বিশ্বের কয়েকটি অদ্ভুত চাকরি !

আমাদের দেশে বেকারের সংখ্যা নেহায়েত কম না। প্রায় ত্রিশ লাখ বেকারের এই দেশে বেকারত্বের প্রধান কারণ হলো যথেষ্ট পরিমাণ চাকুরী ক্ষেত্রের অভাব। অথচ বিশ্বে এমন কিছু দেশ আছে যেখানে এমন কিছু অদ্ভুত চাকরির ক্ষেত্র আছে, যাতে প্রয়োজন হয়না কোনো পড়াশুনার সার্টিফিকেট, ডিগ্রি কিংবা কারিগরী প্রশিক্ষণ ! এসব চাকরি করে টাকা উপার্জন তো দূরে থাক, এসব কাজও যে পেশা হতে পারে, সেটাই আমাদের চিন্তার বাইরে। আসুন জেনে নেওয়া যাক বিশ্বজুড়ে এরকমই কিছু অদ্ভুত চাকরি বা পেশা সম্পর্কে !

খাওয়ার চাকরি

অবাক হলেন? জ্বী হা, শুধুমাত্র খাওয়ার মাধ্যমেই আপনি মাসে প্রায় দশ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারেন ! Mukbang নামক একটি অনলাইন অ্যাক্টিভিটিতে বিভিন্ন পদের খাবার খেয়ে তার স্বাদ এবং গুণ সম্পর্কে ভিউয়ারদের ধারণা দেওয়া হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় এই অনলাইন অ্যাক্টিভিটির মাধ্যমে শুধু খাবার খেয়েই আয় করা সম্ভব প্রায় আট লক্ষ টাকা। এছাড়াও বিদেশে বিভিন্ন বড় বড় রেস্টুরেন্টে এমন কাউকে রাখা হয়, যার কাজ হলো সব খাবার সার্ভ করার আগে টেষ্ট করা এবং স্বাদ বাড়াতে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া।

বিশ্বের নানান দেশের খাবার খেয়ে ভিডিও করা দুজন ইউটিউবার মার্ক উইন্স (Mark Wiens) এবং ফুড রেঞ্জার চ্যানেলের (The Food Ranger) মালিক ট্রেভর জেমস (Trevor James) হতে পারেন তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ !

বগল শোকার চাকরি বা ডিওডোরেন্ট টেস্টার

ঘামের গন্ধ শুকতে কার ভালো লাগে ! কিন্তু এই পেশার মানুষদের দিনের পুরো সময়টা অন্যের শরীরের গন্ধ পরীক্ষা করে কাটাতে হয়। গন্ধ শুকে কোন ডিওডোরেন্ট ফ্লেবারটি আপনার জন্য ভালো হবে এটাই তারা বাছাই করেন। ডিওডোরেন্টের গন্ধ সবচেয়ে বেশি বোঝা যায় বগল আর গলায়। তাই এ পরীক্ষায় পরিক্ষকদের মূলত বগলের গন্ধই বেশি শুকতে হয়। একবার দুইবার না, বরং বগলে গন্ধ থাকা অবস্থায়, স্বাভাবিক অবস্থায় এবং ডিওডোরেন্ট লাগানোর পর বেশ কয়েকবারই গন্ধ শুকে তারা সেই ডিওডোরেন্টের ব্যাপারে কোম্পানিকে প্রতিবেদন জমা দেন এবং তার উপর ভিত্তি করেই ডিওডোরেন্টটি বাজারে ছাড়া হয়।

কান্না করাই যখন পেশা !

আমাদের মনে অনেক সময়ই প্রশ্ন জাগে যে, আমি মারা গেলে কি কেউ কাঁদবে? (!) কিংবা ধরুন কেউ একজন মারা গেলো, কিন্তু তার এই প্রস্থানে কান্না করার মত কোনো মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না। এই অদ্ভুত সমস্যায় আপনি ভাড়া করতে পারেন প্রফেশনাল কাঁদুনেদের ! যাদের কাজই হলো মানুষের মৃত্যর পর মৃতবাড়িতে গিয়ে কান্নাকাটি করা। এবং সেই কাঁদার পরিবর্তে অর্থ সংগ্রহ করা। এবং এটাই তাদের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। আফ্রিকা, চায়না সহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এরকম পেশার মানুষ পাওয়া যায়।

ন্যুড মডেল

এই পেশাটি হচ্ছে সাহসী এবং আত্মবিশ্বাসীদের জন্য। যারা ঘন্টাব্যাপী একই ভঙ্গিতে নগ্ন হয়ে বসে থাকতে পারবেন। চিত্রশিল্পীদের আঁকাআঁকির একটা অংশ হচ্ছে মানবদেহ আঁকা। তার জন্য প্রয়োজন হয় নারী এবং পুরুষ ন্যুড মডেল। এবং এই কাজের জন্য তারা বেশ মোটা অংকের অর্থও পেয়ে থাকেন। বিভিন্ন গল্প কিংবা সিনেমাতেও এই পেশাটির উল্লেখ রয়েছে।

