +১৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড ! ব্যাপারটা মজার না?

সাম্প্রতিক সময়ে তারা এমন একটা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে, যার মাধ্যমে বরফ গলা পানি থেকে এরা নতুন করে বরফ তৈরী করতে পারে এবং সেটা থেকেই তারা কৃষিকাজ থেকে শুরু করে সবধরনের কাজে পানি ব্যাবহার করতে পারে। এই পদ্ধতিটার নাম ‘আইস স্টুপার্স’।

বড় বড় বিজ্ঞানবিদরা যখন গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে প্রচন্ড বিচলিত, তখন এই মেট্রিকে ফেইল করা বাচ্চারা কি সহজ সমাধান করে বসে আছে ! ভাবা যায় !!

Leave a Reply