কিছু চলচ্চিত্র জীবনকে ভাবায় ভিন্নভাবে

আধুনিক কালের বিজ্ঞানের অন্যতম সৃষ্টি চলচ্চিত্র, যাকে আমরা বলতে পারি দৃশ্য কাব্য। এখানে সমাজের নানান পেশার মানুষকে নানান ভাবে উপস্থাপন করা হয়। অসধারণ গল্প আর নির্মাণ শৈলীতে কোনো পতিতা হয়ে উঠতে পারে আমাদের স্বপ্নের নারী, কিংবা কোনো ছন্নছাড়া যুবক হয়ে যেতে পারে আমাদের কল্পনার নায়ক ! মননে, চিন্তায়, চেতনায় এমনকি সমাজ পরিবর্তনেও সিনেমা অবদান রেখেছে সবসময়, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হয়ে ধরা দিয়েছে আমাদের কাছে।

আজ যে পাঁচটি সিনেমার নিয়ে কথা বলবো, তার তিনটিই টম হ্যাঙ্কস অভিনিত। ছবিগুলো আপনার চিন্তার জগতে আলোড়ন ফেলতে সক্ষম হবে, এমনটা আশা করতেই পারি…

ফরেস্ট গাম্প

ফরেস্ট গাম্প সিনেমার সেরা একটি দৃশ্য

১. ফরেস্ট গাম্প (১৯৯৪) : উইনস্টন গ্রুম রচিত ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত কত ‘ফরেস্ট গাম্প’ নামক উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালে। ছবিটিতে ফরেস্ট গাম্প নামক ব্যক্তির জীবনের কয়েক দশক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ব্যাপারটা মনে হতে পারে কমেডি কিংবা স্বপ্নের মত, অথবা একদমই নাটকীয় এক গল্প। ছোট প্রতিবন্ধী শিশুটি দৌড়াতে দৌড়াতে জীবনের দৌড়ে কতদূর এগিয়ে গেলো। আবার একটা সময় মনে হতে পারে এট‍া প্রেমিক-প্রেমিকার রসালো গল্প। এ ছবিতে ফরেস্ট গাম্প চরিত্রে অভিনয় করেছেন আমেরিকার বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস। এ ছবিটি তাঁকে অস্কার এনে দিয়েছিলো।

কাস্ট অ্যাওয়ে

কাস্ট অ্যাওয়ে সিনেমার সবচেয়ে সেরা দৃশ্য

২. কাস্ট অ্যাওয়ে (২০০০) : হলিউড ইতিহাসে এক মহাকাব্যিক টিকে থাকার লড়াইয়ের নাম ‘কাস্ট অ্যাওয়ে’। আন্তর্জাতিক কুরিয়ার ফেড এক্সে চাকুরীরত চাক নোল্যান্ড নামে এক ব্যক্তি বিমান ক্রাশে পতিত হয় দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে জনমানবহীন এক দ্বীপে। সে একাই এই নির্জন দ্বীপে বিমানের ধ্বংসবশেষ নিয়ে শুরু করে জীবন যুদ্ধ, টিকে থাকার লড়াই। উইলসন নামক একটি ভলিবল হয় এই নির্জন দ্বীপে তার একমাত্র সঙ্গী। জড়বস্তু উইলসন হয়ে ওঠে ছবিটির শক্তিমান চরিত্র। নোল্যান্ড কি পেরেছিলো তীরে ফিরতে? ফিরে পেয়েছিলো তার পরিবার? যদিও পেয়ে থাকে, তবে কি ঠিক তেমনটাই ছিলো? যেমনটা সে রেখে গিয়েছিলো !

