আত্মা এবং ২১ গ্রাম পরীক্ষণ

আত্মা সম্পর্কে বিশ্বাস নিয়ে জনে জনে, মতে মতে ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও আমরা অনেকেই বিশ্বাস নিয়ে আছি কিছু একটা অশরীরী আছে। তা থেকেই ভয় এর শুরু। তবে আমি আপনাদের ভয় পাওয়ানোর মত কিছু লিখতে আসিনি।
মোটামুটি ১১০ বছর আগেকার একটি আত্মা সম্পর্কিত পরীক্ষার সাধারণ বর্ণনা নিয়ে সাজানো এই লেখাটি…

আত্মা এবং ২১ গ্রাম পরীক্ষণ

সেই ১৯ শতকের শুরুর দিকের কথা। তখন TB বা যক্ষ্মা রোগের তেমন চিকিৎসা নেই। তো ম্যাসাচুসেটসের একটি নার্সিং হোম যেখানে কিনা যক্ষ্মা রোগীদের রাখা হয়, যাতে করে সুস্থ মানুষের সংস্পর্শে তারা না আসে।

তো সেখানে ম্যাকডোগাল ডানকান নামে এক ডাক্তার ছিলেন। ১৯০১ সালের দিকে এই পাগলাটে মানুষটার মাথায় ভাবনা আসলো আত্মার ওজন মাপবেন। ব্যাপারটা একটূ চোখ কুচকে যাবার মতো ব্যাপার। যেই ভাবা সেই কাজ। তিনি বাছাই করলেন ৬ জনকে যাদের কিনা মৃত্যু অবধারিত। যার মধ্যে ৪ জন যক্ষ্মা রোগী, ১ জন ডায়াবেটিস রোগি। আর বাকি জন এর রোগ নির্ণয় করা যায়নি। তিনি বিশেষ করে তাদেরই বাছাই করেছিলেন, যাদের কিনা শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হয়েছিল এবং যারা মারা যাওয়ার সাথে সাথে তাদের শরীরের ওজন নিখুঁতভাবে মাপার সময় রোগীর আত্মীয়স্বজন বা অন্য কোনো জায়গা থেকে প্রতিবন্ধকতা তৈরী না হয়।

এই রোগীদের মধ্যে যাদের শারিরিক অবস্থার চরম অবনতি হতো সেই রোগীদের তখন সম্পুর্ণ বিছানা জুড়ে ব্যবসায়িক স্কেল স্থাপন করা হত। সেই স্কেলটি ছিলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এতটাই স্পর্শকাতর যে সেটাতে এক আউন্সের দুই দশমাংশ অর্থাৎ ৫.৬ গ্রাম পর্যন্ত তারতম্যকে হিসাব করতে পারত। সোজা কথাইয় বলতে গেলে মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তের ওজন এবং ঠিক পরের মুহূর্তের ওজন এর পার্থক্য থেকে আত্মার ওজন বের করাই ছিলো এই পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য।

এই ছয় জন রোগীর মধ্যে একজন মৃত্যুর পর ওজন হারালো, কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো পুনরায় মাপার পর, সেই হারানো ওজন আবার ফিরে আসে। দুইজন রোগী মৃত্যুর পর ওজন হারান বলে গবেষণার নথিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিলো। কিন্তু কয়েক মিনিট পর দেখা গেলো তারা আরো কিছু ওজন হারাচ্ছে। একজন মৃত্যুর পর এক আউন্সের তিন-চতুর্থাংশ (২১.৩ গ্রাম) ওজন হারান, ম্যাকডোগাল একটি ফলাফলকে বাতিল করে দেন, এইবলে যে, ওই রোগীর ক্ষেত্রে স্কেলটা ঠিকভাবে স্থাপন করা হয় নি এবং আরেকটি ফলাফলকে তিনি হিসাবে ধরেন নি কারণ রোগী মারা যাওয়ার পর ওজন মাপার যন্ত্রাংশ, তখনো মানাঙ্ক নির্ণয় করছিল।

তখন একটা ধারনা ছিলো যে কুকুরের আত্মা নেই। তাই সে এই ধারনা থেকে ১৫ টি কুকুরকে বাছাই করলেন। তিনি কুকুরের বেলায় পরীক্ষাটা চালায়। কিন্তু সেখানে কুকুরের কোনো ওজন কমেনি।

জার্নাল হিসেবে প্রকাশের আগেই এই সম্পর্কে প্রথম আর্টিকেল প্রকাশিত হয় ১৯০৭ সালে। দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায়। শিরোনাম ছিলো, “Soul has Weight, Physician Thinks.” তারপর ম্যাকডোগালের ফলাফল একই বছরের এপ্রিলে জার্নাল অব দ্যা আমেরিকান সোসাইটি ফর ফিজিক্যাল রিসার্চ এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত জার্নাল আমেরিকান মেডিসিনে প্রকাশিত হয়।

এর জন্য তাঁর অনেক সমলোচনা পোহাতে হয় বৈকি এবং সে নিজেও বলে গিয়েছিলেন যে এই পরীক্ষাটি আরও কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করতে হবে। তাহলেই এর উপসংহারে পৌছানো যাবে।

তাঁর এই পরীক্ষা যদিও বাতিল হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু এর প্রভাব থেকে যায়।

২০১৩ সালে একজন এই গবেষণা সম্পর্কে বলেন, তিনি মাত্র অল্প কজন নিয়ে এই পরীক্ষা করেছিলেন, সেটা ওজন নির্ভর। তিনি যে ওজন মাপার নিক্তি ব্যবহার করছিলেন, তা অতটা যথার্থ নয় এবং তা অবৈজ্ঞানিক। তবে তিনি একটি সুদূরপ্রসারী প্রভাব রেখে গেছেন।

বৈজ্ঞানিক মহল দ্বারা এই গবেষণাটি বাতিল করা এবং ম্যাকডোগালের নিজেও কোনো উপসংহার না টানা সত্ত্বেও ম্যাকডোগালের পরীক্ষা থেকে, আত্মার ওজন আছে, এবং বিশেষ করে এর ওজন ২১ গ্রাম। এই ধারণাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

Leave a Reply