বাংলাদেশি সিনেমা ও সিক্যুয়াল

সিনেমার সিক্যুয়াল বলতে আমরা সহজ ভাষায় বুঝি কোনো সিনেমার পরবর্তী ধারাবাহিক পর্ব বা কিস্তি। আরো সহজ করে বলতে গেলে কোনো সিনেমার নামের সাথে পার্ট-২/৩, এগেইন, রিটার্নস ইত্যাদি শব্দ থাকলেই আমরা সেটাকে সিক্যুয়াল সিনেমা হিসেবে ধরে নেই। কিন্তু সিনেমার দৃষ্টিকোণ থেকে সিক্যুয়াল ব্যাপারটি এত সহজ কিছু নয়। যেমন Koi… Mil Gaya সিনেমার সিক্যুয়ালের নাম হচ্ছে Krrish, কিন্তু “Koi… Mil Gaya-2” নয়।

গল্পের প্রয়োজনে অথবা ব্যবসায়িক কারনে হলিউড ও বলিউডে হরহামেশা সিক্যুয়াল সিনেমা নির্মিত হয়েছে বা হচ্ছে। বাংলাদেশে পরিমাণে খুব কম হলেও বহু আগে থেকেই সিক্যুয়াল প্রথা চালু আছে। আমার এই লেখার উদ্দেশ্য কারো সময় নষ্ট করা নয়। যেহেতু বাংলাদেশের সিনেমার কোনো ডিজিটাল রেকর্ড বা আর্কাইভ নেই, তাই আমার বিশ্বাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কোন সিনেমাপ্রেমী গবেষকের এই লেখাটি কিছুটা হলেও কাজে লাগবে।

যাই হোক, সিনেমার সিক্যুয়ালের অনেক প্রকারভেদ আছে। কিন্তু আমরা যেহেতু শুধু বাংলাদেশের সিনেমার সিক্যুয়াল সম্পর্কে আলোচনা করবো। তাই আমাদের শুধু চারটি প্রকারভেদ জানলেই হবে।

  • পিওর সিক্যুয়াল (Pure Sequel) :  প্রথম সিনেমার গল্প যেখানে শেষ হয়, পরবর্তী সিনেমার গল্প ঠিক সেখান থেকে শুরু হলে তাকে পিওর সিক্যুয়াল বলা হয়। যেমন‍ঃ Gangs of Wasseypur – Part 1 এর গল্প যেখানে শেষ হয়েছে, Gangs of Wasseypur – Part 2 এর গল্প ঠিক সেখান থেকে শুরু হয়েছে। এটিই হচ্ছে পিওর সিক্যুয়াল।
  • স্পিন-অফ সিক্যুয়াল (Spin-off Sequel) : কোনো সিনেমার গল্পের থিম ঠিক রেখে যদি সিনেমাটির পরবর্তী কিস্তিতে গল্পের স্থান, পাত্রপাত্রী বা চরিত্রের ধরণ পরিবর্তন করে নির্মাণ করা হয়, তবে পরবর্তী সিনেমাটিকে প্রথম সিনেমার স্পিন-অফ সিক্যুয়েল বলে। অনেক সময় সম্পূর্ণ থিম পাল্টে ফেলে শুধু এক বা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রকে হাইলাইট করেও এই ধরণের সিনেমা বানানো হয়। যেমনঃ Kanchana সিরিজের ছবিগুলোর থিম একই হলেও পাত্রপাত্রীর ধরণ পরিবর্তিত হয়। আবার Munna Bhai সিরিজের দুটো ছবিতে মুন্না ভাই ও সার্কিটের চরিত্রের ধরণ একই থাকলেও থিম ছিল সম্পূর্ণ আলাদা।
  • রিবুট (Reboot) : এটা অনেকটা মোবাইল বা কম্পিউটার রিবুট বা রিস্টার্ট করার মত। কোনো সিনেমার কিছু অংশ বা একটি বৃহতাংশ পরিবর্তন করে পুনঃনির্মাণ করাকে রিবুট বলে। এটা অনেকটা রিমেক ও সিক্যুয়ালের মিশ্রিত অবস্থা। যেমনঃ Raaz সিরিজের ৪র্থ মুভি Raaz Reboot.
  • আন-অফিসিয়াল সিক্যুয়াল (Unofficial Sequel) : কোন নির্মাতাগোষ্ঠীর অনুমতি ছাড়াই তাদের কোন সিনেমার নাম বা থিম নিয়ে বানানো সিনেমা হচ্ছে মূল সিনেমার আন-অফিসিয়াল সিক্যুয়াল। যেমনঃ ১৯৯৭ এর কালজয়ী Titanic সিনেমার আন-অফিসিয়াল সিক্যুয়াল হচ্ছে ২০১০ এর Titanic 2 মুভিটি।