লাইনে দাঁড়ানোর অদ্ভুত চাকরি

জাপানে এই প্রফেশনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিছু মানুষ টাকার বিনিময়ে আপনার হয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবে ঘন্টার পর ঘন্টা।

ধাক্কা মেরে টাকা উপার্জন

জাপান এবং নিউ ইয়র্কে রেলষ্টেশনের ভীরের সময় প্রফেশনাল পুশাররা ধাক্কা দিয়ে ট্রেনের ভিতর যাত্রী ঢুকাতে সাহায্য করেন। আগে এটি স্টুডেন্টদের জন্য পার্টটাইম জব থাকলেও বর্তমানে এটিকে ফুলটাইম চাকরী হিসেবে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন। জাপানে এদেরকে ‘ওশিয়ো’ বলা হয়।

ঘুমানোর চাকরী

ঘুমাতে কে না ভালোবাসে। আর এই ঘুমের পরিবর্তে যদি আপনাকে টাকাও দেওয়া হয়, তাহলে তো কেল্লাফতে !
মূলত বিজ্ঞানীরা যখন কোন ঘুমের ওষুধ বা ঘুম সংক্রান্ত কোন বিষয় নিয়ে গবেষণা বা এক্সপেরিমেন্ট করেন তখন কিছু মানুষকে টাকার বিনিময়ে ঘুমানোর কাজে লাগানো হয়। এবং তাদের কাজ হলো শুধুমাত্র ঘুমানো। তবে দুঃখের কথা হলো এরকম চাকরী আপনি বাংলাদেশে খুঁজে পাবেন না কারণ, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের ঘুমের গবেষণার জন্য বাইরের মানুষের দরকার পড়ে না। তারা নিজেরাই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে গবেষণা করেন !

বিয়ের অতিথি হওয়ার চাকরী

বিনা দাওয়াতে বিয়েবাড়িতে খেয়ে আসার প্রবণতা এদেশের যুবসমাজের মধ্যে ব্যাপক লক্ষ করা যায় (আমি নিজেও কত খেয়েছি)। অথচ এমন কিছু দেশ আছে যেখানে বিয়েতে অতিথি খুঁজে পাওয়া যায় না ! ভাড়া করে অতিথি আনা হয়। ভাবা যায় !! জাপানে এই পেশার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। বিয়েতে অতিথির সংখ্যা বাড়াতে টাকা দিয়ে ভাড়া করা হয় কিছু মানুষকে। যারা বিয়ে বাড়িতে গিয়ে শুধু খেয়ে আসেন।

আসবাবপত্র পরীক্ষক

আসবাবপত্র তৈরি করে তা কিছু মানুষকে দিয়ে পরীক্ষা করানো হয়। তাদের কাজ হলো ওই আসবাবপত্রে শুয়ে বসে ঘুমিয়ে তার উপযোগিতা পরীক্ষা করা। বিভিন্ন হোটেলে এইসব মানুষদের দিয়ে বিছানা পরীক্ষা করা হয়। এরপর তাদের মতামত অনুযায়ী বিভিন্ন রুমের জন্য আলাদা আলাদা বিছানা বাছাই করা হয়।

ভাড়া করা প্রেমিক-প্রেমিকা

আপনি কি সিঙ্গেল? প্রেম করতে চান কিন্তু পছন্দমত মানুষ পাচ্ছেন না? তাহলে খোঁজ নিন ইন্টারনেটে রেন্ট আ ফ্রেন্ড সাইটে। যেখান থেকে আপনি সহজেই প্রেম করার জন্য ভাড়া করতে পারবেন আপনার পছন্দমত কোন মানুষকে। ছবি, নাম এবং ডিটেইলস সহ কার ভাড়া কত সবকিছুই আপনি জানতে পারবেন। জাপান, চীন, আমেরিকা, ইউরোপ, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রভৃতি দেশগুলোয় এরকমটা দেখা যায়। এমনকি এই পেশা এসকল দেশে আইনসম্মত।
বাংলাদেশে এই সিস্টেম থাকলে হয়ত ছারপোকার কোন মেম্বারকে ‘ফরেভার সিঙ্গেল’ থাকতে হতো না (?)…

বিশ্বজুড়ে রয়েছে এরকম আরো কিছু অদ্ভুত চাকরি ! যার মধ্যে অন্যতম – কান পরিষ্কার করার চাকরি, থাপ্পড় মারার চাকরি, ক্ষমা চাওয়ার চাকরি প্রভৃতি। সেসব নিয়ে নাহয় অন্য কোন পর্বে আলোচনা করা যাবে। আপাতত আমাদের দেশের কোম্পানিগুলোর উচিত খাওয়া এবং ঘুমানোর চাকরির ব্যবস্থা করা। গ্যারান্টি দিচ্ছি দেশে একজনও বেকার থাকবে না !

Leave a Reply