অস্তিত্ব সংকটে বাংলা চলচ্চিত্র : নেপথ্যে রয়েছেন যারা

শুরুটা ৯০ দশকের শেষের দিক থেকে। তখন ইন্ডাস্ট্রিতে শুরু হয়েছে চুরির নীতি…

ভারতের বলিউড থেকে শুরু করে দক্ষিণা ছবির কাহিনী দেদারসে চুরি করা শুরু করলো। স্যাটেলাইট প্রযুক্তি এত আধুনিক না হওয়ায় মৌলিক বলে চালানো হত। অনেক হিটও দিচ্ছিলো। সেই থেকে চুরির বীজ ঢুকে পরলো ঢাকার ছবিতে, যা এখনো বিষপোঁড়ার মত হয়ে আছে।

একই সময় ইন্ডাস্ট্রিতে অনুপ্রবেশ ঘটলো গাবতলীর সন্ত্রাসের। সাথে আসলো বেশ কিছু নারীলোভী প্রযোজক। শুরু হলো নারী দেহ প্রদর্শন। নিম্ম আয়ের মানুষদের টার্গেট করে বানানো হলো একের পর এক অশ্লীল কাটপিস। সময়ের সুপারস্টাররা সাথে উঠতি তারকারাও এই অশ্লীলতায় গা ভাসাতে লাগলো। যে কয়জন নিজেদের বাঁচিয়ে রাখছিলো, তারা পেরে উঠছিলো না। দ্রুতই রুচিশীল মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। বন্ধ হলো একের পর এক সিনেমা হল। অস্তিত্ব সংকটে পড়লো বাংলা চলচ্চিত্র !

২০০৬ এর দিকে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের সাথে সাথে সুবিধাবাদীরা রঙ পাল্টালো। একজন নায়ককে কেন্দ্র করে গড়ে তুললো বিশাল বেষ্টনী। এই বেষ্টনী এতই শক্তিশালী যে এখন পর্যন্ত কেউই ভাঙ্গতে পারছে না। এই বেষ্টনীর কারণেই অনেক বড় বড় তারকারা নিজেদের গুটিয়ে নিলো। ঠিক এই সময়টাতেই নকল ছবির মহৌৎসব শুরু। এমনও হয়েছে, একই দৃশ্য কয়েকটা ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে, তাও আবার একই নায়কের। অদ্ভুত না?

নাহ, অদ্ভুত না! কারণ এক নায়কের বছরে ১০-১২ ফিল্ম রিলিজ দিতে গেলে এরচেয়ে আরো নিচে নামা যেত। নায়ক আর নায়িকার লিপস্টিকের অনুপাত প্রায় সমান হওয়ায় নাম হয়ে গেলো লিপস্টিক ইন্ডাস্ট্রি। আবারো অস্তিত্ব সংকটে বাংলা চলচ্চিত্র …

এবার শুরু হলো ডিজিটালাইজেশন। অসম্ভবকে সম্ভব করতে এসে ভাঁড়ামি করে গেলেন একজন। বিষয়টা এমন টাকা আছে তো অভিনেতা হওয়া যায়। ইন্ডাস্ট্রিকে আরেকবার হাস্যরসে পরিণত করলেন। এরপর থেকেই মাল্টিমিডিয়া যুগের শুরু। লালঘোলা পর্দা থেকে মুক্তি দিয়ে একটু ঝকঝকে প্রিন্ট উপহার দেওয়ার সাথে সাথে একটা আলোড়ন তৈরি করলো। ঠিক এই সময়টাতেই আমি ইন্ডাস্ট্রির খোঁজখবর নেওয়া শুরু করি।

এই সময়টাতেই তৈরি হয় বানিজ্যিক ফ্যান। তাদের মনিবের আদর্শ এবং নগদ অর্থের বিনিময়ে শুরু করে নোংরামি। সেই সময় থেকে যারাই বাংলা চলচ্চিত্রের ভালো চেয়েছে, যারাই একনায়কতন্ত্রের বিরোধিতা করেছে, তাদেরকে বিভিন্নভাবে হেয় করার চেষ্টা করা হয়েছে, এবং এখনো হচ্ছে।

“ব্যবসা করতে এসেছি, শিল্প চর্চা করতে নয়” – এরূপ বাণী দেওয়া গোষ্ঠীকেও সাপোর্ট দিয়ে এসেছি, যাতে করে দুয়েকটা দেশি সিনেমা দেখতে পারি। সেই আশায় গুড়েবালি, যৌথ প্রযোজনার নাম করে অত্যান্ত সুকৌশলে ভারতীয় (আসলে কলকাতার) ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করা শুরু করলো। কলকাতা দখল করতে গিয়ে দেশটা বেচে দিয়ে আসলেন। সঙ্গী হিসেবে পেলেন হালের সবচেয়ে দামী তারকাকে। কয়দিন আগেই প্রতারণা প্রতারণা করে মুখে ফেনা তোলা পাবলিকগুলো ডিগবাজি খেলো। এখানেও বাণিজ্যিক ফ্যানদের দৌরাত্ব্য। যারাই প্রতারণা বন্ধে সোচ্চার হচ্ছে, তাদের নামেই জায়গায়-বেজায়গায় নোংরামি শুরু করলো।

এতটুকুতে শেষ হলেও ভালো হত। এটা ছিলো মুদ্রার এপিঠ, ওপিঠ এখনো বাকি। এরা সংঘটন গোত্রীয়। নামী বেনামী ২৪-২৫ সংঘটন এদের আন্ডারে। গার্বেজরা বসে আছে উচ্চাসনে আর কথায় কথায় চলছে নিষিদ্ধের হুমকি। এদেরকে সম্মিলিত বস্তাপঁচা জোট বললেও খুব একটা মন্দ হওয়ার কথা না।

এতকিছুর পরও চিপাচাপায় কয়েকটা অজ্ঞাতনামা, আয়নাবাজি, মনপুরা, ডুব, টেলিভিশন, ভুবন মাঝি হচ্ছে যেগুলোতে বাংলার ঘ্রাণ পাওয়া যায়। উচ্চবাক্যে বলা যায়, এটা স্রেফ আমাদের ছবি, আমাদের অস্তিত্বের ছবি।

Leave a Reply