কম্পিউটার ইনপুট ডিভাইসের মধ্যে কীবোর্ড অন্যতম , এই কীবোর্ড দিয়েই কম্পিউটারে লেখার কাজ সম্পাদনা করা হয় । মাউস আবিষ্কারের আগে থেকে কীবোর্ড এর ব্যাবহার হয়, যদিও শুরুর দিকে শুধু ইংরেজি ছিল কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাষায় লেখার জন্য সফটওয়্যার ও লে আউট ব্যবহার করে তৈরী হয়েছে হরেক রকমের কি বোর্ড । বাংলা কি বোর্ডের রয়েছে একটি ইতিহাস , যেহেতু বাংলাদেশে কম্পিউটার আগমনের ইতিহাস বেশিদিনের নয় তাই বলা যায় খুব বেশিদিন হয়নি বাংলা কী বোর্ড চালু হয়েছে।
বাংলা কিবোর্ড এর সূচনা
আজ মানুষের হাতে হাতে ডিজিটাল ডিভাইস , সব যায়গায় মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করছে বাংলা ভাষা দিয়ে , বাংলা কী বোর্ডের ঘটনা জানতে পিছিয়ে যেতে হবে সেই ১৯৬৫ সালে। বাংলা কি-বোর্ডর ধারণাটা প্রথম প্রয়োগ করেন শহীদ মুনীর চৌধুরী ,তার ‘মুনীর’ কি-বোর্ডর মাধ্যমে । টি ছিলো টাইপ রাইটারের জন্য তৈরী করা একটি QWERTY কি-বোর্ড লেআউট। এটিই বাংলা ভাষায় প্রথম লেআউট। টাইপ রাইটারে জনপ্রিয়তা পেল লে আউটটি । পরবর্তীতে যখন কম্পিউটার এল তখন থেকেই বাংলা অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তা হল , লে আউট তো রেডি এবার সাথে প্রয়োজন সফটওয়্যার বা মূল প্রোগ্রামিং যা কম্পিউটারের বোধগম্য ভাষায় রুপান্তর করবে এবং ‘ফন্ট’ যা কম্পিউটারের মনিটরে দেখাবে। তখন বেক্সিমকো কম্পানী দ্রুততার সাথে প্রশার লাভ করছিল , কোম্পানীর কাজের জন্যই তখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কম্পিউটার নিয়ে আসা হল, সে সময় বেক্সিমকোতে যন্ত্র প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন সাইফ শহীদ নামের একজন প্রকৌশলী , যার উপর এই কম্পিউটারের দায়িত্ব পড়ল । কম্পিউটার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তার মাথায় প্রথম বাংলায় কম্পিউটারে লেখার চিন্তা আসে , মুনীর কিবোর্ড যথেষ্ট জটিল ছিল বলে তিনি নিজেই একটি লে আউট তৈরী করলেন । নাম দিলেন ‘শহীদ লিপি’ যদিও অনেকের ধারনা উনি নিজের নামের সাথে মিল রেখে নাম করন করেছেন কিন্তু এই নাম করণের পেছনের ইতিহাসটা তিনি বর্ণনা করেছেন এভাবে, “১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯- এ চার বছর যখন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র- তখন প্রতিটি শহীদ দিবসে শহীদ মিনারে যেতাম প্রভাব ফেরীতে যোগ দিতে। শেষের বছরগুলিতে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হবার কারনে আরও ব্যস্তায় কাটতো ঐ দিনটি। ফলে ১৯৮৫ সালে যখন লন্ডন থেকে কমিউপউটারে প্রথম বাংলায় চিঠি লিখে পাঠালাম ঢাকাতে আমার মাকে, তখন একটা নামই শুধু মনে এসছিল- তাই এ প্রচেষ্টার নামকরণ করলাম, “শহীদলিপি”। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ পাক্কা দুই বছর কয়েকজন সহকর্মী মিলে তৈরী করেন লে আউট ও প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার , প্রথমে এপলের ম্যাকিন্টশ এর জন্য কাজ করলেও পরবর্তীতে উইন্ডোজের ভার্শন ও তৈরী করেন তারা । তখন কম্পিউটারের দাম সাধ্যের বাইড়ে থাকায় এটি কোন ব্যাবসায়িক প্রযেক্ট ছিল না । কিন্তু যত জায়গায় বাংলা ব্যাবহার হয়েছে তখন সব জায়গায়ই শহীদ কী বোর্ড ব্যাবহৃত হত। শহীদ কীবোর্ড বাংলায় কম্পিউটারের সুচনা ঘটিয়ে ছিল ঠিকই কিন্তু এতে বিপ্লব এনেছিল অন্য একটি কিবোর্ড।
বাংলা কিবোর্ডে বিপ্লব
মোস্তফা জব্বার ছিলেন পেশায় একজন সাংবাদিক , প্রিন্টিং কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে তিনি দেখতে পান ছোট পার্সোনাল কম্পিউটারেই মানুষ প্রিন্টার সংযোগ করে প্রিন্ট করছে , দেশে ফেরার সময় সাথে করে একটি প্রিন্টার ও একটি পার্সোনাল কম্পিউটার নিয়ে আসেন তিনি । মুনির কীবোর্ড ও শহীদ কী বোর্ড থাকলেও সেগুলো পার্সোনাল কম্পিউটারের উপযোগি ছিল না । বিভিন্ন জনের সহায়তায় তৈরী করেন বিজয় নামের সফটওয়্যার , ম্যাকেন্টশের জন্য প্রথম বিজয় করা হলেও তা পরে উইন্ডজের জন্য করা হয়েছিল এবং উইন্ডোজ পিসি তেই সবচেয়ে বেশী ব্যাবহৃত হয়েছিল । বিজয় হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাবসাসফল সফটওয়্যার গুলোর মধ্যে অন্যতম । বিজয় প্রকাশের পর পরই শুরু হল প্রিন্টিং জগতের নতুন পথচলা । পুরাতন গদবাধা নিয়ম ছেড়ে সকল প্রেসেই কম্পিউটার ও বিজয় ব্যাবহার করা শুরু হল ।
অভ্রের আগমন
ততদিনে ধীরে ধীরে কম্পিউটার সহজলভ্য হতে শুরু করেছে মানুষের হাতে হাতে উঠে আসছে মুঠোফোন যার ক্ষমতাও প্রায় কম্পিউটার এর মতই, বিজয় সফটওয়্যার এখানে মার খেয়ে গেলো মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠল ইউনিকোডে করা অভ্র , এখন পৃথিবীর কোটিকোটি বাংগালী তাদের মনেরভাব ইন্টারনেট এ প্রকাশ করে এই অভ্র দিয়েই | কম্পিউটার জগতে বাংলা কিবোর্ড এর শুরু হলো এক নবদিগন্ত । অভ্রের গল্পটা না হয় অন্য কোনদিন হবে।