অ্যাপার্টমেন্ট ১৯৬০

অ্যাপার্টমেন্ট ১৯৬০ সিনেমার সবচেয়ে সেরা দৃশ্য

৩. আ্যপার্টমেন্ট (১৯৬০) : অসাধারণ গল্প আর অভিনয় গুণে এই ছবিটি হয়ে উঠেছে ক্লাসিক। সি.সি বেক্সটার নামক ভদ্রলোক তার ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্ট ব্যবহার করে অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মন যুগিয়ে যখন তরতর করে উপরে উঠছে, ঠিক সেই মূহুর্তে বিপত্তি হয়ে ধরা দেয় তার প্রেমের সম্পর্ক। প্রেম নিঃস্বার্থ, প্রেম অন্ধ এবং সেটা কতটা প্রকট, এই ছবিটি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। চমৎকার সব ডায়ালগগুলো দর্শকদের টেনে নিয়ে যায় ছবির শেষ সেকেন্ড পর্যন্ত।

সি.সি বেক্সটার: You hear what I said, Miss Kubelik? I absolutely adore you.

ফ্রন কুবেলিক: Shut up and deal…

কিংবা যখন ফ্রন কুবেলিক বলে- When you’re in love with a married man you shouldn’t wear mascara.

মনটা ভরে যায় !

ফার অ্যান্ড অ্যাওয়ে

ফার অ্যান্ড অ্যাওয়ে সিনেমার সবচেয়ে সেরা দৃশ্য

৪. ফার অ্যান্ড এ্য‍াওয়ে (১৯৯২) : টম ক্রুজ অভিনিত এই ছবির ঘটনা প্রবাহ ১৮৯০ সালের। আইরিশ ভূমিদস্যুদের নিপীড়নের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ল্যান্ডলর্ড এর উচ্চাবিলাসী মেয়েকে নিয়ে আমেরিকা পাড়ি জমায়। রোমান্টিক ধাঁচের এই মুভিতে একদিকে যেমন মানব মানবীর মানসিক দ্বন্দ্ব ফুটে উঠেছে। অন্যদিকে ১৮৯৩ সালের ল্যান্ডরানের ইতিহাস অত্যন্ত চমৎকার ভাবে উঠে এসেছে ! পাশ্চাত্য সামন্ত প্রথা, প্রান্তিক মানুষের যাপিত জীবন সর্বপরি মানবিক আকর্ষণ যেনো জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছে।

এবং সর্বশেষ টম হ্যাঙ্কস এর বিগ (১৯৮৮) ছবি দিয়ে শেষ করব…

৫. বিগ (১৯৮৮) : ১৩ বছরের একটি শিশু যে কিনা বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে ঠিক রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছে পূরণ গল্পের মত। জলটর গেমের মাধ্যমে জশ বড় হলে বিপত্তিটা ঘটে, যখন তার মা তাকে চিনতে পারে না। একরকম বাধ্য হয়ে বাড়ির বাইরে গিয়ে তাকে জব নিতে হয়। চাকরী জীবনে জশ সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছে সত্য, কিন্তু মনটা পড়ে থেকেছে বন্ধু আর পরিবারের কাছে। জশের জীবন ১৩ বছরের শিশুর জীবন। প্রেমে পড়েছে, টাকা কামিয়েছে, কর্ম জীবনে সফলতা পেয়েছে। তবুও কেনো সে তার পূর্বের জীবন ফিরে পেতে চায়? আদৌ কি পেয়েছিলো ফিরে?

মোতাহের হোসেন চৌধুরী বলেছিলেন, “শিক্ষার দুটো দিক। একটি প্রয়োজনীয়, অন্যটি অপ্রয়োজনীয়। এবং এই অপ্রয়োজনীয় দিকট‍াই শ্রেষ্ঠ দিক।”

এই অপ্রয়োজনীয় দিকটি হলো সাহিত্যচর্চা। নিজের মাঝে আরেকটা জগৎ তৈরি করা। চলচ্চিত্র মানুষের মনের সেই জগৎ নিয়ে কাজ করে। যাপিত জীবনের সব জরাজীর্ণতা ধুয়ে নিতে আসুন অবসরের সময়টাতে চলচ্চিত্রে ডুবে থাকি। এটাই হতে পারে উত্তর-আধুনিক জীবন পরিবর্তনের একমাত্র হাতিয়ার।

ছবিতে যুক্তি, ছবিতেই মুক্তি !

আরো পড়ুনঃ

Leave a Reply