বিশ্বস্ত কুকুর হাচিকো

সময়টা ছিলো ১৯২৪ সাল। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিভাগের অধ্যাপক ‘হিদেসাবুরো উয়েনো’ প্রতিদিনকার মতই একদিন ‘শিবুরা স্টেশন’ হয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে তিনি একটি সোনালী বাদামী বর্ণের ‘আকিতা’ প্রজাতির কুকুর কুড়িয়ে পান। যে কুকুরটি অধ্যাপকের মৃত্যুর পর পরবর্তী দশ বছর এই শিবুরা স্টেশনে অপেক্ষা করেছিলো অধ্যাপকের প্রত্যাবর্তনের আশায়।

বলছিলাম আকিতা প্রজাতির কুকুর ‘হাচিকো’ এর কথা। যার জন্ম হয় ১০ ই নভেম্বর, ১৯২৩ সালে জাপানের আদাতে শহরে। তার মনিব অধ্যাপক হিদেসাবুরো উয়েনো শিবুরা স্টেশনে তাকে কুড়িয়ে পায় এবং নাম রাখে “হাচিকো”। জাপানি “হাচি” শব্দের অর্থ “আট” আর “কো” এর অর্থ হলো “রাজপুত্র”।

প্রতিদিন সকালে মনিবকে বিদায় জানাতে হাচিকো অধ্যাপকের সাথে স্টেশনে আসত এবং দিনশেষে তার বাড়ি ফেরার সময়ে স্টেশনেই একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অভ্যর্থনা জানাতে অপেক্ষা করত। কিন্তু ১৯২৫ সালের মে মাসে একদিন অধ্যাপক তার বিশ্ববিদ্যালয়েই সেরিব্রাল হ্যামারেজ অর্থাৎ হঠাৎ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মারা গেলেন। প্রতিদিনের মত সেদিনও হাচিকো তার মনিবের জন্য অপেক্ষা করছিলো স্টেশনে। কিন্তু তার মনিব সেদিন আর ফিরলেন না। বিশ্বস্ত হাচিকো যেনো তা মানতে রাজি নয়…

সেদিন থেকে টানা পরবর্তী নয় বছর নয় মাস পনেরো দিন সে প্রতিদিন একই সময়ে শিবুরা স্টেশনের একই জায়গায় বসে তার মনিবের জন্য অপেক্ষা করতো !

৪ অক্টোবর, ১৯৩২ সালে ‘আসাহি শিম্বুন’ নামের একটি জাপানি মাসিক পত্রিকায় হাচিকোর এই বিশ্বস্ততা ও মনিবের প্রতি আনুগত্যের কথা উল্লেখ করে প্রথম প্রতিবেদন ছাপানো হয়। এর পরপরই হাচিকোর নাম ছড়িয়ে পরে পুরো জাপানে। তারা হাচিকোকে ‘চুকেন হাচিকো’ বলে সম্বোধন করতো। জাপানি ভাষায় যার অর্থ হলো ‘বিশ্বস্ত কুকুর হাচিকো’।

তার স্মরণে শহরবাসী হাচিকোর একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি নির্মাণ করে ঠিক সেই জায়গাটায়, যেখানে সে মনিবের জন্যে প্রতিদিন অপেক্ষা করতো। আর স্টেশনের সেই প্রবেশদ্বারটির নাম রাখা হয়েছে ‘হাচিকো গুচ্ছি’ যার অর্থ ‘হাচিকো প্রবেশদ্বার’।

প্রায় দীর্ঘ দশ বছর ঝড়-বৃষ্টি, শীত উপেক্ষা করে হাচিকো অপেক্ষা করেছিলো তার মনিবের জন্য। এসময় সে শারীরিকভাবে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে যায়। ১৯৩৫ সালের ৮ ই মার্চের এক শীতের সন্ধ্যায় অসুস্থ হাচিকো মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অবসান হয় তার সুদীর্ঘ দশ বছরের অপেক্ষা। হাচিকোর দেহাবশেষ জাপানের ন্যাশনাল সায়েন্স মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হয়েছে। হাচিকোর জীবনী নিয়ে ২০০৯ সালে একটি চলচিত্রও মুক্তি পায়। চলচিত্রটির নাম ‘Hachiko – A Dog’s Tale’.