আরেকটি কথা, কোনো মূল সিনেমা ও তার এক বা একাধিক সিক্যুয়াল সিনেমাকে একত্রে একটি সিরিজ বলা হয়। তাহলে আসুন জেনে নেই বাংলাদেশের এ যাব‍ৎ কালের সিক্যুয়াল সিনেমার ইতিহাস সম্পর্কে।

বাংলাদেশি সিক্যুয়াল সিনেমা

১. রূপবান সিরিজ : ১২ দিন বয়সের রাজপুত্র রহিমের জীবন বাঁচানোর জন্য বার বছর বয়সের উজিরকন্যা রুপবানের বিয়ে, বনবাস ও তাজেলের সাথে রহিমের প্রেমের গল্প নিয়ে পরিচালক সালাউদ্দিন ১৯৬৫ সালে নির্মাণ করেন কালজয়ী ফোক ফ্যান্টাসি মুভি “রূপবান”। যেখানে রূপবান চরিত্রে সুজাতা, রহিম চরিত্রে মনসুর ও তাজেল চরিত্রে চন্দনা অভিনয় করেন। তারপরের বছর অর্থাৎ ১৯৬৬ সালে মাস্টার মেকার পরিচালক ইবনে মিজান নির্মাণ করেন এই সিনেমার স্পিন-অফ সিক্যুয়াল “আবার বনবাসে রূপবান”। মূল রূপবান সিনেমার গল্প যেখানে শেষ হয়েছে, এই ছবির গল্প সেখান থেকেই শুরু হলেও এটাকে পিওর না বলে স্পিন-অফ সিক্যুয়াল বলার কারণ হচ্ছে মূল সিনেমার তাজেল চরিত্রে রুপদানকারী চন্দনা ছাড়া আর কেউ পরবর্তী কিস্তিতে ছিলেন না। এই কিস্তিতে সুলতানা জামান রূপবান চরিত্রে ও হাসান ইমাম রহিম বাদশা চরিত্রে অভিনয় করেন। এটাই আমাদের চলচ্চিত্রের প্রথম সিক্যুয়াল সিনেমা। দুটো সিনেমাই বাম্পার ব্যবসা করতে সক্ষম হয়।

২. সূর্য সিরিজ : সমাজের কঠিন বাস্তব চিত্রের আলোকে এক নিম্নবিত্ত ঘরের মেয়ের জীবন সংগ্রামের গল্প নিয়ে আব্দুস সামাদ সোশ্যাল ড্রামা মুভি “সূর্যগ্রহণ”। সিনেমাটির মূল চরিত্রে ছিলেন রোজি আফসারি, অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন ফারুক, ববিতা, জাফর ইকবাল, গোলাম মুস্তাফা প্রমুখ। এই সিনেমার শেষেই এর (পিওর) সিক্যুয়াল অর্থাৎ “সূর্য সংগ্রাম” এর ইঙ্গিত দেওয়া হয়। যা ১৯৭৯ সালে মুক্তি পায় পরিচালক বা কোনো কলাকুশলীর পরিবর্তন না হয়েই। এটাই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সিক্যুয়াল মুভি। দুটো সিনেমাই সমালোচকদের প্রশংসা এবং মোটামুটি ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করে।

৩. গোলাপী সিরিজ : অভাব ও দারিদ্র্যতার চাপে ক্লিষ্ট তিন নারীর ট্রেনকে কেন্দ্র করে জীবন সংগ্রামের গল্প নিয়ে আমজাদ হোসেন ১৯৭৮ সালে নির্মাণ করেন সোশ্যাল ড্রামা মুভি “গোলাপী এখন ট্রেনে”। ববিতা, আনোয়ারা, রওশন জামিল, ফারুক প্রমুখ অভিনিত এই ছবিটি এখনও বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সেরা সিনেমাগুলোর একটি বলে গণ্য করা হয়। এরই ধারাবাহিকিতায় ১৯৯৫ সালে আমজাদ হোসেন ইলিয়াস কাঞ্চন ও চম্পাকে যোগ করে “গোলাপী এখন ঢাকায়” নামে এর একটি পিওর সিক্যুয়াল নির্মাণ করেন। ছবিটি প্রথমটির মত তেমন ব্যবসাসফল না হলেও মোটামুটি আলোচিত হয়। গোলাপী সিরিজের শেষ ছবি হিসেবে ২০১০ সালে আমজাদ হোসেন নির্মাণ করেন মূল সিনেমার রিবুট (মূল সিনেমার সিক্যুয়াল নয়) “গোলাপী এখন বিলেতে”। যেখানে গোলাপী চরিত্রে মৌসুমী ও অন্যান্য চরিত্রে মিঠুন চক্রবর্তী, ফেরদৌস, শাবনূর প্রমুখ অভিনয় করেন। বিগ বাজেটের এই মুভিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।

