সুইজারল্যান্ড : মানবসৃষ্ট দুর্যোগেও ধ্বংস হবে না যে দেশটি

ঠিক এই মুহুর্তে পৃথিবীতে প্রায় ১৫ হাজার নিউক্লিয়ার বোমা আছে। যদি কোনো দেশের মধ্যে শক্তিশালী পারমানবিক যু্দ্ধ বেধে যায় অথবা যদি দুর্ঘটনাবশত এরমধ্যে মাত্র কয়েকটা বোমা একসাথে বিস্ফোরিত হয়, তাহলেই পৃথিবী থেকে মানবজাতি প্রায় শেষ হয়ে যাবে। পুরোপুরিভাবে শেষ না হলেও ধ্বংসের শেষপ্রান্তে পৌঁছে যাবে আমাদের এই সুন্দর জীবনক্রিয়া। পৃথিবী আর পৃথিবীর মত থাকবেনা। হয়ে যাবে সায়েন্স ফিকশন সিনেমার কোনো বসবাসের অযোগ্য রুক্ষ মরুভূমির মত…

৩য় বিশ্বযুদ্ধ হলে কি হবে বলে আপনার ধারণা? নিশ্চয়ই এটাই বলবেন যে, সকলে মারা যাবে। পৃথিবী মানবশুন্য হয়ে যাবে। তাই তো? আসলে তেমনটা হবেনা। ৩য় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হলে ৪ ধরনের মানুষ বা প্রাণী বে‍ঁচে যাবে।

১. শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্টরা বেঁচে থাকবে। কারণ তাদের এন্টি নিউক্লিয়ার শেল্টার বানানো থাকে।
২. যারা মহাকাশে রয়েছে, তারাও বেঁচে যাবে।
৩. তেলাপোকা (এরা সবধরণের বৈচিত্রময় পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে)।
৪. পুরো সুইজারল্যান্ড দেশটির মানুষ, যার সংখ্যাটা আনুমানিক ৮২ লক্ষ।

শেষের পয়েন্টটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও কথাটা কিন্তু একদমই সত্যি। কিন্তু কেনো বেঁচে যাবে সুইজারল্যান্ডের মানুষরা? আজকের লেখায় আমরা সে সম্পর্কেই জানবো…

প্রথমত, যেকোনো বড়ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণে সুইজারল্যান্ডের মানুষরা বেঁচে যাবে তাদের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে। এর চারপাশেই ইতালি, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়া রয়েছে। আপনি যদি ইউরোপের মানচিত্র দেখেন, তাহলে দেখতে পাবেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে এটার মিল নেই। এটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি দেশ। এবং ২০০২ সালেও এটি ইউনাইটেড নেশনের সাথেও জয়েন করেনি !

সুইজারল্যান্ড এমন একটি শান্তিপূর্ণ দেশ, যেখানে গত ২০০ বছর বা তার ও অধিক সময় ধরে কোনো যুদ্ধ বা অন্য দেশের সাথে কোনো প্রকার গণ্ডগোল হয়নি। এদের শেষ যুদ্ধ হয়েছিলো নেপোলিয়নদের বিরুদ্ধে ১৮১৫ সালে। এদেশের প্রতিবেশী দেশ জার্মানি, ইতালি অনেক উত্তেজিত দেশ, যারা কিনা যেকোনো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। গ্লোবাল পাওয়ার র‍্যাংকিং অনুযায়ী সুইজারল্যান্ড পৃথিবী ৩৭ তম শক্তিশালী দেশ। এদের কোনো সুপার পাওয়ার নেই। এমনকি এরা তেমন শক্তিশালী দেশও না।

তাহলে সুইজারল্যান্ডে এমন কি আছে যে, এরা কারো সাথে যুদ্ধ করে না ! এবং এদেরকেও কেউ আক্রমণ করেনা !

