প্লানেট মার্কারী বা বুধ গ্রহের পৃষ্ঠে দাঁড়াতে কেমন লাগবে?

পৃথিবীতে আমরা আরামসে হাঁট‍াচলা করছি, দৌড়ঝাঁপ করছি। কিন্তু যদি ‍আমরা পৃথিবীর বাসিন্দা না হয়ে অন্য কোনো গ্রহের বাসিন্দা হতাম। ‍তাহলে কেমন হত? ইতিমধ্যেই আমরা জেনে গেছি, সব গ্রহের গ্রাভিটি এবং ভূপৃষ্ঠ এক নয়। একেক গ্রহেরটা একেক রকম। তাহলে কেমন হবে সেসব গ্রহে দাঁড়াতে ! চলুন একে একে আমাদের সৌরজগতের সবগুলো গ্রহ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। এই পর্বে আমরা প্লানেট মার্কারী বা বুধ গ্রহ নিয়ে কথা বলবো…

প্লানেট মার্কারী বা বুধ গ্রহ

আমাদের সৗেরজগতের অন্য সব গ্রহদের মধ্যে প্লানেট মার্কারী (Planet Mercury) বা বুধ গ্রহ সবচেয়ে ছোট গ্রহ। এর অবস্থান সূর্যের কাছাকাছি হওয়ায় একে পৃথিবী থেকে দেখা বেশ কঠিন। প্রতি ১০০ বছরে এই গ্রহটিকে পৃথিবীর আকাশে প্রায় ১৩ বার সূর্যের উপর দিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। প্রচলিত একটা ভুল ধারণা আছে যে, প্লানেট মার্কারী দেখতে লাল বা কমলা রঙয়ের। এটি আসলে ভুল তথ্য। প্লানেট মার্কারী দেখতে চাঁদের চেয়েও বেশি ধূসর বা ছাই বর্ণের।

Mercury's surface

Mercury’s surface

বুধের পৃষ্ট এবড়ো থেবড়ো বা অসমতল। এর কেন্দ্রভাগ কিছুটা গলিত ! এর পৃষ্ঠে প্রচুর পরিমাণে খাদ বা গর্ত রয়েছে। বুধের অবস্থান সূর্যের খুব কাছে হবার কারণে এই গ্রহে স্পেসশিপ পাঠানোটা বেশ কঠিন। এপর্যন্ত সফলভাবে দুটি মহাকাশযান বুধ সফরে গেছে। এবং বুধের পৃষ্ঠে ল্যান্ড করেছে !

প্লানেট মার্কারী বা বুধ গ্রহের পৃষ্ঠে দাঁড়াতে কেমন লাগবে?

দিনের বেলা এই গ্রহটির তাপমাত্রা হয় প্রায় ৪৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় আমরা স্পেসস্যুট (নভোচারীদের জন্য বানানো বিশেষ জামা) পরে গেলেও মাত্র এক সেকেন্ডের মধ্যেই গলে যাবো। এমনকি স্পেসস্যুটও মুহূর্তের মধ্যে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। আবার মজার ব্যাপার হচ্ছে, রাতের বেলা গ্রহটির তাপমাত্রা কমে মাইনাস ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে পৌঁছায়। যা কিনা মুহূর্তের মধ্যেই আমাদেরকে বরফের টুকরো বানিয়ে দিবে ! গ্রহটিতে বায়ুমন্ডল না থাকায় আকাশে কোনো তারা বা নক্ষত্রের দেখা মিলবেনা। গ্রহটিতে গ্রাভিটির পরিমাণ পৃথিবীর গ্রাভিটির মাত্র ৩৮ পারসেন্ট। এর মানে হচ্ছে, পৃথিবীর মাটিতে দাঁড়িয়ে লাফ দিলে আপনি যদি এক ফুট উপরে উঠতে পারেন, তাহলে বুধ গ্রহের পৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে এক লাফে আপনি তিন ফুট উপরে উঠে যেতে পারবেন !

সবচেয়ে একটাই কথা, সূর্যের এতটা কাছাকাছি বুধের অবস্থ‍ান হবার কারণেই আপাতপক্ষে এই গ্রহটিতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকা একেবারেই অসম্ভব। তবে দুরবর্তী ভবিষ্যতের উন্নত বিজ্ঞান হয়ত এই গ্রহটিকে কলোনাইজ করে বসবাসের যোগ্য করে ফেলতে পারবে !

Leave a Reply