সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড – বঙ্গপোসাগরের সবচেয়ে গভীরতম স্থান

পৃথিবীর গভীরতম খাদ কোনটি এটি সাধারন জ্ঞান বই থেকে পড়ে সবাই মোটামোটি জানি। কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করা হয় আমাদের পাশেই যে বঙ্গপোসাগর রয়েছে এর সবচেয়ে গভীরতম খাদ কোনটি ? বলতে পারবেন? এ জায়গার নাম সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড (Swatch of no ground) । অনেকের দাবী মারিয়ানা ট্রেঞ্জের পর এটিই পৃথিবীর দ্বিতীয় গভীরতম স্থান।

বঙ্গোপসাগরের ভৌগলিক অবস্থান

প্রথমেই বঙ্গোপসাগরের ভৌগলিক অবস্থানটি জেনে নেই। বঙ্গোপসাগর (Bay of Bengal) ভারত মহাসাগরের উত্তরের সম্প্রসারিত বাহু। ভৌগোলিকভাবে ৫° উত্তর ও ২২° দক্ষিণ অক্ষাংশ এবং ৮০° পূর্ব ও ১০০° পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এ উপসাগরটি পশ্চিমে ভারত ও শ্রীলংকার পূর্ব উপকূল, উত্তরে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীপ্রণালী সৃষ্ট বদ্বীপ এবং পূর্বে মায়ানমার উপদ্বীপ থেকে আন্দামান-নিকোবর শৈলশিরা (Ridges) পর্যন্ত বিস্তৃত ভূভাগ দ্বারা বঙ্গোপসাগর তিনদিকে আবদ্ধ। বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ সীমা শ্রীলংকার দক্ষিণে দন্দ্রা চূড়া (Dondra Head) থেকে সুমাত্রার উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। সর্বমোট প্রায় ২২ লক্ষ বর্গ কিমি আয়তনের বিশাল এলাকা জুড়ে বঙ্গোপসাগর বিস্তৃত। এর গড় গভীরতা প্রায় ২,৬০০ মিটার এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ৫,২৫৮ মিটার। বঙ্গোপসাগরের সর্বউত্তর প্রান্তে বাংলাদেশ অবস্থিত।

সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড (Swatch of no ground )

অনেক আগে ব্রিটিশরা সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড (Swatch of no ground-SONG) নামকরণ করে এই স্থানটির। সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড যেখান থেকে শুরু সেখান থেকেই হঠাৎ করে পানির গভীরতা অনেক বেড়ে গেছে। ব্রিটিশরা ধারণা করেছিলো সমুদ্রের এই স্থানে খাদের কোন তলদেশ নাই, এজন্যই এমন নামকরণ করেন তাঁরা।

এটা বিশ্বের সেরা ১১টি গভীর খাদ বা ক্যানিয়ন এর মাঝে অন্যতম তবে অনেকে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডকে (Swatch of no ground) বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গভীর খাদও বলে থাকে । এটি আজ থেকে প্রায় ১২৫,০০০ বছর আগে তৈরি হয়েছে। সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড আসলে বঙ্গোপসাগরের তলায় একটি গভীর উপত্যকা বা মেরিন ভ্যালি। একে আন্ডার ওয়াটার ক্যানিয়নও বলা হয় । বঙ্গোপসাগরের মাঝে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড এর সর্বমোট এলাকা প্রায় ৩,৮০০ বর্গকিলোমিটার ।”

সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড ” মংলা/ সুন্দরবন এর দুবলার চর/সোনারচর থেকে প্রায় ৩০-৪০ কি.মি দূরে অবস্থিত । সবচে গ্রহনযোগ্য হিসাবমতে সোয়াচ অভ নো গ্রাউন্ড (Swatch of no ground) এর সর্বমোট এলাকা প্রায় ৩,৮০০ বর্গকিলোমিটার। গভীরতা ১০ মিটার থেকে ১০০ মিটার। তবে এর ৭০% এর গভীরতা ৪০ মিটার- এর বেশি। এর তলায় রয়েছে কাদা মোশানো বালি। এর ঘনত্ব প্রায় ১৬ কিলোমিটার। সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডকে স্থানীয়রা বলে নাই বাম ,সাগরে ফুট কিংবা মিটার না ওরা হিসাব করে বাম, দশ বাম, বিশ বাম, আর ঐ জায়গা নাই বাম ,মানে এই জায়গাটার কোন হিসেব নাই । জায়গাটা মারিয়ানা ট্রেঞ্চের মতো। বাংলায় বলে অতল স্পর্শী।