৪. বেদের মেয়ে জোসনা সিরিজ : কাজীর ঘরে জন্ম নিলেও কপাল দোষে বেদের ঘরে বেড়ে উঠা জোসনা নামের এক বেদেনীর গল্প নিয়ে তোজাম্মেল হক বকুল ১৯৮৯ সালে নির্মাণ করেন ফোক ফ্যান্টাসি মুভি “বেদের মেয়ে জোসনা”। অঞ্জু ঘোষ ও ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনীত এই ছবিটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা। এই সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৯১ সালে পরিচালক জিল্লুর রহমান সুচরিতা ও সাত্তারকে নিয়ে প্রায় একই গল্পে “বনবাসে বেদের মেয়ে জোসনা” নামে এর একটি আন-অফিসিয়াল সিক্যুয়াল নির্মাণ করেন। কিন্তু ছবিটি চরমভাবে ব্যর্থ হয়।

৫. ভন্ড সিরিজ : এক লম্পট ধনী লোকের একমাত্র মেয়েকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে তিন ভন্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার গল্প নিয়ে মাস্টার মেকার শহীদুল ইসলাম খোকন ১৯৯৮ সালে নির্মাণ করেন রোমান্টিক কমেডি মুভি “ভন্ড“। রুবেল, তামান্না, এটিএম শামসুজ্জামান, হুমায়ুন ফরিদী, রাজীব প্রমুখ অভিনীত সিনেমাটি ব্যবসাসফল হওয়ার পাশাপাশি কাল্ট কমেডি মুভি হিসেবে পরিগণিত হয়। প্রায় এক যুগ পরে অর্থাৎ ২০১০ সালে শহীদুল ইসলাম খোকন এটিএম শামসুজ্জামান ও হুমায়ুন ফরিদীর সাথে শাকিব খান ও রেসিকে জুটি করে এই ছবির সিক্যুয়াল “চেহারা ভন্ড-২” নির্মাণ করেন। দুটি ছবিতে দুই ভন্ডের চরিত্র এটিএম-ফরিদী ছাড়াও, ছুরি দেখে নায়কের অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, হাস্যরসাত্মকভাবে সমাজের ভণ্ডামির মুখোশ খুলে দেওয়া; ইত্যাদি কমন ছিল। তবে দ্বিতীয় ছবিটি আশানুরূপ ব্যবসা করতে ব্যর্থ হয়।

৬. মেঘ সিরিজ : বিয়ের প্রলোভনে পরে শহরে আসা এক নারীর ঘটনাক্রমে এইডসের শিকার হওয়ার গল্প নিয়ে নারগিস আক্তার ২০০১ সালে নির্মাণ করেন প্রোপাগান্ডা (সামাজিক প্রচারণামূলক) মুভি “মেঘলা আকাশ“। মৌসুমী, আইয়ূব খান (ভারত), শাকিল খান, পূর্ণিমা প্রমুখ অভিনীত এই সিনেমাটি দর্শক ও সমালোচক কর্তৃক প্রশংসিত হয় এবং ৬টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। এর সাত বছর পর ২০০৮ সালে নারগিস আক্তার এইডসে আক্রান্ত মৌসুমী ও আইয়ূব খানের সন্তান হিসেবে পপির সামাজিক দৈন্যতা ও কুসংস্কারের শিকার হওয়ার গল্প নিয়ে নির্মাণ করেন “মেঘের কোলে রোদ“। পপি ছাড়াও এই ছবিতে রিয়াজ, টনি ডায়েস, কবরী সারোয়ার, দিতি প্রমুখ অভিনয় করেন। প্রথম ছবির মত এটিও প্রশংসা ও ৫টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।