সুইজারল্যান্ডের দক্ষিণে রয়েছে সুইস আল্বস মাউন্টেইন। এটি সুইজারল্যান্ডকে দক্ষিণ পার্শ্ব হতে নিরাপদে রেখেছে। এদেশের উত্তর এবং পশ্চিমে রয়েছে জোড়া মাউন্টেন। এটিও ফ্রান্স থেকে সুইজারল্যান্ডকে নিরাপদে রেখেছে। সুইজারল্যান্ডকে তাদের উত্তর পূর্ব দিক থেকে হামলা করার সুযোগ সবচেয়ে বেশি। এজন্য তাদের যেকোনো রকম আক্রমণ থেকে বা‍ঁচার জন্য প্ল্যান তৈরি করেই রাখা রয়েছে। এই প্ল‍্যানের নাম দ্যা ন্যাশনাল রিডোপ্ট !

সুইজারল্যান্ড এর প্রত্যেকটি পুরুষের ১৭০ দিনের জন্য মিলিটারি প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক। এরপর তারা মিলিটারির জন্য রিজার্ভ হয়ে থাকে এবং তাদের রাইফেল তাদের সাথে দেওয়া হয় বাসায় রাখার জন্য ! এতে করে মাত্র ৭২ ঘন্টার মধ্যেই ২ লক্ষ সৈনিককে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে পারে তারা !

এছাড়াও এখানকার রাস্তা ব্রিজ সুরঙ্গ এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে, একে রিমোট দিয়ে ব্লাস্ট করে দিয়ে পুরো সুইজারল্যান্ডে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে দিতে পারে। এরকম প্রায় ৩০০০ পয়েন্ট রয়েছে, যেগুলো চোখের ইশারায় রিমোট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া যায়।

আল্বস মাউন্টেইনে প্রায় ২৬ হাজার বাংকার বানানো হয়েছে, যেগুলো সহজে দেখা যায় না। এখানে এন্টি এয়ারক্রাফট গান, এন্টি অ্যাটাক গান এবং মেশিনগান রয়েছে। এই বাংকারগুলো এমনভাবে বানানো হয়েছে, দেখলে মনে হবে এগুলো পাহাড় বা জঙ্গলের পরিত্যক্ত বাসাবাড়ি। তাই এ দেশটি শত্রুপক্ষের কাছে একটু জালের মত ! তাই সুইজারল্যান্ড অনেক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতেও নিউট্রাল রয়েছে।

সুইজারল্যান্ড একমাত্র এমন একটি দেশ, যারা নিউক্লিয়ার অ্যাটাক হলেও তাদের পুরো জনগোষ্ঠীকে শেল্টার দিতে সক্ষম। এদের এই শেল্টারে একবারে ১১৪ শতাংশ লোক জায়গা দিতে সক্ষম। সুইজারল্যান্ড এর সবচেয়ে পুরোনো বাড়িগুলোও ১৯৭৮ সালে বানানো। এবং এগুলোর প্রত্যেকটাই নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে বানানো হয়েছে। যেখানে কিনা প্রত্যেকটা বাড়িতে নিউক্লিয়ার শেল্টার থাকা বাধ্যতামূলক ! এটি ৭০০ মিটার দূরের ১২ মেটাটন নিউক্লিয়ার ব্লাস্টকেও খুব সহজের প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

পুরো সুইজারল্যান্ডে ৮৬ হাজারের বেশি বিল্ডিং রয়েছে, যেগুলো নিউক্লিয়ার প্রতিরোধক। এবং আনুমানিক হিসেবে এসব শেল্টারে মানুষ ৪ মাস সাচ্ছন্দে থাকতে পারবে। সুইজারল্যান্ডে যেকোনো নিউক্লিয়ার যুদ্ধে শুধু এদেশের জনগণকেই নয়, একইসাথে আশেপাশের কিছু মানুষকেও জায়গা দিতে পারবে। মানবসৃষ্ট দুর্যোগে সভ্যতার ধ্বংসপ্রান্তে গিয়েও মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে সুইজারল্যান্ডের কাছ থেকে…

Leave a Reply