সামুদ্রিক অভয়ারণ্য

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি একটি সামুদ্রিক অভয়ারণ্য। বঙ্গোপসাগরের মৎস্যভাণ্ডার হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে পরিচিত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে মাছের পাশাপাশি আছে বিশাল আকারের তিমি, ডলফিন, হাঙর, কচ্ছপ আর বিরল প্রজাতির কিছু জলজপ্রাণী। প্রায় দেড় হাজার বর্গমাইলের বিস্তীর্ণ এলাকাটি বিরল জীববৈচিত্র্যের নিরাপদ প্রজননকেন্দ্র, যা প্রস্তাবিত ব্লু ইকোনমির জন্য হয়ে উঠতে পারে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি ওই এলাকায় সরেজমিনে অনুসন্ধান চালিয়ে এমন তথ্য দিচ্ছেন গবেষকরা। এ অঞ্চলে রয়েছে তিমি, ডলফিন, সবচেয়ে বড় ইরাবতী ডলফিন, ইন্দো-প্যাসিফিক ডলফিন ও পাখনাহীন ইমপ্লাইস ডলফিনসহ বহু সামুদ্রিক প্রাণী। এটি পৃথিবীর একমাত্র সোয়াচ, যেখানে এই তিনটি সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী একসঙ্গে দেখা যায়। এটি তিমি, ডলফিন, হাঙর ও কচ্ছপের প্রধান প্রজননক্ষেত্র। বঙ্গোপসাগরের সেই তলাবিহীন নীল জলরাশিতে ১৩ অভিযাত্রী, গবেষক ও স্কুবা ডাইভাররা চষে বেড়িয়েছেন জীববৈচিত্র্যের সন্ধানে। ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে আর নৌবাহিনীর জাহাজ করতোয়া সহায়তা করে। অভিযানের নাম দেওয়া হয় সাগর ও জীবনের সন্ধানে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ও ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কবির বিন আনোয়ার এই অভিযানের দলনেতা। এ সময় মহিসোপানটি হেমারহেড শার্ক ও চার প্রজাতির ডলফিন শনাক্ত করা হয়েছে। মাছ ধরার ট্রলারে উঠে দেখা হয়েছে কী কী ধরনের মাছ ধরা পড়ছে। সোয়াচের আকাশে কোন ধরনের পাখি আছে, তা-ও দেখা হয়েছে।

সোয়াচে যে পানি রয়েছে, তা খুবই পরিষ্কার। এই পানির গুণগতমান শ্রীলংকা, ভারত, মিয়ানমার ও মালদ্বীপের চেয়েও উন্নত। বিশেষ করে সুন্দরবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চল। এটি এ অঞ্চলের জন্য ইকোলজিক্যাল ফিল্টার হিসেবে কাজ করছে। এ ছাড়া এতে যে মাছ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, তার সঠিক ব্যবহার করতে পারলে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করা সম্ভব।

যেভাবে যাবেন swatch of no ground

ঢাকা থেকে সরাসরি চলে যান মংলা । মংলা থেকে প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার ট্রলার সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড ( swatch of no ground )  যায় মাছ ধরার জন্য তাই যেকোন ট্রলার নিয়ে চলে যান সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডে। সামুদ্রিক সৌন্দর্য্য দেখতে জাহাজও পেতে পারেন মংলা গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন । সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডে একটি নির্দিষ্ট এরিয়া আছে যেখানে রাতে মাছ ধরার নৌকা ট্রলারগুলো অবস্থান করে যদি সম্ভব হয় তাহলে সাগরে একটা রাত কাটিয়ে আসার চেষ্টা করবেন ,সেই অনুভুতিটা নিশ্চয় অসাধারণ কিছু একটা হবে , তবে ট্রলার ঠিক করার আগে বিস্তারিত কথা বলে নিবেন । এছাড়া কুয়াকাটা থেকে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড প্রায় ৯০ কি মি দুরে ।