৭. মার্ডার সিরিজ : সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে পোড় খাওয়া কিছু লোকের সম্মিলিত সংগ্রামের গল্প নিয়ে এম এ রহিম ২০০৩ সালে নির্মাণ করেন ক্রাইম ড্রামা মুভি “মার্ডার”। ফারদিন, মুনমুন, আলেকজান্ডার বো, ময়ূরী, মেহেদী, মিশা সওদাগর প্রমুখ অভিনীত এই ছবিটি “অশ্লীলতার” কারনে আলোচিত ও মোটামুটি ব্যবসাসফল হয়। এর প্রায় এক যুগ পড়ে ২০১৫ সালে পূর্বের গল্পটাকে একটু মডিফাইড করে প্রায় একই থিমে এম এ রহিম নির্মাণ করেন এর স্পিন-অফ সিক্যুয়াল “মার্ডার-২”। শাহরিয়াজ, বিন্দিয়া, আমান রেজা, অনন, অমিত হাসান, লিটন হাশমি প্রমুখ অভিনীত ছবিটি ডিজিটাল যুগে অশ্লীলতার কারনে সমালোচিত হয় এবং বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।

৮. গ্যাংস্টার সিরিজ : শহরের বুকে গ্যাংস্টারদের দৌরাত্ম্য ও তাদের প্রতিহত করার গল্প নিয়ে রাজু চৌধুরী ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন ক্রাইম এ্যাকশন মুভি “গ্যাংস্টার”। আলেকজান্ডার বো, একা, অমিত হাসান, নদী, মিশা সওদাগর প্রমুখ অভিনীত এই সিনেমাটি সেই বছর ঈদে মুক্তি পাওয়ায় মোটামুটি ব্যবসা করলেও অশ্লীলতার দায়ে দুষ্ট হয়। ২০১৩ সালে পরিচালক আশিকুর রহমান একটি যুবকের ঘটনাক্রমে সন্ত্রাসী জীবনে জড়িয়ে পড়ার গল্প নিয়ে একটি সিনেমা নির্মাণের জন্য মনোনিবেশ করেন। আর সিনেমার নাম হিসেবে তিনি “গ্যাংস্টার” নামটি ঠিক করেন। কিন্তু তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে একটা আইন ছিল যে, কোনো সিনেমা মুক্তির ২০ বছর পূর্ণ না হলে ওই একই নামে আর কোন সিনেমা নির্মাণ করা যাবে না। এদিকে “গ্যাংস্টার” নামে সিনেমা হয়েছে ১০ বছরও হয়েছিল না আবার আশিকুর রহমানও নাছোড়বান্দা তার এই নামটিই লাগবে। অতঃপর তিনি মূল গ্যাংস্টার সিনেমার কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তার ছবিটি পূর্বের সিনেমার একটি আন-অফিসিয়াল সিক্যুয়াল হিসেবে “গ্যাংস্টার রিটার্নস” নামে ২০১৫ তে মুক্তি দেন। জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া, টাইগার রবি প্রমুখ অভিনীত এই এ্যাকশন সিনেমাটি আশানুরুপ সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয়।

৯. মোস্ট ওয়েলকাম সিরিজ : ঋণ খেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামা মুখোশধারী একজন ম্যাজিস্ট্রেটের গল্প নিয়ে ২০১২-সালে অনন্য মামুন নির্মাণ করেন হাই ভোল্টেজ এ্যাকশন মুভি “মোস্ট ওয়েলকাম”। ছবিটি সুশী গনেশন পরিচালিত; বিক্রম ও শ্রিয়া সরণ অভিনীত ২০০৯ এর ব্লকবাস্টার তামিল মুভি Kanthaswamy এর অনুকরণে নির্মিত। অনন্ত জলিল, বর্ষা, নায়করাজ, বাপ্পারাজ, মিশা সওদাগর প্রমুখ অভিনিত এই সিনেমাটি ঈদের সেরা ছবিগুলোর একটি বলে গণ্য হয়। এরই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অনন্ত জলিল ও অনন্য মামুন আরো অধিক বাজেটে ২০১৪ সালে এর স্পিন-অফ সিক্যুয়াল “মোস্ট ওয়েলকাম-২” নির্মাণ করেন; যাতে অনন্ত-বর্ষা মিশা সওদাগর ছাড়াও সোহেল রানা, চম্পা ও শাহরিয়ার নাজিম জয় যোগ দেন। ছবিটি আশানুরুপ সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয়।

১০. পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী সিরিজ : নিজের হারানো ফুফুকে খুঁজতে মালয়েশিয়া যাওয়া এক যুবক, সেখানকার এক বাংলাদেশি তরুণী ও এক পাগলাটে ধনী যুবকের ত্রিমুখী প্রেমের গল্প নিয়ে সাফি উদ্দিন সাফি ২০১৩ সালে নির্মাণ করেন রোমান্টিক ড্রামা মুভি “পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী”। ছবিটি ত্রিবিক্রম শ্রীনিবাস পরিচালিত ও পবন কল্যাণ অভিনীত ২০১৩ এর তেলুগু সিনেমা Attarintiki Daredi হতে অনুপ্রাণিত। শাকিব খান, জয়া আহসান, আরিফিন শুভ, লামিয়া মিমো, নায়করাজ প্রমুখ অভিনীত এই ছবিটি বাম্পার সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে জাতীয় দলের দুজন ক্রিকেটার ও এক মডেল কন্যার প্রেমের গল্প নিয়ে সাফি উদ্দিন সাফি “পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী ২” নামে এর একটি সিক্যুয়াল নির্মাণ করেন। যেখানে শাকিব, জয়া ও মিমো ছাড়াও ইমন ও ওমর সানিও অভিনয় করেন। তবে এই ছবিটি আশানুরূপ ব্যবসা সফল হয়নি।

১১. অগ্নি সিরিজ : পিতামাতার খুনের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এক যুবতীর মিশনের গল্প নিয়ে ইফতেখার চৌধুরী ২০১৪ সালে নির্মাণ করেন এ্যকশন থ্রিলার মুভি “অগ্নি”। সিনেমাটি অলিভিয়ার মেগাটন পরিচালিত ও জো সালদানা অভিনীত ২০১১ এর ফরাসি মুভি Colombiana এর অনুকরণে নির্মিত। মাহিয়া মাহি, আরিফিন শুভ, মিশা সওদাগর প্রমুখ অভিনীত এই ছবিটি ব্যাপক ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করে। তারই ধারাবাহিকতায় পরের বছর ২০১৫ সালে ইফতেখার চৌধুরী মূল চরিত্র তানিশার (মাহিয়া মাহির) বয়ফ্রেন্ড (আরিফিন শুভ)কে হত্যার প্রতিশোধকে কেন্দ্র করে এর সিক্যুয়াল “অগ্নি-২” নির্মাণ করেন। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার এই ছবিটিতে মাহি ছাড়াও ভারতের ওম, আশীষ বিদ্যার্থী ও বাংলাদেশের টাইগার রবি অভিনয় করেন। “অগ্নি-২” এর মানগত ও ব্যবসায়িক ফলাফল ভাল ছিল না।

১২. গেইম সিরিজ : মায়া নামের আন্ডারওয়ার্ল্ডের এক মাফিয়া যুবকের গল্প নিয়ে পরিচালক যুগল রয়েল অনিক ২০১৫ সালে নির্মাণ করেন ক্রাইম থ্রিলার মুভি “গেইম”। নিরব, অমৃতা খান, কন্ঠশিল্পী বিপ্লব প্রমুখ অভিনীত ছবিটি তেমন কোন সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়নি। তবে দুই বছর পর ২০১৭ সালে রয়েল খান “গেইম রিটার্নস” নামে এই সিনেমার একটি সিক্যুয়াল নির্মাণ করেন। যাতে নিরব তার “মায়া” চরিত্রটি ফিরে পান। তার সাথে তমা মির্জা, লাবণ্য ও মিশা সওদাগর প্রমুখ যোগ হন। এই সিক্যুয়ালটি মূল সিনেমার তুলনায় ভাল সাড়া পেতে সক্ষম হয়।

এটা অনস্বীকার্য যে বর্তমান বিশ্বে সিনেমার ব্যবসায়িক ও সম্প্রসারণজনিত দৃষ্টিকোণ থেকে সিক্যুয়াল একটা ভাল নিয়ামক। তবে অনেক মাস্টারপিস সিনেমার সিক্যুয়াল যুতসই না হওয়ায় সেটা মূল ছবিরও নাম খারাপ করেছে এমন নজির কম নেই। তাই আমাদের নির্মাতাদের উচিত হবে শুধু ব্যবসায়িক নয়, সিনেমার মানগত বিষয়ের উপরও দৃষ্টি রেখে সিনেমার সিক্যুয়াল নির্মাণের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

Leave a Reply